পর্বতারোহী। প্রতীকী ছবি।
হঠাৎ খারাপ আবহাওয়ার জেরে উত্তরাখণ্ডের কানাকাটা পাসের পথে যাওয়া পাঁচ ট্রেকার যে বিপদে পড়েছেন, সেই খবরটুকু নীচে পৌঁছতেই লেগেছিল তিন-তিনটে দিন! অবশেষে ন’দিন পরে পাহাড়ের বুক থেকে তুলে আনা হয়েছে পাঁচ পাহাড়প্রেমীর নিথর দেহ।
২০১৯ সালে নন্দাদেবী ইস্টে যাওয়া আট বিদেশি অভিযাত্রী ঠিক কোথায় তুষার ধসের মুখে পড়েছিলেন, তা বুঝতেই কেটে গিয়েছিল অনেকটা সময়। প্রায় এক মাস পরে সাত পর্বতারোহীর দেহ উদ্ধার করে সেনা। অষ্টম জন আজও নিখোঁজ।
২০১৮ সালে কারাকোরাম পর্বতমালার সাসের কাঙ্গরি ফোর শৃঙ্গ ছুঁয়ে ফেরার পথে এভারেস্টজয়ী পেম্বা শেরপার ক্রিভাসে তলিয়ে যাওয়ার খবরও জানা গিয়েছিল প্রায় ১২ ঘণ্টা পরে। উদ্ধারকাজ শুরু হলেও ওই পর্বতারোহীর দেহ আজও মেলেনি।
এ দেশে নিরাপত্তার স্বার্থেই পাহাড়ে যোগাযোগ রক্ষাকারী ফোন বা কোনও যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি রয়েছে। অথচ, এখানে একের পর এক অঘটন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, বিপদে পড়লে যোগাযোগের অভাবেই বার বার নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়। যার ফলে ফিরে আসার সম্ভাবনাও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হচ্ছে। তাই পর্বতারোহী মহলের দাবি মেনে এ বার ট্রেকিং বা অভিযানে যাওয়া কারও হাতে স্যাটেলাইট ফোন তুলে দেওয়ার তোড়জোড় করছে আইএমএফ (ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফাউন্ডেশন)। আগামী মরসুম থেকেই যাতে ভাড়া দেওয়া যায়, তার জন্য আপাতত ২০টি স্যাটেলাইট ফোন কেনা হচ্ছে। আইএমএফের প্রেসিডেন্ট, ব্রিগেডিয়ার অশোক অ্যাবে বলেন, ‘‘দেশি-বিদেশি পর্বতারোহী ও ট্রেকারদের এই ফোন ভাড়ায় দেওয়া হবে। যে সমস্ত রাজ্যে সরকারি অনুমতি রয়েছে, শুধু সেখানেই এগুলি ব্যবহার করা যাবে। ফিরে এসে ফেরত দিতে হবে।’’
টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রক সূত্রের খবর, নিরাপত্তাজনিত কারণে কাশ্মীর-লাদাখ-সিকিম ও উত্তর-পূর্ব ভারত বাদে বাকি দেশে বিএসএনএলের স্যাট ফোন ব্যবহারে সায় রয়েছে কেন্দ্রের। ২০১৪ সাল থেকেই এই অনুমতি দিয়েছে সরকার। এ রাজ্যের একটি পর্বতারোহণ ক্লাব সেই ফোন ইতিমধ্যে কিনেও ফেলেছে। তবে দামি এই ফোন ক’জন নিতে পারবেন, সে প্রশ্ন থাকছেই। আইএমএফ প্রেসিডেন্ট বলছেন, ‘‘শুধু স্যাট ফোনে ভরসা করলেই হবে না। নিজেদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বুঝে, উপযুক্ত সরঞ্জাম নিয়ে ঠিক সময়ে পাহাড়ে যাওয়া উচিত। না হলে ঝুঁকি থাকবেই।’’
স্যাট ফোন ছাড়াও জিপিএস যুক্ত কিছু যন্ত্র বিদেশে ব্যবহার করেন অনেকে, যাতে মেসেজে যোগাযোগ রাখা যায়। সপ্তশৃঙ্গজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন, মেক্সিকো বা নেপালের পাহাড়ে একাধিক বার তাঁর পরিত্রাতা হয়ে উঠেছে সেটি। বিপদের কথা জেনে দ্রুত পৌঁছেছে হেলিকপ্টার, উদ্ধারকারী দল। ২০১৯ সালে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানেও ওই যন্ত্রের মাধ্যমেই দুই সহ-অভিযাত্রীর বিপদের খবর সমতলে পাঠিয়েছিলেন পর্বতারোহী রুদ্রপ্রসাদ হালদার। তাই সত্যরূপের মতে, ‘‘দেশে এই যন্ত্র ব্যবহার করা গেলে মূল্যবান সময় যেমন বাঁচবে, তেমনই জীবিত অবস্থায় উদ্ধারের সম্ভাবনাও বাড়বে।’’ একই সুর এভারেস্টজয়ী মলয় মুখোপাধ্যায়ের গলাতেও— ‘‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমস্যার কারণেই সীমান্ত এলাকায় কড়াকড়ি রয়েছে। তবে জিপিএস যুক্ত যন্ত্র রাখতে দিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ কিন্তু বাস্তব হল, এখনও দেশের কোথাও বিদেশি সংস্থার তৈরি এই ধরনের যন্ত্র ব্যবহারের অনুমতি নেই।
‘পার্সোনাল লোকেটর বিকন’ নামে আর একটি আপৎকালীন যন্ত্রের কথা বলছেন ‘অ্যামেচার রেডিয়ো সোসাইটি অব ইন্ডিয়া’র সদস্য আর্য ঘোষ। ১০০-১৩০ গ্রাম ওজনের এই যন্ত্রের বোতাম টিপলেই উপগ্রহের মাধ্যমে সে জিপিএস-সহ সিগন্যাল পাঠাবে বেঙ্গালুরুর ‘ইন্ডিয়ান মিশন কন্ট্রোল সেন্টার’-এ (আইএমসিসি)। সেখান থেকে খবর পেয়ে দ্রুত উদ্ধারকাজ শুরু করা যাবে। ২০১৭ সালে এই সিগন্যাল পেয়েই পিথোরাগড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল এক বিদেশি অভিযাত্রীকে। তবে ইসরো এই যন্ত্রকে স্বাগত জানালেও আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা বা ক্রীড়া মন্ত্রক থেকে সাড়া মেলেনি। পর্বতারোহণ বা ট্রেকিং মহলেও এখনও জনপ্রিয় হয়নি। আইএমএফের ইস্টার্ন জ়োনের চেয়ারম্যান দেবরাজ দত্ত বলছেন, ‘‘এই বিকন ব্যবহারে অনুমতির প্রয়োজন নেই। তবে এতে ফোন-মেসেজ করার সুযোগ নেই। তাই পাহাড়ে অত্যন্ত সাবধানে এর ব্যবহার করতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy