Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

একটি টায়ারেই চার হাজার এডিসের লার্ভা! 

পড়ে থাকা বাতিল টায়ার নিয়ে একাধিক বার সতর্ক করেছে কলকাতা পুরসভা। ডেঙ্গি সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাতিল টায়ার কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, এত দিন সেই তথ্য ছিল না কারও কাছেই।

বিপজ্জনক: রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পুরনো টায়ারে জমেছে জল (চিহ্নিত)। সেই জলে থিকথিক করছে মশার লার্ভা (ইনসেটে)। উত্তর হাওড়ার কালী মজুমদার লেনে। ফাইল চিত্র

বিপজ্জনক: রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পুরনো টায়ারে জমেছে জল (চিহ্নিত)। সেই জলে থিকথিক করছে মশার লার্ভা (ইনসেটে)। উত্তর হাওড়ার কালী মজুমদার লেনে। ফাইল চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই 
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৫:৩০
Share: Save:

একটি বাতিল টায়ারেই কয়েক হাজার এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা! শহর জুড়ে তবে কত? সাম্প্রতিক এক গবেষণায় উঠে আসা এই তথ্যই কপালে ভাঁজ ফেলেছে গবেষকদের।

পড়ে থাকা বাতিল টায়ার নিয়ে একাধিক বার সতর্ক করেছে কলকাতা পুরসভা। ডেঙ্গি সংক্রমণের ক্ষেত্রে বাতিল টায়ার কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, এত দিন সেই তথ্য ছিল না কারও কাছেই। শুধু বলা হত, টায়ারে জমে থাকা জলে ডেঙ্গির জীবাণুবহনকারী মশা অবাধে বংশবিস্তার করে। তবে সেই বংশবিস্তার কতটা বিপজ্জনক, তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিলই। এ বার বাতিল টায়ার নিয়ে রাজ্যের একটি গবেষণায় উঠে আসা তথ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন গবেষকেরা। তাঁদের কথায়, বাতিল টায়ারের জমা জলে যে পরিমাণ মশার লার্ভা জন্মাতে পারে, তা অবাক করে দেওয়ার মতোই। সেখানে তো শহর জুড়ে পড়ে রয়েছে হাজার হাজার বাতিল টায়ার।

গত বছরই বাতিল টায়ারের জমা জল নিয়ে গবেষণা চালানো হয়েছিল। চলতি বছরে আন্তর্জাতিক একটি গবেষণাপত্রে সেই তথ্য প্রকাশিতও হয়েছে। সেই পরীক্ষার জন্যে বাস এবং ট্রাকের টায়ার বেছে নিয়েছিলেন গবেষকেরা। মোট দু’টি ধাপে ওই পরীক্ষা করা হয়েছিল। একটি পরীক্ষার ক্ষেত্রে বৃষ্টির জল ব্যবহার হয়েছিল। দ্বিতীয় পরীক্ষায় পুকুরের জল ব্যবহার করা হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, ওই মাপের একটি টায়ারে ১৩-১৫ লিটার জল জমতে পারে। এক মাস সময়সীমার মধ্যে ও রকম একটি টায়ারে জমে থাকা বৃষ্টির জলে প্রায় চার হাজার এডিস ইজিপ্টাইয়ের লার্ভা জন্মেছিল, তার মধ্যে কয়েকটি পিউপাও ছিল। ওই টায়ারে পুকুরের জল রেখে যে পরীক্ষা করা হয়েছিল, তাতে লার্ভার সংখ্যা কিছুটা কম হলেও তা ছিল প্রায় সাড়ে সাতশোর মতো! গবেষকদের মতে, অর্থাৎ একটি টায়ার থেকেই চার হাজার ডেঙ্গির মশা জন্মাচ্ছে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে পরিত্যক্ত টায়ার ডেঙ্গি ছড়ানোর আঁতুড়।

ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত মশা গবেষক রাজেশ কুমার মল্ল বলছেন, ‘‘ছোট গাড়ির টায়ার নিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানেও প্রায় দেড় হাজার এডিসের লার্ভা জন্মাতে দেখেছি।’’ আরও এক গবেষক কৌশিক মণ্ডল বলছেন, ‘‘এক জায়গায় যদি ১০টি টায়ার পড়ে থাকে, তা হলে পরীক্ষা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেখানের জমা জলে কমপক্ষে ৪০ হাজার এডিস জন্মাতে পারে! তবেই ভাবুন, বাতিল টায়ার কতটা বিপজ্জনক।’’ অন্য গবেষক মানালি দত্ত আবার জানাচ্ছেন, বংশবিস্তারের জন্য এডিস অ্যালবোপিকটাসের পছন্দ গাছের কোটর বা বাঁশের খোপের জমা জলের মতো প্রাকৃতিক আধার (ন্যাচারাল কন্টেনার)। এডিস ইজিপ্টাইয়ের আবার পছন্দ পড়ে থাকা প্লাস্টিকের পাত্র, ব্যাটারির খোল, পরিত্যক্ত টায়ারের মতো কৃত্রিম আধার (আর্টিফিশিয়াল কন্টেনার)।

এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) ডেঙ্গি প্রতিরোধকারী কর্মসূচির পরামর্শদাতা পতঙ্গবিদ গৌতম চন্দ্র জানাচ্ছেন, টায়ার-বিপদ এড়ানোর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমত, জল যাতে না জমে বাতিল সব টায়ার একটি ছাউনির নীচে রাখতে হবে। দ্বিতীয় পদ্ধতি, রাস্তায় পড়ে থাকা টায়ার ছাউনির নীচে রাখা না গেলে কয়েকটি পরপর সাজিয়ে সবগুলিকে প্লাস্টিক দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তৃতীয় পদ্ধতিতে টায়ারে ছিদ্র করে রাখতে হবে। যাতে বৃষ্টির জল পড়লেও তা টায়ারে না জমে বেরিয়ে যেতে পারে। গৌতমবাবুর কথায়, ‘‘একটি কথা মাথায় রাখতে হবে, বংশবিস্তারের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে বাতিল টায়ার কিন্তু এডিস ইজিপ্টাইয়ের খুব পছন্দ। ফলে এ দিকে নজর না দিলে কিন্তু ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত কোনও ভাবেই ঠেকানো যাবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Dengue Aedes mosquito Larvae Tire KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE