প্রতীকী চিত্র।
অতিমারির আবহে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে ব্রাত্য করা হয়েছিল তাকে। টানা ২০ মাসের সেই বিরতি কাটিয়ে এ বার রাতের শহরে নজরদারিতে ফিরল ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার। ‘ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বুরো’র (এনসিআরবি) সদ্য প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, কলকাতায় দুর্ঘটনার সংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ মত্ত চালকদের দৌরাত্ম্য। আর তার পরেই পরিস্থিতি সামলাতে তড়িঘড়ি ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারকে ফিরিয়ে আনল ট্র্যাফিক পুলিশ।
তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে প্রথম দু’দিনের পরীক্ষাতেই ২৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে। বুধবার রাতেও বিভিন্ন নাকা-তল্লাশিতে এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে বলে খবর।
ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, উৎসবের মরসুমে রাত করে বাড়ি ফেরার প্রবণতা বাড়তে থাকে শহরবাসীর মধ্যে। সেই সঙ্গে রয়েছে একাধিক ট্র্যাফিক-বিধি ভাঙার প্রবণতাও। এনসিআরবি-র ওই রিপোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে কলকাতায় পথ দুর্ঘটনার সংখ্যা ছিল ২০৬৮। পরের বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে লকডাউন বা অন্যান্য কারণে তুলনামূলক ভাবে শহরের রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম ছিল। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেছে অনেকটাই (১৬৮৩টি)। এর মধ্যে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো বা অন্য গাড়িকে পাশ কাটাতে গিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ৯৫৭। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যার নিরিখে দেশে কলকাতার স্থান চেন্নাইয়ের পরেই। এর পাশাপাশি, রাত ৮টা থেকে ১১টার মধ্যে দুর্ঘটনার সংখ্যা কলকাতায় তুলনামূলক ভাবে বেশি। আর এই রিপোর্টই কপালে ভাঁজ ফেলেছে লালবাজারের ট্র্যাফিককর্তাদের। তাই রাতের শহরে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর জেরে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাতে অবশেষে নজরদারিতে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ারকে ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার থেকেই ব্রেথ অ্যানালাইজার দিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দু’দিনে শহরে ২৯ জন চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। সোমবার ১৬ জন এবং মঙ্গলবার ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। বুধবার রাতেও শহরে একই ভাবে নজরদারিতে ছিল ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার।
কিন্তু ব্রেথ অ্যানালাইজারের সাহায্যে মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানোর প্রমাণ মিললে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে? কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে গাড়ি অথবা বাইকচালকের বিরুদ্ধে ১৮৫ নম্বর ধারায় মামলা রুজু করার পাশাপাশি, তাঁর গাড়ি বা বাইক আটক করা হয়। পরবর্তীকালে আদালতের মাধ্যমে জরিমানা দিয়ে সেই গাড়ি বা বাইক ফেরত পেতে পারেন মালিক।
তবে কোভিডের কথা মাথায় রেখেই ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার ব্যবহারে অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া হচ্ছে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি বার ব্যবহারের পরেই মুখ দেওয়া পাইপটি পরিবর্তন করার পাশাপাশি মেশিনটিও জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। রুবি মোড়ে কর্তব্যরত এক ট্র্যাফিক সার্জেন্ট বলেন, ‘‘এত দিন ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার বন্ধ থাকায় তৎক্ষণাৎ মত্ত চালকদের চিহ্নিত করার কার্যত কোনও উপায় ছিল না। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছিল।’’
এমনিতেই শীত পড়তে শুরু করেছে শহরে। সেই সঙ্গে করোনার বিধিনিষেধ তুলনায় শিথিল হওয়ায় দিনকয়েক ধরেই রাতের দিকে পানশালা, রেস্তরাঁগুলিতে ভিড় বাড়ছে। জোড়াবাগান, কসবা, টালিগঞ্জ, পার্ক স্ট্রিট, ভবানীপুর-সহ শহরের যে যে এলাকায় বেশি পানশালা রয়েছে, সেখানে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘নজরদারির পাশাপাশি কোভিড-সুরক্ষার দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সারা সপ্তাহ ধরেই নজরদারি চলবে। সপ্তাহ শেষে ছুটির দিনগুলিতে নজরদারি আরও জোরদার হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy