আইএসপিডি।
অসুখ শারীরিক না কি সামাজিক! চর্মরোগে আক্রান্ত পাঁচ মাসের শিশু ও চুয়ান্ন বছরের প্রৌঢ়ার প্রতি এ শহরের ব্যবহার সেই প্রশ্নই তুলে দিল।
চর্মরোগ নিয়ে সমাজের ভ্রান্ত ধারণার জেরে রোগীরা কী ধরনের মানসিক চাপের শিকার হন, শনিবার রোটারি সদনে তা নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল ‘ইন্ডিয়ান সোসাইট ফর পেডিয়াট্রিক ডার্মাটোলজি’ (আইএসপিডি)। সেখানে ‘ইকথাইয়োসিস’-এ আক্রান্ত, হুগলির বাসিন্দা পাঁচ মাসের একটি শিশুর মায়ের অভিজ্ঞতা শুনে শিউরে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ। ইকথাইয়োসিস একটি জিনঘটিত চর্মরোগ। এই রোগে গায়ের চামড়া ফেটে যায়। চামড়ার মৃত কোষগুলি উঠতে শুরু করলে তা বীভৎস আকার ধারণ করে। সন্তানের চিকিৎসার জন্য হুগলি থেকে হাজরায় আসতেন ওই শিশুটির মা। এ দিন শিশুটির
চিকিৎসক তথা আইএসপিডি-র সভাপতি সন্দীপন ধর জানান, অসুস্থ শিশুটির বীভৎস রূপ দেখে মাকে অটোয় বসাতে চাইতেন না চালকদের একাংশ। সন্দীপনবাবুর কথায়, ‘‘রোগটা ছোঁয়াচে ভেবে কয়েক জন অটোচালক এই ব্যবহার করতেন। দিনের পর দিন সেটা ঘটেছে।’’ সেই শিশু এখন সুস্থ হয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।
পাঁচ মাসের শিশুটির ওই অভিজ্ঞতার সঙ্গে যোগসূত্র তৈরি হয় ৫৪ বছরের এক প্রৌঢ়ার। যাবতীয় জড়তা ভেঙে শিয়ালদহের ওই বাসিন্দা জানান, দীর্ঘ আট বছর ধরে ‘প্রুরিগো’ রোগে ভুগছেন তিনি। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে দেখিয়েছেন। কিন্তু রোগ সারছে না। এই রোগে চামড়ার কোনও জায়গা চুলকোলে কিছু ক্ষণ পরে তা থেকে রক্ত বার হয়। এক সময়ে চুলকানো জায়গার চারপাশে কালো দাগ হয়ে যায়। খবরের কাগজে এমন একটি সভার কথা জেনে ছুটে এসেছিলেন প্রৌঢ়া। আগমনের কারণ সেই সামাজিক বিড়ম্বনা। ওই মহিলার কথায়, ‘‘সব সময়ে ফুলহাতা জামা পরে থাকি। হাতের দিকে তাকালেই সবাই অস্বস্তিকর প্রশ্ন করেন। কত আর উত্তর দেব!’’
শুধু ইকথাইয়োসিস বা প্রুরিগো নয়। শ্বেতী ও সোরিয়াসিসের ক্ষেত্রেও ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে বলে মত চিকিৎসক রঘুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই ধারণার মূলে আঘাত করতে চিকিৎসক রাজীব মালাকার বলেন, ‘‘শ্বেতী বংশগত রোগ নয়। ছোঁয়াচে তো কখনওই নয়। এই রোগ শরীরের ভিতরের কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে না। এটি চামড়ার একটি সীমাবদ্ধ অসুখ। যা শরীরের ভিতরকার কোষের বিকৃতির জন্য হয়। থাইরয়েড, ডায়াবিটিস, ব্লাড প্রেসারের মতো শ্বেতী কেবলই একটা অসুখ।’’
সন্দীপনবাবু জানান, সারা দেশে শ্বেতীতে আক্রান্তের সংখ্যা দু’কোটি। সোরিয়াসিসে আক্রান্ত সাড়ে চার কোটি। এগজিমায় আক্রান্তের সংখ্যা আট কোটি। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘যত দ্রুত দৃষ্টিভঙ্গির বদল ঘটবে, ততই মঙ্গল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy