Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Fire In Dum Dum

সর্বস্ব খুইয়েও পড়শিদের পাশে ফিরোজা, শামিমেরা

আগুন যখন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন চার দিক খোলা ওই জায়গায় হু হু করে হাওয়া বইছিল। মাঝেমধ্যে ফেটেছে সিলিন্ডারও। বিপদ বুঝেও বস্তিবাসীদের অনেকেই উদ্ধারে ঝাঁপিয়েছেন।

মরিয়া: চোখের সামনেই পুড়ছে সর্বস্ব। বালতি দিয়ে জল ছুড়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা এক বাসিন্দার। শনিবার, দক্ষিণ দমদমের মেলাবাগান বস্তিতে।

মরিয়া: চোখের সামনেই পুড়ছে সর্বস্ব। বালতি দিয়ে জল ছুড়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা এক বাসিন্দার। শনিবার, দক্ষিণ দমদমের মেলাবাগান বস্তিতে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:১৭
Share: Save:

‘আগুন, আগুন’ চিৎকার শুনে প্রতিবেশীর ঘরে জল ঢালতে ছুটেছিলেন ফিরোজা বিবি। এক বালতি জল ছুড়ে দ্বিতীয় বালতি আনতে গিয়ে দেখলেন, আগুন ঘিরে ফেলেছে তাঁর ঘরও। অদূরে দড়িতে বাঁধা তিনটি গরু। দিশাহারা ফিরোজার চোখের সামনেই গোটা ঘরটা নিমেষে চলে গেল আগুনের গ্রাসে।

দমদমে রবীন্দ্র ভবনের আশ্রয় শিবিরে বসে কাঁদতে কাঁদতে ফিরোজা কখনও জ্ঞান হারাচ্ছেন, কখনও খোঁজ নিচ্ছেন, পোষা গরুগুলি বেঁচে রয়েছে কি না। দমদমের হনুমান মন্দিরের কাছে মেলাবাগান বস্তির বাসিন্দা ফিরোজা পেশায় পরিচারিকা, তাঁর স্বামী জাহাঙ্গির বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। সামনেই মেয়ের বিয়ে। সেই উপলক্ষে সর্বস্ব খরচ করে গয়না কিনেছিলেন। আগুনে সব শেষ। পুলিশি ঘেরাটোপ এড়িয়ে তাই বার বার ঘরের দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করলেও দুর্ঘটনার আশঙ্কায় যেতে দেওয়া হয়নি।

কাঁদতে কাঁদতে ফিরোজা বলেন, ‘‘ছেলেমেয়েরা আত্মীয়ের বাড়িতে। গরুগুলো বেঁচে আছে কি না, জানি না। কী করে বুঝব, আগুন এত বড় হয়ে যাবে? তা হলে তো কিছু সম্বল নিয়ে বেরোতাম। এক প্রতিবেশীর চিৎকার শুনে তাঁর ঘর বাঁচাতে বালতি হাতে ছুটে যাই। ফিরে দেখি, আমার ঘরও জ্বলছে। চোখের সামনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল!’’

আগুন যখন ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে, তখন চার দিক খোলা ওই জায়গায় হু হু করে হাওয়া বইছিল। মাঝেমধ্যে ফেটেছে সিলিন্ডারও। বিপদ বুঝেও বস্তিবাসীদের অনেকেই উদ্ধারে ঝাঁপিয়েছেন। কেউ পড়শির ঘর থেকে বার করেছেন সিলিন্ডার, কেউ উঠোনে বাঁধা গরুর দড়ি কেটে তাকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেছেন। তেমনই এক জন মহম্মদ শামিম গাজি। ফ্ল্যাটবাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহকারী শামিম বছরখানেক আগে বাবা হয়েছেন। সন্তানকে নিয়ে স্ত্রী মা-বাবার কাছে গিয়েছেন বলে শামিম ঘরে একাই ছিলেন। আগুনের খবরে প্রথমেই ঘর থেকে সিলিন্ডার বার করে পাশের ডোবায় ফেলেন। তার পরে আশপাশের ঘর থেকে সাত-আটটি শিশুকে বার করে আনেন।

শামিম বলছেন, ‘‘স্ত্রী-মেয়ে কেউ ছিল না। কোনও মতে সিলিন্ডারটা বার করে ডোবায় ফেলেই ছুটে যাই আশপাশের ঘরে। চিৎকার করে লোকজনকে বেরোতে বলি। কয়েকটি ঘরে ঢুকে ছোটদের নিয়ে আসি বাইরে। তিনটি শিশুকে কোলে নিয়ে, বাকিদের পিঠে ধাক্কা দিতে দিতে ঘর থেকে বার করি।’’ মেয়ের জন্মদিনে পাওয়া গয়না, সঞ্চয়ের টাকা সবই আগুনের গ্রাসে। তবু ছোটদের গায়ে আঁচ পড়তে দেননি— সেটুকুই সান্ত্বনা শামিমের।

আশ্রয় শিবিরের মেঝেয় শুয়ে ছিল বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন কিশোর সাধু গাজি। তার মা জাহানারা বিবির কথায়, ‘‘বাড়ির চালে তখন আগুন লেগেছে। চাল ভেঙে পড়তে পারে ভেবে কোনও মতে ছেলেকে কোলে তুলে বেরিয়ে আসি। সঙ্গে সঙ্গেই লোকজন সাহায্য করতে ছুটে আসেন।’’

আপাতত কিছু দিন আশ্রয় শিবিরই ভরসা মেলাবাগান বস্তির বাসিন্দাদের। সকলেই চান, একসঙ্গে বস্তিতে ফিরতে। স্থানীয় যুবক বিকি সাহার কথায়, ‘‘সবাই নিজের মতো করে একে অন্যের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বস্তির ছেলেরা ঝুঁকি নিয়ে সিলিন্ডার বার করেছেন। দেখা যাক, কত দিনে পরিস্থিতি ঠিক হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Fire Accident Dum Dum Fire
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy