E-Paper

৪২ থেকে এখন অবশিষ্ট দু’টি, নির্বিচারে পুকুর ভরাট গার্ডেনরিচের সেই ওয়ার্ডের সর্বত্রই!

অতীতে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফোন করে বন্দর এলাকার বাসিন্দারা একাধিক বার পুকুর বুজিয়ে ফেলা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। এমনকি, এক নাগরিক মেয়রকে ফোনে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, তিনি সরাসরি অভিযোগ করায় তাঁর উপরে হামলা হতে পারে।

An image of building

একযোগে: জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উদ্ধারকাজের পাশাপাশি গার্ডেনরিচের সেই বহুতলে ভাঙার কাজ করছেন পুরসভার কর্মীরা। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৭:২০
Share
Save

সংখ্যাটা ছিল ৪২। এখন মোটে ২!

গত রবিবার মধ্যরাতে কলকাতা পুরসভার ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে, গার্ডেনরিচের ফতেপুরের আজহার মোল্লা বাগানে ভেঙে পড়া নির্মীয়মাণ বহুতলটি পুকুর বুজিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বলে স্বীকার করেছেন স্থানীয় ১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল। এ দিকে, যাদবপুর
বিশ্ববিদ্যালয়ের জলসম্পদ বিভাগ ও রাজ্য সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের যৌথ উদ্যোগে কলকাতা শহরে পুকুর-সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। সেই সমীক্ষার চূড়ান্ত রিপোর্টও সম্প্রতি পুরসভার পরিবেশ বিভাগের কাছে পৌঁছেছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, কলকাতা বন্দর এলাকায় পুকুর ভরাটের সংখ্যা সর্বাধিক। ২০০৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকার পাঁচটি ওয়ার্ডে ২৭০টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে! যার মধ্যে বর্তমানে চর্চার কেন্দ্রে থাকা ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ৪০টি পুকুর রয়েছে। পুরসভার পরিবেশ বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বর্তমানে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে মাত্র দু’টি পুকুর।

গার্ডেনরিচের ফতেপুরের আজহার মোল্লা বাগানে রবিবার গভীর রাতে একটি নির্মীয়মাণ পাঁচতলা বাড়ি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে। এই ঘটনার পরে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে জনপ্রতিনিধি, সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, পুকুর বুজিয়ে তৈরি হচ্ছিল
বলেই ওই বহুতলটি তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, আজহার মোল্লা বাগানের বেশির ভাগ বাড়িই পুকুর ভরাট করে তৈরি করা হয়েছে। সেই কারণে রবিবারের দুর্ঘটনার পরে ওই তল্লাটের বেশির ভাগ বহুতল আবাসনের বাসিন্দারাই আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে পুকুর বোজানোর কথা স্বীকার করে বরো চেয়ারম্যান বুধবার বলেন, ‘‘পুকুর ভরাট যে হয়েছে, তা স্বীকার করছি। আমাদের আমলেও হয়েছে। তবে, বাম আমলে ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের ছোট ছোট অনেক ডোবা অবাধে ভরাট করে বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল।’’

অতীতে ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে ফোন করে বন্দর এলাকার বাসিন্দারা একাধিক বার পুকুর বুজিয়ে ফেলা নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। এমনকি, এক নাগরিক মেয়রকে ফোনে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, তিনি সরাসরি অভিযোগ করায় তাঁর উপরে হামলা হতে পারে। মেটিয়াবুরুজের ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত নাদিয়ালে এক বার পুকুর ভরাটের কাজ আটকাতে যাওয়ায় পুরসভার এক সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে ঘেরাও করে মারধর করা
হয় বলেও অভিযোগ। ওই ইঞ্জিনিয়ার পুলিশকে ফোন করে কোনও মতে প্রাণে বাঁচেন। শুধু তা-ই নয়, পুকুর-সমীক্ষার কাজ শহরের অন্যান্য জায়গায় শেষ হলেও দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দাদের বাধায় সেই কাজ করতে বন্দর এলাকায় ঢুকতেই পারছিলেন না যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জলসম্পদ বিভাগ ও রাজ্য তথ্যপ্রযুক্তি দফতরের গবেষকেরা। শেষমেশ পুরসভা অনেক কষ্টে পুলিশবাহিনী দেওয়ায় সমীক্ষার কাজ শেষ হয়।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজ্য সরকারের ওই যৌথ সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, শহরে প্রায় সাড়ে ছ’হাজার জলাশয় রয়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ জলাশয়েরই আয়তন কমে গিয়েছে। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০৪ সালের পর থেকে গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪০টি, ১৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে ৫০টি, ১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৬৩টি, ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি ও ১৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ৮৫টি পুকুর বুজিয়ে ফেলা হয়েছে। পুরসভার পরিবেশ বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘২০০৪ সালের উপগ্রহ চিত্রে শহরের বিভিন্ন এলাকায় যে সমস্ত পুকুর ও জলাশয়ের অস্তিত্ব ধরা পড়েছিল, তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের উপগ্রহ চিত্র মিলিয়ে দেখা হয়েছে। তাতেই ধরা পড়ে, সারা শহরের মধ্যে বন্দর এলাকা পুকুর ভরাটের নিরিখে শীর্ষে রয়েছে। যা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Garden Reach Building Collapse Garden Reach Illegal Constructions Pond Filling

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।