প্রতীকী ছবি।
মাস আটেক আগে হওয়া এক বৃদ্ধার স্বাভাবিক মৃত্যু আদতে খুন। এমনই অভিযোগ জমা পড়ল থানায়। অভিযোগকারীই নিজেকে ওই খুনে জড়িতদের এক জন বলে বারুইপুর থানার পুলিশকে জানিয়েছেন।
ঘটনার তদন্তে নেমে ফাঁপরে পড়েছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, খুনের অভিযোগ দায়ের করা হলেও তার পক্ষে তেমন জোরালো কোনও প্রমাণ মেলেনি।
গত শুক্রবার সমীর বৈদ্য নামে এক যুবক থানায় গিয়ে এই অভিযোগ করেন। তাঁর দাবি, তিনি ও তাঁর প্রেমিকা যূথিকা মণ্ডল মিলে প্রেমিকার মা বাসন্তী মণ্ডলকে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে বারুইপুর থানার খ্রিস্টানপাড়া থেকে যুথিকাকে গ্রেফতার করা হয়। দু’জনকেই পুলিশি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়েছে।
সমীর তদন্তকারীদের জানান, ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল। রাতে তাঁকে ফোন করে বাড়ি আসতে বলেছিলেন যূথিকা। অসুস্থ শয্যাশায়ী বাসন্তীকে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁরা দু’জন মিলে খুন করেছিলেন বলে দাবি সমীরের। তদন্তে জানা যায়, যূথিকা ও সমীর দু’জনেই বিবাহিত। কয়েক বছর আগে যূথিকার সঙ্গে মগরাহাটের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বিয়ে হয়। তাঁদের একটি সন্তানও রয়েছে। কল্যাণপুরের বাসিন্দা বিবাহিত সমীরেরও সন্তান রয়েছে। এক সময়ে সমীর মগরাহাটে থাকতেন। তখনই দু’জনের মধ্যে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তৈরি হয় বলে দাবি সমীরের। সেটা জানাজানি হতেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে মায়ের কাছে এসে থাকা শুরু করেছিলেন যূথিকা, দাবি সমীরের।
সম্প্রতি সমীরের সঙ্গেও তাঁর বনিবনা হচ্ছিল না বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এর পরেই সমীর থানায় গিয়ে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে মনে করছে পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে ঠিকই। কিন্তু খুনের পক্ষে আদালতের গ্রহণযোগ্য তেমন প্রমাণ নেই। আইন অনুযায়ী, খুনের অভিযোগে স্পষ্ট প্রমাণ হাতে আসা প্রয়োজন। কিন্তু ওই বৃদ্ধার মৃতদেহ পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে তাঁর দেহের কোনও পরীক্ষামূলক রিপোর্ট তৈরি করা সম্ভব না। অভিযোগের ভিত্তিতে খুনে ব্যবহৃত বালিশটি উদ্ধার হলেও তা দিয়েই যে খুন করা হয়েছে, সেটিও প্রমাণ করা কার্যত অসম্ভব বলেই দাবি তদন্তকারীদের।
এ ক্ষেত্রে রহস্যের সমাধানে তদন্তকারীদের ভরসা হিসাবে উঠে আসছে স্থানীয় এক চিকিৎসকের বয়ান। যিনি বৃদ্ধার ‘ডেথ সার্টিফিকেট’ দিয়েছেন। ওই চিকিৎসককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। অভিযোগের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি ধোঁয়াশাও রয়েছে বলে দাবি। তদন্তকারীদের কথায়, যেমন, যূথিকার মা বাসন্তী শারীরিক ভাবে অক্ষম ছিলেন। সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী ছিলেন তিনি। তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করা হয়েছে বলে দাবি সমীরের। তাঁর বয়ান, বাসন্তীর হাত তিনি পিছমোড়া করে ধরে রেখেছিলেন। যূথিকা মায়ের মুখে বালিশ চাপা দিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, এক জন শারীরিক ভাবে অক্ষম এবং শয্যাশায়ী মানুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুন করতে গেলে হাত পিছমোড়া করে ধরতে হবে কেন?
ঘটনার পর ওই রাতেই সমীর খ্রিস্টানপাড়া ছেড়ে কল্যাণপুরের বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলেন বলে তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন। সেই তথ্যেরও সত্যতা যাচাই করে দেখছেন তদন্তকারীরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, দু’জনকেই পুলিশি হেফাজতে নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
কলকাতা হাই কোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে কোনও মামলা দায়ের করা যেতেই পারে। কিন্তু আদালতের কাছে গ্রহণযোগ্যতা অনুযায়ী ঠিক সাক্ষী এবং প্রমাণ পেশ করতে না পারলে অভিযুক্তকে সাজা দেওয়াটা বেশ কঠিন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy