উদ্যোগী: গার্ডেনরিচের আবাসনের ছাদে সঞ্জয় সিংহ গহলৌত। নিজস্ব চিত্র
এনার্জি পার্ক। তা-ও আবার আবাসনের ছাদে!
কলকাতায় বহু বিলাসবহুল আবাসনে ছাদচাষ কিংবা রুফটপ গার্ডেনিং এখন দেখা যায়। তা বলে এনার্জি পার্ক! আবাসনের এগারো তলার ছাদে রয়েছে উইন্ডমিল (বায়ুকল), সোলার প্যানেল, সোলার ওয়াটার হিটারের মতো যন্ত্রপাতি। এ সব তৈরি করে নিজের বাড়ির বিদ্যুতের খরচ এক ধাক্কায় কমিয়ে ফেলেছেন পূর্ব রেলের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার সঞ্জয় সিংহ গহলৌত। তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অন্যদেরও।
গার্ডেনরিচে গঙ্গার ধারের সরকারি আবাসনের বাসিন্দারা পূর্ব রেলের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকের এই কর্মকাণ্ড দেখে অবাক এবং উৎসাহিত। কী করা যায় না সেখানে? জল গরম করা, রুটি সেঁকা, ভাত রান্না— সবেরই ব্যবস্থা রয়েছে ওই ছাদের উপরে তৈরি শক্তি-পার্কে। আর ছাদের উপরে দিবারাত্রি হাওয়ার কোনও অভাব নেই। ফলে জীবাশ্মশক্তির বদলে বিকল্প শক্তির প্রয়োগে উৎপন্ন হচ্ছে বিদ্যুৎও।
পূর্ব রেল সূত্রে খবর, সঞ্জয় বরাবরই কাজের লোক হিসেবে পরিচিত। রেলের কাজকর্ম পরিচালনার মতো গুরুদায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তাঁর পরিবেশ সচেতন মানসিকতাও একাধিক বার প্রশংসিত হয়েছে। কর্মজীবনের পঁচিশ বছরে শুধু রেলের জমিতেই হাজারের উপর গাছ নিজের হাতে লাগিয়েছেন এই আধিকারিক। তাঁর এই গাছের প্রতি প্রীতি প্রশংসিত হয়েছে রেল মন্ত্রকের কাছেও। অবাঙালি হলেও দীর্ঘ কর্মজীবনে মাঝে ভোপাল এবং আসানসোলে কাটানো বছর পাঁচেক বাদ দিলে বাকিটা তাঁর কেটেছে কলকাতাতেই।
দিল্লির সেন্ট স্টিফেন্স কলেজের ইতিহাসের প্রাক্তনী সঞ্জয় জানান, ছাদের উপরে তৈরি ওই এনার্জি পার্ককে কাজে লাগানোর জন্য তিনি আবাসনের অন্য বাসিন্দাদেরও উৎসাহ দিচ্ছেন। অনেককেই তাঁর এনার্জি পার্কে নিয়ে গিয়ে দেখাচ্ছেন কোন যন্ত্রের ব্যবহারে কী লাভ হওয়া সম্ভব। ইদানিং কোনও কোনও বড় আবাসনে আবর্জনা থেকে সার তৈরি করে বাগান করার ব্যবস্থা করা আছে। কলকাতায় এমনও আবাসন রয়েছে যেখানে বিকল্প শক্তির ব্যবহারে বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে এনার্জি পার্ক তৈরি হয়নি বলেই দাবি রেল আধিকারিকদের একাংশের।
গার্ডেনরিচের ওই আবাসনের ছাদে উঠে দেখা গেল প্রায় তিন হাজার বর্গফুট জুড়ে রয়েছে দু’টি উইন্ডমিল (বায়ুকল), দু’টি সোলার প্যানেল, তিনটি সোলার ওয়াটার হিটার এবং পাঁচটি সোলার কুকার। সৌরশক্তি চালিত যন্ত্র সারা দিনে ৩০০ লিটার পর্যন্ত গরম জল জোগান দিতে পারে। সৌরশক্তি চালিত চারটি সাধারণ কুকারের পাশাপাশি একটি বাটারফ্লাই কুকার রয়েছে। যেখানে প্রেশার কুকার বসিয়ে দিব্যি রান্না করা যায়। এমনকি সূর্যের তাপ কেন্দ্রীভূত করে রুটিও সেঁকা যায়।
সঞ্জয় জানান, জল গরম করার যন্ত্র ব্যবহার করে তিনি বাড়ির বিদ্যুতের খরচ অনেকটা কমিয়েছেন। পাশাপাশি সোলার কুকার তাঁর গ্যাসের খরচও অনেকটা কমিয়েছে। সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ তিনি দিনের বেলায় ব্যাটারিতে সঞ্চয় করে রাতে আলো-পাখা চালানোর কাজে লাগান। তিনি জানান, গঙ্গার ধারে এগারো তলা আবাসনের ছাদে শীতকালের চার মাস বাদ দিলে বছরের বাকি সময়ে ভাল হাওয়া দেয়। বায়ুকলগুলি স্বয়ংক্রিয় উপায়ে হাওয়ার গতিপথ অনুযায়ী অভিমুখ বদলাতে পারে। ফলে সেগুলি থেকে প্রায় দিবারাত্রি বিদ্যুৎ মেলে।
এক জন ইতিহাসের ছাত্র পরিবেশ নিয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলেন কী ভাবে?
তাঁর কথায়, ‘‘ইউপিএসসি-র প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু বই পড়তে গিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। তার পরে আগ্রহ আরও বাড়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy