Advertisement
E-Paper

অ্যাডিনোর কাশি কমাতে ইনহেলার ভরসা, রাঙাচ্ছে চোখও 

ইনহেলার নিতে নারাজ বহু রোগীই। তাঁদের ধারণা, ওই থেরাপির অর্থ, ফুসফুসের পাকাপাকি কোনও ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এই সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে বলে মত মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের।

A Photograph indicating use of inhaler

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণে যে কাশি হচ্ছে, তা কমাতে ভরসা ইনহেলার। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৬:৩২
Share
Save

অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণে যে কাশি হচ্ছে, তা কমাতে ওষুধ, সিরাপ কিংবা ভেপার (বাষ্প) নেওয়া, কিছুই তেমন কাজে দিচ্ছে না। বরং চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ভরসা ইনহেলার। একই রকম ভাবে বাড়াবাড়ি করছে চোখের সমস্যাও।

চলতি মরসুমে এক বার কাশি ধরলে, ১৫ দিনের আগে নিস্তার নেই। শহর থেকে জেলা, সর্বত্র অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন অধিকাংশ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসকদের মতে, মাঝবয়সিরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন না ঠিকই। কিন্তু তাঁদের জ্বর কমে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ দিন কাশি থেকে যাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি ডাক্তারখানায় দিনে যত রোগী আসছেন, তার সিংহভাগ জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত। কারও শুকনো কাশি, কারও সামান্য কফ বেরোচ্ছে। বেলেঘাটা আইডি-র বক্ষরোগ চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরীর কথায়, ‘‘অনেকেরই জ্বর ছাড়াও শুধু কাশি হচ্ছে। প্রচলিত সিরাপ, অ্যান্টিবায়োটিকেও তা সারছে না। আসলে এই সংক্রমণে শ্বাসনালি সঙ্কুচিত হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ইনহেলার থেরাপিতে উপশম মিলছে।”

কিন্তু ইনহেলার নিতে নারাজ বহু রোগীই। তাঁদের ধারণা, ওই থেরাপির অর্থ, ফুসফুসের পাকাপাকি কোনও ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এই বিভ্রান্তি সমস্যা আরও বাড়াচ্ছে বলে মত মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের। তাঁর কথায়, ‘‘ওই রোগীদের বোঝাতে পারছি না যে, শ্বাসনালি ও টনসিল গ্রন্থির প্রদাহে ইনহেলার সরাসরি কাজ করবে। যাঁরা ইনহেলারে সুস্থ হচ্ছেন, তাঁদের অন্যকে বোঝাতে হবে।”

অ্যাডিনোভাইরাসে বড়দের কাশি বা চোখের সমস্যায় বাড়াবাড়ি হচ্ছে কেন? ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের ব্যাখ্যা, অ্যাডিনো ডিএনএ ভাইরাস হওয়ায় কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে বংশবিস্তার করে। শরীরের প্রতিরোধী ব্যবস্থাপনাকে ফাঁকি দিয়ে তা টনসিল ও অ্যাডিনয়েডের লিম্ফয়েড টিসুতে বহু দিন থেকে যায়। আসলে, অ্যাডিনোভাইরাসের বহিরঙ্গে থাকা পেরেকের মতো অংশটি লিম্ফয়েড, চোখের কনজ়াংটিভাল-সহ বিশেষ কিছু কোষকে আক্রমণের জন্য বেছে নেয়। তাতে কোষে সংক্রমণ ও প্রদাহ দীর্ঘস্থায়ী হয়।

সিদ্ধার্থ আরও বলেন, “আক্রান্ত কোষের মৃত্যু ঠেকিয়ে অ্যাডিনো অনেক দিন আধিপত্য বজায় রাখতে পারে। তাই টনসিল ও ফ্যারিংসে ভাইরাস থেকে যাওয়ায় কাশিও সারতে চায় না। অ্যান্টিবায়োটিকের বদলে সেখানে ইনহেলারই কাজ করে।’’ কনজ়াংটিভাইটিস পুরনো সমস্যা হলেও অ্যাডিনোভাইরাসের আক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, জানাচ্ছেন চক্ষু চিকিৎসক হিমাদ্রি দত্ত। তিনি বলছেন, ‘‘অ্যাডিনোর দু’টি সেরোটাইপ মিশে রিকম্বিন্যান্ট ভাইরাসের কারণেই আক্রান্তের সংখ্যা বেশি বলে মনে হচ্ছে।’’ কনজ়াংটিভাইটিসের রোগীর সংখ্যা গত তিন সপ্তাহে বাড়ছে বলে পর্যবেক্ষণ চক্ষু চিকিৎসক জ্যোর্তিময় দত্তেরও। তিনি জানান, বহু ক্ষেত্রে চোখের সাদা অংশের আবরণ হিসাবে থাকা ঝিল্লি বা কনজ়াংটিভাকে অ্যাডিনোভাইরাস আক্রমণ করছে। তাতে চোখ লাল হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যাক্টিরিয়ার দ্বারা দ্বিতীয় সংক্রমণও ঘটছে।

জ্যোতির্ময়ের কথায়, “বড়দের এমন সমস্যা বেশি। তাঁদের কর্নিয়ায় সংক্রমণের ফলে ছোট ছোট ছাপ তৈরি হয়। ফলে দৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা হচ্ছে। দৃষ্টিহীন হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।” বেশির ভাগ কনজ়াংটিভাইটিস অর্থাৎ, চোখ লাল হওয়ার নেপথ্যে সপ্তাহখানেক আগে জ্বরের ইতিহাস থাকছে। গলা ব্যথা, টনসিল ফোলা, শুকনো কাশি, নাক দিয়ে জল পড়ার সমস্যাও মিলছে বলে মত চক্ষু চিকিৎসক শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, “অনেক রোগীর চোখের সাদা অংশ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই অ্যান্টি ব্যাক্টিরিয়াল ও অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ একসঙ্গে দিতে হচ্ছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Inhaler Adenovirus cough and cold Eye Infection

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}