বিনিদ্র: রাজাবাজারের ধর্না মঞ্চে আইসান। বুধবার রাতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
লাল-হলুদ ফুলছোপের জ্যাকেটের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো। কপালে বাঁধা কালো ফেট্টিতে লেখা ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’। মুঠো করা এক হাত উপরে তুলে, শরীরটা ঝাঁকিয়ে, আর এক হাতে মাইক্রোফোনটা শক্ত করে চেপে ধরে ছোট চেহারাটা তেজের সঙ্গে স্লোগান তুলছে ‘হাম ক্যয়া চাহতে...’
ভিড় থেকে গলা মিলিয়ে উত্তর আসছে, ‘আজাদি-আজাদি’।
ঘড়ির কাটায় তখন ১২টা বেজে গিয়েছে। কিন্তু এতটুকুও ক্লান্ত নয় আজাদির স্লোগান তোলা ছোট চেহারাটা। বরং হাত থেকে মাইক্রোফোন ছাড়তে নারাজ ছয় বছরের আইসান আলি। দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া ওই বালক রোজই মা শামা পারভিনের হাত ধরে চলে আসে রাজাবাজারের ধর্না মঞ্চে। রাত বাড়লেও চোখে ঘুম নেই ছোট ছেলেটির। বরং বড়রা যখন স্লোগান দেওয়া থেকে বিরত থাকেন, তখন আইসান নিজেই ‘আজাদি’ কিংবা ‘হাল্লা বোল’ স্লোগান তুলে ঘুরে বেড়ায়। তাকে সঙ্গ দেয় জারা, জিশানের মতো অন্যান্য খুদেরা।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় ছেলের গলায় ‘আজাদি’ স্লোগান শুনে উচ্ছ্বসিত তার মা শামাও। বললেন, ‘‘দেখুন, একটা বাচ্চা মন থেকে আজাদির কথা বলছে। কিন্তু মোদী তা শুনতে পাচ্ছেন না। আসলে এ সব শুনলে যে মোদীই গদি থেকে পড়ে যাবেন। ছেলের জন্য আমার গর্ব হচ্ছে।’’ আইসানের উৎসাহের প্রশংসা করছেন স্থানীয় বাসিন্দা তথা ধর্নায় সামিল তরুণী সাহিনা জাভেদও। তাঁর কথায়, ‘‘এ লড়াই তো আমাদের সকলের। বাড়িতে গিয়ে শিশুরাও শুনছে তাদের বাবা-মা এবং অন্যান্যদের লড়াইয়ের কথা। ধর্না মঞ্চে এসে নিজের চোখে দেখছে। তা থেকেই শিশুরাও শিখে গিয়েছে আজাদির স্লোগান।’’
রাজাবাজার মোড়ে এপিসি রোডের উপরেই তেরঙা কাপড় ঘিরে তৈরি করা হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতার মঞ্চ। সেখানে ঢোকার মুখেই এক পাশে টাঙানো বিশাল জাতীয় পতাকা। শীতের হিমেল হাওয়া, শিশিরকে উপেক্ষা করে রাস্তায় বসেই এনআরসি, সিএএ-র বিরোধিতায় মেতেছেন প্রবীণ থেকে তরুণ প্রজন্ম। রাত বাড়লেও খামতি ছিল না তাঁদের উৎসাহে। তাই তো একরত্তি শিশুকে চাদরে মুড়ে নেওয়ার ফাঁকেই মঞ্চ থেকে ভেসে আসা স্লোগানে তাল মিলিয়ে গৃহবধূ নাসিমা বললেন, ‘কাগজ দেখাব না।’
ঠান্ডা লাগুক। যে ভাবে হোক বাঁচাতে হবে দেশের মাটি। এটাই এখন সকলের এক মাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করেন বৃদ্ধা মুন্নি বেগম। তাঁর কথায়, ‘‘সব কষ্ট সহ্য করা যায়। দেশ ভাগের ক্ষত যে প্রতি মুহূর্তে যন্ত্রণা দেয়। তাই সেটা বাচ্চা-বড় সকলকে এক জোট হয়ে আটকাতেই হবে।’’ আর তাই বোধহয় শীতের রাতেও ক্লান্ত না হয়ে ফের মাইক্রোফোন হাতে আইসান মাথা ঝাঁকিয়ে উৎসাহ নিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে, ‘আজাদি-আজাদি’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy