প্রতীকী ছবি।
করোনার জেরে ইন্টারভিউ বন্ধ কলকাতার পুলিশ কমিশনারের (সিপি) ঘরে। পুলিশ সূত্রের খবর, নতুন আগ্নেয়াস্ত্র কেনার আগে বাধ্যতামূলক লাইসেন্স করানোর কাজও তাই বন্ধ। পুলিশের আরও একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জমে ওঠা ফাইলে ভরেছে লালবাজারের আর্মস অ্যাক্ট বিভাগ। নতুন লাইসেন্স তো দূর, অনুমোদন পাচ্ছে না পারিবারিক সূত্রে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্র হস্তান্তরের ফাইলও!
গত বছরের শুরু থেকেই আগ্নেয়াস্ত্র কেনার লাইসেন্সের অনলাইন আবেদন চালু হয়েছিল শহরে। এ জন্য কলকাতা পুলিশের ওয়েবসাইটে অনলাইন আর্মস লাইসেন্স বিভাগে আবেদন করতে প্রথমে দিতে হয় ১,০৫০ টাকা। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই ওয়েবসাইটে মেলে পুলিশের ‘ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট’। পুলিশ সূত্রের খবর, গোয়েন্দা বিভাগ আবেদনকারীর পুরনো কোনও অপরাধের রেকর্ড আছে কি না, তা দেখে সেই সার্টিফিকেট দেয়। তার পরেই ২১০০ টাকার বিনিময়ে মূল আবেদন করতে পারেন আবেদনকারী।
এর পরে আবেদনকারী যে থানা এলাকার বাসিন্দা সেই থানায় একটি ভেরিফিকেশন রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। আবেদনকারী কোথায় থাকেন, আগ্নেয়াস্ত্র রাখার উপযুক্ত পরিবেশ, অর্থনৈতিক এবং মানসিক অবস্থা তাঁর রয়েছে কি না ইত্যাদি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয় থানা। আবেদনকারীর প্রাণহানির আশঙ্কা বা সেই জাতীয় কোনও বিপদের ঝুঁকি আছে কি না, তা-ও জানানো হয় থানার তরফে। এর সঙ্গেই গোয়েন্দা বিভাগের রিপোর্ট ছাড়াও রিপোর্ট দেয় লালবাজারের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি)। আবেদনকারী কোনও গোপন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত কি না, বা নাশকতামূলক ঘটনা ঘটাতে পারেন কি না ইত্যাদি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয় এসবি।
সব রিপোর্ট ঠিক থাকলে বড় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদনকারী কলকাতা পুলিশের যে ডিভিশনে থাকেন, সেখানকার ডিসি বা রিজার্ভ ফোর্সের (আরএফ) ডিসি তাঁর ইন্টারভিউ নেন। ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে সরাসরি ইন্টারভিউ নেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার।
কলকাতা পুলিশের বর্তমান ডিসি (আরএফ) সুখেন্দু হীরা বলেন, “কারও কাছে একটি আগ্নেয়াস্ত্র থাকাই গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া কলকাতা পুলিশ তো নাগরিকদের সঙ্গেই আছে। ফলে কী প্রয়োজনে কেউ আগ্নেয়াস্ত্র রাখতে চাইছেন, সেটা জানতে চাওয়া হয়। ছোট আগ্নেয়াস্ত্র রাখায় আরও গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই সরাসরি সিপি ইন্টারভিউ নেন।” গত এক বছরের বেশি সিপি-র ইন্টারভিউয়ের অপেক্ষায় বহু ফাইল আটকে বলে অভিযোগ।
এমনই আটকে থাকা একটি ফাইলের আবেদনকারী, বেলেঘাটার বাসিন্দা এক ব্যক্তি বলেন, “ব্যবসার কাজে প্রায়ই প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে হয়। গত নভেম্বরে নতুন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করেছিলাম। সব ফাইল তৈরি হয়ে গেলেও সিপি-র ইন্টারভিউ হয়নি।” বড়বাজারের অন্য এক ব্যবসায়ীর দাবি, “পারিবারিক সূত্রে চারটি ওয়ান শটার পিস্তল বাবা তাঁর বাবার থেকে পেয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পরে সেটা আমার পাওয়ার কথা। গত দেড় বছর ফাইল আটকে থাকায় পিস্তলগুলি প্রস্তুতকারী সংস্থার লকারেই পড়ে। অকারণে ভাড়া গুনতে হচ্ছে।”
কবে হবে ইন্টারভিউ? কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা করোনা পরিস্থিতির কথা জানিয়ে বললেন, “রীতি মেনেই সবটা করা হবে।” লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা যদিও বলেন, “জমি, বাড়ি বা গাড়ি কেনার মতো আগ্নেয়াস্ত্র কেনার সঙ্গে সে ভাবে অধিকারের প্রশ্ন জড়িয়ে নেই। এ দেশে পুলিশ বা সরকারেরই দায়িত্ব মানুষের নিরাপত্তা দেখা। করোনার জন্য কিছুটা সমস্যা হয়েছে ঠিকই, এ বার নিশ্চয়ই গুরুত্ব বুঝে লাইসেন্সের ফাইল ছাড়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy