খুশি: সোনারপুরের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে পুষ্পক স্বর্ণকার। শনিবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে দেশে ফেরার যাত্রা শুরু হয়েছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি। টার্নোপিল থেকে সোনারপুরের বাড়িতে ফেরার পথটা এ বার ছিল রীতিমতো বিপদসঙ্কুল। তবে গত শুক্রবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেছেন সোনারপুরের কামরাবাদের বাসিন্দা পুষ্পক স্বর্ণকার। ইউক্রেনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পড়াশোনা শেষ করতে ফের টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েই ফিরে যেতে চান নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই প্রাক্তন ছাত্র।
শনিবার সকালে সোনারপুরের বাড়িতে বাবা সুজিত ও মা প্রতিভার পাশে বসে পুষ্পক বললেন, ‘‘আমি পঞ্চম বর্ষের ছাত্র। আর মাত্র দু’টি সিমেস্টার বাকি রয়েছে। এখন অন্য কোনও বিষয়ে পড়াশোনার কোনও অবকাশ নেই। চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইরে গিয়ে এখন আর কী-ই বা পড়াশোনা করতে পারব! তাই যুদ্ধ থামলে আবার ফিরে যাব ও দেশেই।’’
পুষ্পক জানাচ্ছেন, মাস দেড়েক আগেই সেখানে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। তাই প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের অনেক ছাত্রছাত্রী তখনই দেশে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’-এর কথা তখনও শুনছিলেন চার দিকে। তাই ভেবেছিলেন, কোনও ভাবে সমঝোতার জায়গায় আসবে রাশিয়া-ইউক্রেন। তাতে পড়াশোনা শেষ করে বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে আশাবাদী ছিলেন পুষ্পকের মতো অনেক পড়ুয়াই।
কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গেই বদলে যায় গোটা পরিস্থিতি। পুষ্পক জানাচ্ছেন, সেই দিনই বাড়ি ফেরার জন্য বিমানবন্দরে পৌঁছে গিয়েছিলেন তাঁর কয়েক জন সহপাঠী। কিন্তু সেখান থেকে তাঁরা ফোনে জানান, একের পর এক বিস্ফোরণ হচ্ছে বিমানবন্দরে। তাই ফিরে আসছেন তাঁরা।
পুষ্পকের কথায়, ‘‘তখনই বুঝলাম, আর এখানে থাকা যাবে না। ফিরতেই হবে আমাদের। তাই সহপাঠীরা ফিরে আসার পরে হাতের সামনে যা কিছু ছিল, ব্যাগে গুছিয়ে নিলাম। এর পরে এগোলাম রোমানিয়া সীমান্তের দিকে। প্রথমে বাস, তার পরে হেঁটে রোমানিয়া সীমান্ত। পথেই ইউক্রেনীয়রা যে ভাবে খাবার-জল দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন, তা কখনও ভুলব না।’’
আর ভারতীয় দূতাবাস? পুষ্পক জানাচ্ছেন, টার্নোপিল ছাড়ার আগেই দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন তাঁরা। জানানো হয়েছিল, রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছে গেলে তার পরেই দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন তাঁরা।
তবে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি রোমানিয়া সীমান্তে পৌঁছনোর পরেও অপেক্ষার শেষ হয়নি পুষ্পক ও তাঁর সহপাঠীদের। সে সময়ে সেখানে তাপমাত্রা শূন্যের নীচে, চার দিকে বরফ আর বরফ। কোথাও বসার জায়গাটুকুও নেই।
পুষ্পকের কথায়, ‘‘মাঝেমধ্যে রোমানিয়া সীমান্তের দরজা খুলছে, তখন আগে পৌঁছনোর ভিত্তিতে ইউক্রেনীয় ও অন্য দেশের মেডিক্যাল পড়ুয়াদের রোমানিয়ায় যেতে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে প্রায় ১৪ ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে সীমান্ত পেরোতে পারি আমরা। তার পরে রোমানিয়ায় একটি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছিল। সেখানে অবশ্য সব রকম ব্যবস্থাই ছিল। এর পরে একের পর এক বিমানে প্রথমে দিল্লি ও পরে কলকাতা।’’
এ দিন পুষ্পকের মা প্রতিভা বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় ছেলে ঘরে ফিরেছে। প্রথম দিন থেকেই মুখ্যমন্ত্রী সচিবালয়ের এক অফিসার আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, পাশে থেকেছেন।’’
আর বাবা সুজিত বলেন, ‘‘এখন ছেলেকে কয়েক দিন বিশ্রাম নিতে বলেছি। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও যে আবার ইউক্রেনে ফিরে যাবে, তা আমি বেশ বুঝতে পারছি। কারণ ও ছোট থেকেই মেধাবী ও জেদি। যা বলে, সেটাই করে দেখায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy