Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta News

যাদবপুরের জের? শেষ পর্যন্ত বদলিই করা হল ডিসি সুদীপ সরকারকে

আইপিএসদের একাংশের মন্তব্য, যোগ্য অফিসারদের অপরাধ ছাড়াই শাস্তির মুখে পড়তে হলে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা দোটানায় থাকবেন।

সুদীপ সরকার।—ফাইল চিত্র।

সুদীপ সরকার।—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২০:৩৭
Share: Save:

শেষ পর্যন্ত বদলিই করা হল পুলিশ কর্তা সুদীপ সরকারকে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলী)-র দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাঁকে নিয়ে আসা হল গোয়েন্দা বিভাগে। সরকারি ভাবে কেউ এই বদলির কোনও কারণ না বললেও, আইপিএস মহল থেকে শুরু করে কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন মাপের আধিকারিকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যাদবপুরে ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জের অভিযোগের জেরেই প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের রোষের মুখে পড়েন এই পুলিশ কর্তা।

ঘটনাটি ঘটেছিল ৫ জানুয়ারি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর হামলার প্রতিবাদে মিছিল বার করেছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। পাল্টা মিছিল বার করে বিজেপি-ও। দু’টি মিছিল মুখোমুখি চলে আসায়, অশান্তির আশঙ্কা থেকে বিজেপির মিছিল তাড়া করে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, সেই সময়ে যাদবপুরের পড়ুয়াদের মিছিল থেকেও একটি অংশ নিজেদের মিছিল ছেড়ে বিজেপির মিছিলের দিকে ছুটে যায় মারমুখী হয়ে। পুলিশ তাঁদের আটকাতে গেলে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। পড়ুয়ারা অভিযোগ তোলেন যে, তাঁদের উপর লাঠি চালিয়েছে পুলিশ।

কলকাতা পুলিশের শীর্ষ মহল সূত্রে খবর, সেই সময়ে সাগরদ্বীপে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছে খবর পৌঁছতেই তিনি গোটা ঘটনায় বিরক্ত হন এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফোন করেন কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মাকে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তড়িঘড়ি অতিরিক্ত নগরপাল ডিপি সিংহকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে। ঘটনাস্থলে পৌঁছন রাজ্যের এক মন্ত্রীও। তাঁদের মধ্যস্ততায় সুদীপ পড়ুয়াদের সামনে গোটা ঘটনাকে অনিচ্ছাকৃত আখ্যা দিয়ে দুঃখপ্রকাশও করেন।

আরও পড়ুন: ১০ মিনিটে ৫০ হাজার! তরুণীর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর ফাঁদে সেনা অফিসার

কিন্তু তার পর থেকেই ‘অন্তরাল’-এ পাঠানো হয় সুদীপকে। দু’দিন পরেই ছিল ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা দেশজোড়া হরতাল। সুদীপ সরকারের বদলে ওই দিন আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব সামলান তখনকার ডিসি (এসটিএফ) প্রদীপ যাদব। তার পরেও সুদীপকে ওই এলাকার কোনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ঘটনায় প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। লালবাজারের এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানিয়েছিলেন, ‘‘যে সমস্ত ক্ষেত্রে মিছিল মিটিং সামলানোর প্রয়োজন, সেখানে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের নির্দেশে তাঁকে রাখা হচ্ছে না।” তবে তাঁকে সরকারি ভাবে ছুটিতেও পাঠানো হয়নি। তখন থেকেই পুলিশ মহলে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল যে, দক্ষ হওয়া সত্ত্বেও যাদবপুরের বিতর্কের জেরে শাস্তির মুখে পড়তে চলেছেন ওই পুলিশ কর্তা।

তবে ওই দিন কলকাতা পুলিশের যে আধিকারিকরা যাদবপুরে ছিলেন, তাঁদের বড় অংশই দাবি করেন যে, ওই সময়ে সুদীপ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তা না করলে বড় গন্ডগোল বাঁধতে পারত। কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘সুদীপ প্রশাসনিক নিয়ম মেনেই ওই রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে একটি এফআইআর করেছিলেন। সেই বিষয়টিও তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে।’’

আরও পড়ুন: লাদেনকে খুঁজে বার করেছিল যে বেলজিয়ান মালিনয়েজ, এ বার আনা হচ্ছে নবান্নের নিরাপত্তায়

মঙ্গলবার নবান্ন থেকে আইপিএসদের রদবদলের যে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে, তাতে সুদীপ সরকারের জায়গায় ওই ডিভিশনের দায়িত্ব পাচ্ছেন প্রদীপ যাদব। এ ছাড়াও আরও ২৯ জন পুলিশ কর্তার বদলি হয়েছে। বিধাননগরের নতুন ডিসি (ট্রাফিক) হচ্ছেন ধৃতিমান সরকার। তিনি পুরুলিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ছিলেন। প্রদীপ যাদবের জায়গায় ডিসি (এসটিএফ)-র দায়িত্ব পাচ্ছেন অপরাজিতা রাই। তিনি ডিসি (সাইবার) পদে ছিলেন।

বদলির খবর চাউর হতেই, আইপিএস মহলের একাংশের মন্তব্য, এ ভাবে যোগ্য অফিসারদের অপরাধ ছাড়াই শাস্তির মুখে পড়তে হলে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরা দোটানায় থাকবেন। আর তাতে যে কোনও সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে কেউ কোনও দায়িত্ব নিতে চাইবেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Jadavpur University Kolkata Police ABVP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy