আলিমা রহমান। নিজস্ব চিত্র।
‘ওম শান্তি ওম’-এ শাহরুখ খানের সেই ঝকঝকে সুপারবাইক দেখে প্রেমে পাগল সদ্য কিশোরীটি। সেই মোটরবাইক না-চালালে জীবনটাই বৃথা মনে হচ্ছে। হিজাবে মাথার চুলগুলো শাসন করে তার উপরে হেলমেট চাপিয়ে বাবা এবং দাদার সাহচর্যেই শুরু হল তার বাইকের তালিম। এখন একুশ পেরিয়ে ডাকাবুকো ‘সুপারবাইকার’ হিসাবে এ শহরে চেনা মুখ আলিমা রহমান।
ঢলঢলে জিনস, টি-শার্টের সঙ্গে কেতাদুরস্ত ভঙ্গিতে নিজের মাথা ঢাকেন। সাজের সঙ্গে মানানসই হেলমেটও তৈরি করে নিয়েছেন। ফুরফুরে হেসে আলিমা বলেন, ‘‘হিজাবধারিণী মানেই বেচারি বা পরাধীন ভাববেন না! নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস, পারিবারিক সংস্কার মেনে হিজাব পরা বা মাথা ঢেকে রাখায় আমি অভ্যস্ত। আবার সুপারবাইকের নেশা রক্তে দোলা দেয়, বাইকে তরতরিয়ে এগিয়ে চলার স্বাধীনতাটাও আমি দারুণ উপভোগ করি। দুটোর মধ্যে বিরোধ নেই।’’ একদা লা মার্টিনিয়ার স্কুলের ছাত্রী এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ছেন। পড়াশোনার ফাঁকে নগর দেওয়ানি আদালতে নিয়ম করে প্র্যাক্টিসও করেন। কর্নাটকের মাণ্ড্যের কলেজটিতে হিজাবধারিণী তরুণীকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা এবং তাঁর রুখে দাঁড়ানো আলিমাকেও নাড়া দিচ্ছে।
বাড়ির বাইরে হিজাবে মাথা ঢেকে চলাফেরায় অভ্যস্ত কলকাতা-কন্যের কথায়, ‘‘রাজনৈতিক কারণেই হিজাবধারিণীদের পরিকল্পিত ভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে। এ দেশের সাধারণ মানুষের মুসলিমদের প্রতি মোটেই বিদ্বেষ নেই।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হিজাব দেখে আমাকেও অনেকেই নানা প্রশ্ন করেন। এ সব প্রশ্ন এড়াতে নেই। আমি ঠান্ডা মাথায়, বুঝিয়ে বলি, এটাই আমার অভ্যাস। এবং হিজাব ছাড়া ঘোরাঘুরিতেই বরং অস্বস্তি হয়।’’
কলকাতার কিছু স্কুলে কোনও ছাত্রীকে পোশাক নিয়ে জড়তায় স্কার্টের নীচে পাজামা পরতে দেখা গিয়েছে, বা শিখ ছাত্রেরা পাগড়ি মাথায় স্কুলে এসেছেন। তবে পোশাক সংক্রান্ত বিতর্ক বিরল। শিক্ষাবিদ দেবী কর বলছিলেন, ‘‘আমরা স্কুলে নির্দিষ্ট পোশাক-বিধি মেনে চলি। কিন্তু স্কুলের পরিবেশে ধর্ম-নির্বিশেষে কোনও ছাত্রীরই নিয়ম মানতে অসুবিধা হয়নি।’’ হিজাব-বিতর্কে তিনি বলছেন, ‘‘পোশাক-বিধি না-থাকলে হিজাব পরা বা না-পরাটা একদমই নিজের ব্যাপার! এখন ইচ্ছে করে বিষয়টা জটিল করা হচ্ছে।’’ আলিমা বলছিলেন, স্কুলে বরাবরই ‘ইউনিফর্ম’ পরেই তিনি ক্লাস করেছেন। কিন্তু স্কুলের বাইরের বৃহত্তর জগতে হিজাবে স্বচ্ছন্দ। তাঁর বন্ধুরাও (যাঁদের অনেকেই অমুসলিম) তাঁকে এ ভাবেই দেখতে অভ্যস্ত। আলিমার কথায়, ‘‘আমার কয়েক জন মুসলিম বান্ধবীও মদ, সিগারেট খায়। এটা একান্তই তাদের বিষয়। আমি সেটা না-করলেও তাদের সঙ্গে ঘুরি, আড্ডা মারি। ওদের ঠিক-ভুল বিচার করি না। হিজাবে মাথা ঢাকাটা আমারও নিজের মতো থাকার অধিকার।’’
কোনও কোনও মুসলিম রাষ্ট্রে হিজাবের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ হয়েছে। হিজাবধারিণীরা আবার অলিম্পিক্সের নানা ইভেন্টে যাচ্ছেন। কলকাতার রাজাবাজারে নারীত্বের চিরকেলে ছক ভাঙতে ফুটবলও খেলেছেন হিজাব পরা মেয়েরা। হিজাবের জন্য মেয়েদের কোনও সুযোগ থেকে বঞ্চিত করার বৈষম্যের বিরুদ্ধেই যেন রুখে দাঁড়াচ্ছেন পাঁচ ফুট ন’ইঞ্চির সুপারবাইকার আলিমাও। দাদার গ্যারাজের বিভিন্ন বাইকে চড়েন। ধর্ম-নির্বিশেষে ছোট মেয়েদের দু’চাকার গাড়ি চালাতে শেখান আলিমা। গত নারী দিবসে মেয়েদের সঙ্গে ১০০০ সিসি-র বাইকে অভিনব নৈশ সফরেও গিয়েছিলেন তিনি। যখন নতুন বাইক চালাতে শিখছিলেন, তখন বা এখনও হিজাবি মেয়েকে ওভারটেক করে বা পথ আটকে কেউ কেউ জ্বালাতেও চেয়েছেন। সাধারণত আমল দেন না আলিমা। তবে গতিতে ছেলেদের টেক্কা মেরে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে নিজেকে পাখি-পাখি মনে হয় তাঁর। পোশাক তাঁর ডানা ছাঁটতে পারেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy