বেআইনি: পরিবেশ আদালতের কড়া নির্দেশ সত্ত্বেও আদিগঙ্গার পাড়ে ফের গজিয়ে উঠেছে খাটাল। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ
মামলা শুরু হওয়ার দেড় বছরের মাথায় কলকাতা পুরসভা জানিয়েছিল, জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে আদিগঙ্গার দু’পাড় থেকে সব খাটাল এবং শুয়োরের আস্তানা সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুরসভার অভিযানের পরেও যে সব খাটাল এবং আস্তানা আগের জায়গায় ফিরেছিল, তাদেরও ফের সেখান থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের নভেম্বরে পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছিল,—‘এটা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার যে, খাটাল এবং শুয়োরের আস্তানা যেন কোনও ভাবেই নদীর পাড়ে ফিরতে না পারে।’
কিন্তু সেই নির্দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পরে দেখা যাচ্ছে, আদিগঙ্গার দু’পাড়ে বেআইনি জবরদখল তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে খাটাল ফিরেছে ‘সগৌরবে’। প্রসঙ্গত, আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবনে তার দু’পাড়ে কংক্রিটের নির্মাণ ও সৌন্দর্যায়নের জন্য সম্প্রতি দরপত্র ডেকেছে হিডকো। আর প্রস্তাবিত সেই নির্মাণের সূত্র ধরেই ফের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে আদিগঙ্গা। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ওই নির্মাণ বাস্তবায়িত হলে এমনিতেই ধুঁকতে থাকা এই নদীর আয়ু আরও কমবে। নদী বিশেষজ্ঞ সুপ্রতিম কর্মকার বলছেন, ‘‘একেই আদিগঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তার উপরে নির্মাণ হলে এর অস্তিত্ব নিয়েই সংশয় দেখা দেবে।’’
অথচ, ২০১৫ সালে মামলা দায়ের হওয়ার প্রথম শুনানিতেই পরিবেশ আদালত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় পুরসভাকে আদিগঙ্গার দু’ধার থেকে বেআইনি দখলদার সরানোর নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে অপরিশোধিত তরল এবং কঠিন বর্জ্য যাতে নদীতে না মেশে, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করার কথা বলেছিল। কিন্তু তার সাত বছর পরেও দেখা যাচ্ছে, আদিগঙ্গা রয়েছে আদিগঙ্গাতেই!
এই মামলায় আদালতবান্ধব হিসাবে কাজ করা পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানাচ্ছেন, ২০১৫-’১৬ সালের তুলনায় আদিগঙ্গার বর্তমান অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। বাস্তব পরিস্থিতি ঠিক কেমন, তা সরেজমিনে বৃহস্পতিবার পরিদর্শন করেন সুভাষবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘নদীর দু’পাড়ে জবরদখল, খাটালের ফিরে আসা, জলে আবর্জনা-অপরিশোধিত তরল বর্জ্য পড়া— সবই পুরোদমে চলছে। উপরন্তু, আদিগঙ্গার উপরে কংক্রিটের কাঠামো তৈরি হলে জলের প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’
যদিও কলকাতা পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবব্রত মজুমদার বলছেন, ‘‘সব খাটাল, শুয়োরের আস্তানা সরানো হবে।’’
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে মামলার নিষ্পত্তি করে নদীর দূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং পুনরুজ্জীবনের জন্য যা যা করণীয়, সেগুলি সুনিশ্চিত করতে একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। রাজ্য পরিবেশ দফতর, সেচ দফতর, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-সহ একাধিক দফতর ও সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব। কলকাতা পুরসভা ছিল তার নোডাল এজেন্সি।
ওই কমিটি কি কাজ করছে?—আদিগঙ্গার দু’পাড়ের বেআইনি জবরদখল, খাটাল ফিরে আসার চিত্রে অন্তত সেই দাবির সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy