Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Electrocution

বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর নেপথ্যে কি বিদ্যুৎ চুরি? একবালপুরকাণ্ডে ভাবাচ্ছে বেআইনি বাড়িও

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক বেআইনি নির্মাণ মাথা তুলেছে গোটা এলাকায়। অধিকাংশ বাসিন্দার ঘরেই বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।

An image of the old house in Ekbalpur

একবালপুর এলাকায় এ ভাবেই বাড়ির গা ঘেঁষে রয়েছে তারের জঙ্গল। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২৩ ০৭:২৩
Share: Save:

এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির পিছনে কি রয়েছে নির্বিচারে পর পর গজিয়ে ওঠা বেআইনি বাড়ি? সেই সমস্ত বাড়ির অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের কারণেই কি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল মা-মেয়ের? রবিবার একবালপুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পরে সময় যত এগোচ্ছে, ততই বিদ্যুৎ চুরি-চক্রের পাশাপাশি সামনে আসছে বেআইনি ভাবে গজিয়ে ওঠা বাড়ির বিষয়টিও। এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দারা যেমন সরব হয়েছেন, তেমনই ক্ষোভের স্বর শোনা গিয়েছে স্থানীয় পুরপ্রতিনিধির গলাতেও।

রবিবার সকালে একবালপুর থানা এলাকার একবালপুর লেনে বাড়ির সামনে থাকা লোহার তারে ভেজা জামাকাপড় মেলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে। তড়িদাহত তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মুনতাহা বেগম (৬৪) ও খইরুলন্নেসাকে (৪৫) মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। জখম ইজহার আখতার (৫১) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার জন্য অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের তারই দায়ী, অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের। কার্যত একই সুর শোনা গিয়েছিল মেয়র ফিরহাদ হাকিমের গলাতেও। যদিও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পাশাপাশি রবিবারই সিইএসসি জানিয়েছিল, ওই এলাকায় মাটির উপর দিয়ে কোনও লাইন নেই। সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ওই এলাকায় সমস্ত লাইনই মাটির নীচ দিয়ে গিয়েছে। তা ছাড়া, ঘটনার পরে ইঞ্জিনিয়ারেরা গিয়ে সবটা দেখেও এসেছেন।’’ তা হলে বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে কী ভাবে?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সামনে আসছে একের পর এক তথ্য। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই একের পর এক বেআইনি নির্মাণ মাথা তুলেছে গোটা এলাকায়। ওই সমস্ত বাড়ির অধিকাংশ বাসিন্দার ঘরেই বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। তাঁদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতেই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে চুরি-চক্র। চক্রের মাথারা কখনও কোনও বাড়ির মিটার থেকে তার টেনে ওই সমস্ত বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছে, কখনও আবার করা হচ্ছে অন্য কোনও কারসাজি। এমনকি, পুরসভার বাতিস্তম্ভ থেকেও একের পর এক বাড়িতে চুরির বিদ্যুৎ যায় বলে অভিযোগ করেছেনবাসিন্দারা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই এলাকার বেশ কিছু বাড়িতে বৈধ মিটার থাকলেও বিল কমাতে চুরির বিদ্যুতেই রাতে এসি থেকে শুরু করে অন্যান্য যন্ত্র চালানো হয়। স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘বেআইনি ভাবে গজিয়ে ওঠা বাড়িগুলিতে কাগজপত্র নিয়ে জটিলতা থাকায় অনেক সময়ে মিটার পেতে অসুবিধা হয়। সেই সুযোগেই সক্রিয় হয়ে ওঠে বিদ্যুৎ চুরি চক্র। প্রশাসন সব জানে, কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’’

স্থানীয় ৭৮ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সোমা দাস বলেন, ‘‘বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে একাধিক বার আমার কাছে নানা অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। আমিও সিইএসসি-কে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিলাম। বিদ্যুৎ চুরি আটকাতে স্থানীয় বাসিন্দা, সংগঠন ও ক্লাবের পাশাপাশি পুলিশ ও সিইএসসি-র প্রতিনিধিদের নিয়ে ছোট ছোট বৈঠকের পরিকল্পনা করেছি। এলাকায় অনেক বাড়ি হয়েছে। সব বাড়িতে মিটার না-ও থাকতে পারে। বিদ্যুৎ চুরি আটকাতে সব বাড়িতে মিটার দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’

লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে, পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করতে পারে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

অন্য বিষয়গুলি:

Electrocution Death Ekbalpur Electricity Theft
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy