ফের বিতর্কের কেন্দ্রে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ এবং তার প্রক্রিয়াকরণ। এবং আবারও নিয়ম বহির্ভূত ভাবে একই সংস্থাকে কাজের বরাত পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
তবে এ বার সাধারণ বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য নয়, রাজ্যের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ও তার কাজের বরাত পাওয়া নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। বিতর্কের কেন্দ্রে ‘এসএনজি এনভায়রো-সলিউশন্স প্রাইভেট লিমিটেড’— আগেও যাদের নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কাজের বরাত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের শো-কজ়ও করেছিল রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু এ বার অভিযোগ আরও গুরুতর।
কারণ, রাজ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন করাতে যেখানে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর, সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে সম্প্রতি জারি করা নির্দেশে দেখা যাচ্ছে, শো-কজ় করা সংস্থাকেই রাজ্যের একাধিক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে স্বভাবতই প্রশ্ন দেখা গিয়েছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে। সংশ্লিষ্ট নির্দেশে দেখা যাচ্ছে, বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বীকৃত সংস্থার পাশাপাশি এসএনজি-কেও ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট অপারেটর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। নির্দেশে উল্লেখিত ১,০১,৯১৬টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে তাদের ৩৭,২৬১টি কেন্দ্রের বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, যেখানে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি অপারেটর’ বা সিবিডব্লিউটিএফ-রা (রাজ্যে যাদের নিজস্ব প্লান্ট এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র আছে) বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণের জন্য কিলোগ্রাম পিছু ২২.৭৬ টাকা-৩৩.৬০ টাকা পাচ্ছে, সেখানে এসএনজি সংস্থা পাচ্ছে প্রতি কিলোগ্রামে ৩৩.৬০ টাকা-৩৬ টাকা। পুরো বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এক পরিবেশকর্মীর বক্তব্য, ‘‘পুরোপুরি অনিয়ম চলছে। যে রাজ্যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পাবে কোনও সিবিডব্লিউটিএফ, তাদের সেই রাজ্যে নিজস্ব প্লান্ট থাকতে হবে। তবে সব চেয়ে আগে তাদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র প্রয়োজন।’’
এসএনজি-র ক্ষেত্রে কি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র রয়েছে?
সংস্থার এক কর্তা জানাচ্ছেন, সেই ছাড়পত্র এখনও হাতে আসেনি। কিন্তু তাঁরা ছাড়পত্র পাওয়ার প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে রয়েছেন। কিন্তু, ছাড়পত্র ছাড়া তাঁরা কী ভাবে নির্বাচনে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহের দায়িত্ব পেলেন? ওই কর্তার উত্তর, ‘‘দরপত্রের চুক্তি মেনেই আমরা কাজ করেছি। স্বীকৃতিপ্রাপ্ত যে সিবিডব্লিউটিএফ-এর সঙ্গে আমাদের এ নিয়ে চুক্তি রয়েছে, তাদের বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে আমরা লোকবল এবং গাড়ি দিয়ে সাহায্য করি।’’ তা হলে স্বাস্থ্য দফতর কী ভাবে তাদের ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট অপারেটর’ হিসেবে উল্লেখ করল? এর উত্তর অবশ্য ওই কর্তার থেকে পাওয়া যায়নি।
এ দিকে শো-কজ় করা সংস্থাকে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে, তা-ও আবার নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায়, অংশীদার করা হল কেন— এই সম্পর্কে জানতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানান, সব সংস্থাকেই বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য একই হারে টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, একই হারে টাকা দেওয়া তো পরের বিষয়। যার কাজই পাওয়ার কথা নয়, সেই সংস্থা কী ভাবে কাজ পেল, সেটাই প্রধান বিচার্য হওয়া উচিত।
যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ছাড়পত্র না থাকার বিষয়টি রাজ্যের অ্যাডভাইজ়রি কমিটি খতিয়ে দেখছে। একাধিক বার এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু যে হেতু নির্বাচন আসন্ন, তাই বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের বিপদ কাটাতেই এসএনজি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের কথায়, ‘‘বিষয়টি আমাদের বিশেষজ্ঞ কমিটি খতিয়ে দেখছে। দ্রুত এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy