Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Hoardings

হোর্ডিংয়ে বাড়ছে দূষণ, অসুখ সারবে কবে

মুখ ঢেকেছে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ে। দৃশ্যদূষণের এই ছবি দীর্ঘদিনের। দিন দিন দমদমে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৃশ্যদূষণও বাড়ছে বলে অভিযোগ।

হোর্ডিংয়ে মুখ ঢেকেছে দমদম।

হোর্ডিংয়ে মুখ ঢেকেছে দমদম। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য

কাজল গুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৯
Share: Save:

গোটা দমদম এলাকার মুখ ঢেকেছে বিজ্ঞাপনী হোর্ডিংয়ে। দৃশ্যদূষণের এই ছবি দীর্ঘদিনের। দিন দিন দমদমে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দৃশ্যদূষণও বাড়ছে বলে অভিযোগ। অথচ দক্ষিণ দমদম বা দমদমে আগে সৌন্দর্যায়ন এবং সবুজায়নের বহু চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু হোর্ডিংয়ের বাড়বাড়ন্ত সেই সৌন্দর্য অনেকাংশেই নষ্ট করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

পুরসভার অন্দরে কান পাতলে এ-ও শোনা যায়, হোর্ডিংয়ের সংখ্যার তুলনায় সমপরিমাণ রাজস্ব পুর কোষাগারে জমা পড়ে না। ফলে রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে জেনেও পুর প্রশাসন কেন এত দিন পদক্ষেপ করেনি, সেই প্রশ্নও উঠছে।

নাগেরবাজার মোড়, দমদম স্টেশন সংলগ্ন এলাকা, পি কে গুহ রোড, নির্মল সেনগুপ্ত সরণি, যশোর রোড, লেক টাউন থেকে পাতিপুকুর— সর্বত্রই হোর্ডিং-চিত্রটা এক। দমদম ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার অবশ্য দাবি, বিদায়ী বোর্ড একাধিক বার অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু কিছু দিন পরে ফের যে কে সেই! স্থানীয় বাসিন্দা কমল দাসের কথায়, ‘‘হোর্ডিংয়ের সঙ্গে আর্থিক বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। শহরের দৃশ্যদূষণ করে এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এ ভাবে চলতে দেওয়া যায় না।’’

যদিও বিরোধীদের বক্তব্য, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে হোর্ডিং বসানো হচ্ছে জেনেও পুর কর্তৃপক্ষ হয় কিছু করতে পারেননি, অথবা নজরদারির পরিকাঠামোই তাঁদের নেই। যদিও দমদম পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান হরিন্দর সিংহের দাবি, হোর্ডিং সমস্যার জন্য নজরদারি তো বটেই, প্রয়োজনে অভিযানও চালানো হয়। পুর এলাকায় একাধিক বার হোর্ডিং-বিরোধী অভিযানের কথা বলছেন দক্ষিণ দমদমের বিদায়ী পুরকর্তাদের একাংশও। তবে তার পরেও সারেনি ‘অসুখ’।

বামেরা আবার হোর্ডিং নিয়ে স্বচ্ছতার প্রশ্নও তুলেছেন। সিপিএম নেতা দেবশঙ্কর রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘কাকে হোর্ডিং দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন করেও সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা যায় না। পুর রাজস্বের একটি বড় জায়গা হল হোর্ডিং বাবদ আয়। সেই আয় কমে গেলে আখেরে পরিষেবাতেই প্রভাব পড়ে।’’ কংগ্রেস নেতা তাপস মজুমদারও বলছেন, ‘‘এই সমস্যা রয়েছে গোটা দমদমেই। এ বিষয়ে স্বচ্ছতা আসুক। পাশাপাশি, শহরকে দূষিত না করে শৃঙ্খলায় বাঁধা হোক গোটা হোর্ডিং ব্যবস্থাকে।’’

বিজেপি নেতা অরিজিৎ বক্সীর মতে, ‘‘রাজ্যের শাসকদল কর্মসংস্থানের কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। তাই যত্রতত্র হোর্ডিংয়ের মাধম্যেই ছেলেদের ব্যবস্থা করে দিতে হচ্ছে। তাতে শহরের দৃশ্য দূষিত হবে আর পুরসভার আয় বাড়বে না, এটাই তো স্বাভাবিক।’’ যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব এই অভিযোগ খারিজ করে জানাচ্ছেন, বাম আমল থেকেই এ সমস্যা রয়েছে। বরং বর্তমানে এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে বিদায়ী পুর বোর্ড। দমদম পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বরুণ নট্ট বলছেন, ‘‘যশোর রোড থেকে শুরু করে একাধিক রাস্তায় ছোট-বড় এমন হোর্ডিংয়ের জেরে বাতিস্তম্ভেরও ক্ষতি হয়। ব্যবসায়ীদের থেকে বকেয়া আদায় করতে অভিযান চালানো হয়েছিল। তার পরেও একাংশের হুঁশ ফেরেনি।’’ আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি পুর এলাকায় ভোট। তার পরে নতুন পুর বোর্ড এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন বরুণ। তবে এই আশ্বাসে ভরসা নেই স্থানীয়দের। তাঁদের মতে, ভোটের আগে এমন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় প্রতি বারই।

দক্ষিণ দমদমের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী কেয়া দাস বলছেন, ‘‘হোর্ডিং বাবদ ব্যবসায়ীদের থেকে বকেয়া আদায়ের কাজ আগেই শুরু হয়েছে। হোর্ডিংয়ের কারণে দৃশ্যদূষণ রুখতে বিদায়ী পুর বোর্ড কাজ শুরু করেছিল। আগামী পুর বোর্ড নিশ্চিত ভাবে সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।’’ তবে হোর্ডিংয়ের তুলনায় সেই বাবদ জমা পড়া রাজস্ব যে অনেকটাই কম, তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন দক্ষিণ দমদমের প্রাক্তন চেয়ারম্যান। তাঁর কথায়, ‘‘হোর্ডিং সংক্রান্ত খাতে কয়েক কোটি টাকা আয় হতে পারত, কিন্তু হয়নি। বকেয়া আদায়ের চেষ্টা করে কয়েক লক্ষ টাকা আয় হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hoardings Pollution dumdum Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy