Advertisement
E-Paper

‘১৯২৬-এ পোশাক দেখে শত্রু বলা শুরু, প্রকট হয় ১৯৪৬-এ’

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই পোশাক দেখে হাঙ্গামাকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলছেন।

মুখোমুখি: নয়া নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে ডাকা বিজেপির মিছিল দেখছেন এক মুসলিম বৃদ্ধ। সোমবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ। (ডান দিকে)পোশাক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে নিজের হিজাব পরা এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিলেন কেরলের আইনের ছাত্রী ইন্দুলেখা পার্থান। সেই ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

মুখোমুখি: নয়া নাগরিকত্ব আইনের সমর্থনে ডাকা বিজেপির মিছিল দেখছেন এক মুসলিম বৃদ্ধ। সোমবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুমন বল্লভ। (ডান দিকে)পোশাক নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রতিবাদে নিজের হিজাব পরা এই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় দিয়েছিলেন কেরলের আইনের ছাত্রী ইন্দুলেখা পার্থান। সেই ছবি ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:২৬
Share
Save

২০১১ সালের ইংল্যান্ড সফরে টেস্টে তিনটি শতরান করেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়। তার পরে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘‘যদি জানতাম মনটা ঠিক কোন রেসিপিতে তৈরি করলে সাফল্য অব্যর্থ, তা হলে তো সমস্যাই ছিল না। সেই পরশপাথরটাই তো খুঁজে যাই অবিরাম।’’

সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সকলেই পোশাক দেখে হাঙ্গামাকারীদের চিহ্নিত করার কথা বলছেন। আবার আর একদল মানুষ রয়েছেন, যাঁরা পোশাক দেখে মানুষকে চিহ্নিত করায় বিশ্বাসী নন। তাঁরাও আজ খোঁজ করে চলেছেন সেই পরশপাথরের, যার স্পর্শে শান্তি-দৌত্যে সফল হওয়া যায়। সেই সঙ্গে বুঝে নেওয়ার চেষ্টা চলছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া বা

কাউকে পিটিয়ে মেরে ফেলার পিছনে যে ‘মন’ রয়েছে, সেটা কী রকম? যে ভাবে এক জন ব্যাটসম্যান ক্রিজে নামার আগে মনঃসংযোগ করেন, তেমন করেই কি পোশাক দেখে মানুষকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে মনঃসংযোগ করতে হয়? ইতিহাস কি সেই চিহ্নই রেখে গিয়েছে?

এক সময়ে এ বিষয়ে গবেষণা করেছিলেন ইতিহাসবিদ রজতকান্ত রায়। তিনি জানাচ্ছেন, পোশাকের ক্ষেত্রে ‘বিভাজন’ শুরু হয়েছিল স্বদেশী আন্দোলনের সময়ে। ১৯২৬ সালে এই ধারার শুরু, যা প্রকট হয়ে ওঠে ১৯৪৬ সালে অশান্তির সময়ে। রজতকান্তবাবুর কথায়, ‘‘পোশাক দেখে শত্রুকে চিহ্নিত করা এবং অশান্তির পথ প্রশস্ত হয় তখন থেকেই।’’ অথচ তার আগে অবিভক্ত বাংলার চাষিরা প্রায় সকলেই ধুতি পরতেন। তা তিনি হিন্দু বা মুসলমান যা-ই হোন না কেন। অর্থাৎ ‘পোশাক’ দেখে মানুষটা কেমন, সে প্রশ্নের উত্তর সে সময় খোঁজা হত না বলেই জানাচ্ছেন এই বর্ষীয়ান ইতিহাসবিদ।

আরও পড়ুন: ‘বলেছে মিছিলে এলে ভয় নেই, তাই এলাম’

কিন্তু এখন সময় বদলেছে, বদলেছে মানসিকতাও। পোশাক দেখেই অনবরত এক জন মানুষ সম্পর্কে ধারণা করে নেওয়া হচ্ছে। বিভাজন মানুষকে কতটা ‘অন্ধ’ করে তোলে, তা বোঝাতে গিয়ে সমাজতত্ত্বের গবেষকরা বলছেন, পোশাক আলাদা বলেই হয়তো একদল লোক কারও বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়ে গেল। আর সে-ও রাগে উন্মত্ত হয়ে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যারা তার মতো পোশাক পরে না, তাদের উপরেই ঝাঁপিয়ে পড়ল। সে সময়ে কারও চোখে পড়ে না, যে বাড়িটিতে হত্যালীলা চলছে, সেখানেই হয়তো উঠোনের এক পাশে উনুনে ভাত বসানো হয়েছিল। চার পাশ আলোড়িত হয়ে যাচ্ছিল সেই গন্ধে। হয়তো একটা নিকোনো গেরস্থালির পেলব স্পর্শ ছড়িয়ে ছিল সমস্ত জায়গা জুড়ে। কিন্তু এর কোনও কিছুই না দেখে যা হাতের সামনে পাওয়া গেল, তা ধ্বংস করতেই মেতে ওঠে সকলে।

আরও পড়ুন: বন্ধুর বোনকে হেনস্থার প্রতিবাদ, খুন যুবককে

তার পরেও কি আশ মেটে? সমাজতত্ত্বের শিক্ষক অভিজিৎ কুন্ডুর মতে, ধ্বংসের নেশা এত সহজে মিটে যাওয়ার নয়। তাই ‘ওরা বিধর্মী, ওদের পোশাক আলাদা’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়া চলতেই থাকে। দু’জনেই শ্রান্ত। কিন্তু তার পরেও কী ভাবে আরও অনেকের রক্তে মাটি ভিজিয়ে দেওয়া যায়, সেই কৌশল দু’পক্ষই রপ্ত করতে চায়। অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘এর ফলে দেশের স্বাভাবিক চরিত্রটাই ক্রমশ পাল্টে যাচ্ছে।’’ অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না তো! শিক্ষাবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কারও পোশাক নিয়ে বিশেষ ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। অন্তত এত দিন পড়ত না। কিন্তু বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে এক শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা যে ভাবে পোশাকের দিকে ইঙ্গিত করছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও অশোভন।’’ এর জেরে আরও বড় কোনও সর্বনাশের আশঙ্কা তৈরি হয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন সৌরীনবাবু।

সাফল্যের ‘পরশপাথর’ খুঁজে চলার কথা বলেছিলেন দ্রাবিড়। ভেদাভেদ সৃষ্টিকারীরা তাদের সাফল্যের পরশপাথর হিসেবে সামনে আনছে পোশাককে। আর যাঁরা চান এই দেশটা আগের মতোই থাকুক, তাঁরাও উল্টো পথে হেঁটে চলেছেন ওই পরশপাথরের সন্ধানে। যার ছোঁয়ায় নির্ভয়ে বলা যায়— ‘পোশাকের বিভাজন নয়। এই সাড়ে তিন হাত ভূমিই আমার দেশ। এই দেশেই বাঁচব। এই দেশ ছেড়ে কোত্থাও যাব না!’

Narendra Modi Citizenship Amendment Act Religious Discrimination

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।