Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Indian Railways

ট্রেনের কামরায় পাথর দিয়ে মেরে লুট, প্রশ্ন যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন কৌশিক।

আতঙ্ক: সুভাষগ্রাম স্টেশনেই কামরার মধ্যে আক্রান্ত হন কৌশিক (ইনসেটে)। শুক্রবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

আতঙ্ক: সুভাষগ্রাম স্টেশনেই কামরার মধ্যে আক্রান্ত হন কৌশিক (ইনসেটে)। শুক্রবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২১ ০৫:৪২
Share: Save:

বাইরে থেকে পাথর ছুড়ে লোকাল ট্রেনের যাত্রীদের উপরে হামলার কথা এত দিন সামনে এসেছিল। এ বার যাত্রী সেজে ট্রেনে উঠে পাথর দিয়ে মেরে যাত্রীর সর্বস্ব লুট করার ঘটনা ঘটল। শুক্রবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ডায়মন্ড হারবার লোকালে। ওই হামলায় গুরুতর জখম হন কৌশিক হালদার নামে এক যুবক। তিনি ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। লোকাল ট্রেনের মধ্যে এ ভাবে আক্রমণের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় রেলের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।


পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ই এম বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেন কৌশিক। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ধামুয়া এলাকায়। বাবা দিলীপ হালদার একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করেন। বৃহস্পতিবার সারা রাত হাসপাতালে ডিউটি সেরে বছর পঁচিশের কৌশিক বালিগঞ্জ স্টেশন থেকে ডায়মন্ড হারবার লোকালে ওঠেন। ভোর ৪টে ৫০-এর ট্রেনে সে ভাবে ভিড় ছিল না। বালিগঞ্জ থেকে ট্রেনে উঠেই জানলার পাশের একটি আসনে বসেন কৌশিক। পরে সুভাষগ্রাম স্টেশন থেকে ওই কামরায় আরও বেশ কয়েক জন যাত্রী ওঠেন। অভিযোগ, আচমকাই দু’জন পাথর নিয়ে কৌশিকের মাথার পিছনে আঘাত করে। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁর কাছ থেকে মোবাইল ও টাকাপয়সা নিয়ে দুই হামলাকারী ট্রেন থেকে নেমে যায়। পাথরের আঘাতে মাথা ফেটে রক্ত বেরোতে থাকে কৌশিকের। রক্তে তাঁর জামাও ভিজে যায়। কিছু ক্ষণ পরেই জ্ঞান হারান কৌশিক।


ট্রেন বারুইপুর স্টেশনে পৌঁছলে অন্য যাত্রীরা কৌশিককে নামিয়ে জিআরপি অফিসে নিয়ে যান। কিন্তু বারুইপুর জিআরপির তরফে প্রথমে বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি বলেই অভিযোগ। এমনকি, তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা পর্যন্ত করা হয়নি। চিকিৎসার বদলে তাঁকে সোনারপুর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকা যাত্রীরাই তাঁকে নিয়ে সোনারপুর হাসপাতালে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলেও জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘তেমন কিছু হয়নি’। তাঁকে বাড়ি চলে যেতে বলা হয়।


সহযাত্রীরাই তাঁকে সোনারপুর স্টেশন থেকে ফের ট্রেনে করে ধামুয়া স্টেশনে নিয়ে গিয়ে বাড়ি পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেন। কিন্তু বাড়ি ফিরতেই ফের তাঁর মাথার কাটা জায়গা থেকে রক্ত বেরোতে থাকে। ফোন করে কৌশিকের বাবা দিলীপ হালদারকে খবর দেওয়া হয়। বাড়ির লোকজন তাঁকে বাইপাসের ধারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে তাঁর মাথায় চারটি সেলাই পড়েছে। তাঁর সিটি স্ক্যানও করা হবে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর। আগামী ২৪ ঘণ্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলেও জানানো হয়েছে।


এই ঘটনা সামনে আসতেই নতুন করে ট্রেনে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্নের মুখে পড়েছে জিআরপি-র ভূমিকাও। এর আগে শিয়ালদহ শাখাতেই পাথর ছোড়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। কয়েক মাস আগে পার্ক সার্কাস স্টেশন ছাড়ার পরেই মহিলা কামরা লক্ষ্য করে প্যাকেট ভর্তি প্রস্রাব ছোড়ার অভিযোগ তুলেছিলেন এক তরুণী। এমনকি, শিয়ালদহ শাখার বামনগাছি স্টেশনের কাছেও চলন্ত ট্রেনে বাইরে থেকে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে। জখম হন এক মহিলা যাত্রী। বার বার এমন ঘটায় যাত্রীরাও আতঙ্কিত।


শ্যামল সাঁতরা নামে ক্যানিংয়ের এক বাসিন্দা শুক্রবার বলেন, ‘‘ট্রেনে নিরাপত্তা তো কিছুই চোখে পড়ে না। কিছু ঘটলে সাময়িক ভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক দিন পরেই আর সে সব চোখে পড়ে না। এই আতঙ্ক নিয়েই আমরা রোজ যাতায়াত করছি।’’


পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এমন ঘটনার কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। তবে অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া, ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া একটা সামাজিক ব্যাধি। এই প্রবণতা বন্ধ করতে আগেও একাধিক সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়েছে। আগামী দিনেও করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways Passenger Security
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy