Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WB Municipal Election

WB municipal election 2022: ‘ঋণ’ শোধের দায়েই কি ভোট ময়দানে সিন্ডিকেট

বিধাননগর পুর এলাকার সঙ্গে পরিচিতেরা জানাচ্ছেন, মোট ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে রাজারহাট-গোপালপুরে রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে দ্রুত ইতিউতি গজিয়ে ওঠে সিন্ডিকেট ব্যবসার ঘর।

২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে দ্রুত ইতিউতি গজিয়ে ওঠে সিন্ডিকেট ব্যবসার ঘর। ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:১৪
Share: Save:

কাকে সমর্থন দিলে ফিরতে পারে ‘স্বর্ণযুগ’? গত বিধানসভা নির্বাচনের পরে বিধাননগরে কিছু রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্যে এটাই ছিল সিন্ডিকেট ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের কাছে বড় প্রশ্ন। কিন্তু গত কয়েক মাসে জল মাপার পরে হিসাব-নিকাশ এক রকম চূড়ান্ত করে নেওয়া গিয়েছে বলেই তাঁদের দাবি। কয়েক জন স্পষ্টই বলছেন, ‘‘কঠিন সময়ে যিনি পাশে থেকেছেন, সেই কাছের মানুষের হয়েই তো ভোটে কাজ করা উচিত! এ হল এক রকমের ঋণ শোধ।’’ কিন্তু এই ‘ঋণ’ মেটানোর বহর ভোটের দিন কোন পর্যায়ে পৌঁছতে পারে, তা ভেবেই এখন আতঙ্কে ওই এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘স্বর্ণযুগের নামে ফিরে আসবে না তো পুরনো সেই জুলুমের অধ্যায়?’’

বিধাননগর পুর এলাকার সঙ্গে পরিচিতেরা জানাচ্ছেন, মোট ৪১টি ওয়ার্ডের মধ্যে রাজারহাট-গোপালপুরে রয়েছে ২৭টি ওয়ার্ড। ওই সমস্ত ওয়ার্ডেই সিন্ডিকেটের দাপট সব চেয়ে বেশি দেখা যেতে পারে। কারণ, মনোনয়ন জমা দেওয়ার দিনও দেখা গিয়েছে এই বাহিনীর ভিড়। সল্টলেকের বাকি ১৪টি ওয়ার্ডের মধ্যেও তিন-চারটিতে সিন্ডিকেট বাহিনীর দ্বারা ভোট পরিচালনা করার ভাল রকম আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এক সময়ে রাজারহাট-গোপালপুরের ওয়ার্ডগুলিতে তো বটেই, রাজারহাট-নিউ টাউনের বিস্তীর্ণ এলাকাতেও সিন্ডিকেটের রমরমা ছিল। বাম আমলে ‘ল্যান্ড লুজ়ার কোঅপারেটিভ সোসাইটি’ নামে একটি ছাতার তলায় অসংখ্য বেকার যুবক ইমারতি দ্রব্য সরবরাহের কাজ করতেন। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পরে তারই জায়গা নেয় ‘সিন্ডিকেট’। দ্রুত ইতিউতি গজিয়ে ওঠে সিন্ডিকেট ব্যবসার ঘর। অভিযোগ, সেখান থেকেই নির্দেশ যেত, কোন কাজের কী দর! এমনকি, ব্যক্তিগত উদ্যোগে করা বাড়ির ঢালাই-পিছুও ওই দাদাদের লক্ষ লক্ষ টাকা দিতে হত বলে অভিযোগ। সময় যত গড়ায়, বেকার যুবকদের সেই ব্যবসাই হয়ে দাঁড়ায় এলাকার ক্ষমতার অন্যতম ভরকেন্দ্র। বিধানসভা ভোটে জেতা এক নেতা-দাদার দল ক্রমশ ভারী হতে থাকে। তিনিই হয়ে ওঠেন ওই এলাকায় নির্মাণকাজের শেষ কথা। সিন্ডিকেটের সমর্থনে প্রকাশ্যে গলা ফাটাতেও শোনা যায় তাঁকে। ওই নেতা-দাদার নির্দেশে তাঁর সিন্ডিকেট বাহিনীকে একের পর এক নির্বাচন ‘পরিচালনা’ করতেও দেখা গিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ সক্রিয় হলেও সিন্ডিকেট-রাজ নির্মূল হয়নি বলেই অভিযোগ।

এর মধ্যেই বিধানসভা ভোটের আগে বেশ কিছু রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো মুনাফা রাখাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। প্রশাসন কড়াকড়ি শুরু করে খাদানগুলিতে। ফলে বালি-পাথরের বেআইনি কারবারে কার্যত তালা পড়ে যায় ভোটের আগে। বিধানসভা ভোটের সময়ে তিন ভাগ হয়ে যায় সিন্ডিকেট। এক দল ‘নতুন ভাবে জীবন শুরু করতে’ যাওয়া দাদার সঙ্গে থেকে যায়। অন্য দল ক্ষমতার কাছাকাছি থাকা এক নেতার ‘আশীর্বাদধন্য’ হয়ে তাঁর দিকে ঝোঁকে। আর এক দল দূর থেকে জল মাপার অবস্থান নেয়। কিন্তু নির্বাচনের পরে ‘নতুন জীবনে’ ইতি টেনে ফিরে আসা দাদার সঙ্গেই তিনটি দলের বেশির ভাগ সদস্য জুড়তে শুরু করে বলে খবর।

এমনই এক জনের মন্তব্য, ‘‘গত কয়েক মাসে পুরো ব্যাপারটা দেখেছি। হেড কোচ সঙ্গে না থাকলে কারও পক্ষেই টিমে থাকা সম্ভব নয়, যেখানে পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী খেলতেই না দেওয়ার পণ করেছেন। হেড কোচ যখন এত কিছুর পরেও কাউকে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেন, সমর্থন করতেই হয়। তা ছাড়া, সিন্ডিকেট থাক বা না থাক, ভোটের পরে কাজের বরাত পেতে হবে তো!’’ এক সময়ে ‘সিন্ডিকেট ছিল, আছে, থাকবে’ বলে শোরগোল ফেলা বিধাননগরের প্রাক্তন মেয়র তথা এ বারও তৃণমূলের প্রার্থী সব্যসাচী দত্ত যদিও বললেন, ‘‘আগের মতো সিন্ডিকেটের ব্যাপার আছে বলে মনে হয় না।’’ বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসুও বললেন, ‘‘সিন্ডিকেট কি না জানি না। বাইরে থেকে এসে কেউ যাতে গন্ডগোল পাকাতে না পারে, তার জন্য পুলিশকে সতর্ক হতে বলেছি। ভোট হবে ভয়হীন, অবাধ।’’ বাস্তব পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, উত্তর মিলবে আগামী কয়েক ঘণ্টাতেই।

অন্য বিষয়গুলি:

WB Municipal Election Bidhannagar Syndicate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy