প্রাক্-পুজো বিশেষ শোভাযাত্রায় শামিল সেই প্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
যাওয়ার কথা ছিল সুদূর ম্যাঞ্চেস্টার। সেই মতো প্রতিমা তৈরিও প্রায় হয়ে গিয়েছিল। আচমকা সেখানকার উদ্যোক্তারা জানান, সাবেকের বদলে এ বার থিমের প্রতিমা ঘরে আনতে চাইছেন তাঁরা। ফলে বিদেশ যাওয়া আর হয়ে ওঠেনি ফাইবারের তৈরি একচালার মূর্তির। এর পরে স্থির হয়, এ বারের পুজোয় শহরের একটি মণ্ডপে রাখা হবে ওই প্রতিমা। সেই পুজোর থিমের সঙ্গে নাকি এই সাবেক প্রতিমা ভাল খাপ খাচ্ছে!
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি। হঠাৎ করেই ইউনেস্কোর স্বীকৃতি-শোভাযাত্রায় যাওয়ার সুযোগ হয়ে যায় প্রতিমাটির। তবে সেখান থেকে সরাসরি পুজো কমিটির মণ্ডপে ফেরার কথা থাকলেও আর তেমনটা হচ্ছে না বলেই খবর। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের পছন্দ হয়ে যাওয়ায় সাত ফুট লম্বা এবং প্রায় সাত ফুট চওড়া সেই দুর্গা প্রতিমার পাকাপাকি ঠিকানা হতে চলেছে সরকারি সংগ্রহশালা।
দুর্গাপুজোকে হেরিটেজ তকমা দেওয়ার পরে গত ১ সেপ্টেম্বর প্রাক্ পুজো বিশেষ শোভাযাত্রা হয়েছিল কলকাতার রাজপথে। সেখানে বেশ কয়েকটি পুজো কমিটির সদস্যদের দুর্গা, শিব সেজে হাঁটতে দেখা যায়। মাটির প্রতিমা নিয়েও হেঁটেছিলেন অনেকে। তবে শোভাযাত্রার একেবারে শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঠিক পিছনেই থাকা, লাল পেড়ে সাদা শাড়ির দুর্গা প্রতিমা নজর কেড়েছিল সে দিন। শোভাযাত্রায় সেটিই হয়ে উঠেছিল অন্যতম আকর্ষণ।
সেই মূর্তি তৈরির গল্পও কম আকর্ষণীয় নয়। ফাইবারের তৈরি ওই সাবেক প্রতিমার উপরে করা হয়েছিল মাটির রং। কুমোরটুলির শিল্পী সুবল পালের কাছে কয়েক মাস আগে এমন প্রতিমা তৈরির বরাত আসে ম্যাঞ্চেস্টার থেকে। কাজ প্রায় শেষ যখন, তখনই হঠাৎ মত বদলান প্রবাসী বাঙালিরা। ফলে প্রতিমা থেকে যায় কুমোরটুলিতেই।
এর পরে উত্তর কলকাতার জগৎ মুখার্জি পার্কের প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব আসে সুবলের কাঁধে। ঘটনাচক্রে সেখানে এ বারের থিম ‘বর্ষামঙ্গল’। উদ্যোক্তাদের দাবি, সেখানে এমন আবহ তৈরি করা হচ্ছে যে মণ্ডপে আগত দর্শনার্থীদের ছাতা খুলে দাঁড়ানোর কথা মনে হতে পারে। সেই থিমের সঙ্গে মানিয়েই ম্যাঞ্চেস্টারের বরাত দেওয়া ওই প্রতিমা রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ফাইবারের তৈরি প্রতিমা বৃষ্টিতে ভিজবে না— সেটাই পছন্দের ক্ষেত্রে বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বিশেষ শোভাযাত্রার দিন দুয়েক আগে এই পরিকল্পনাতেও পরিবর্তন আসে। শোভাযাত্রার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা সংস্থা এমন প্রতিমার খোঁজ শুরু করে, বৃষ্টিতে যার কোনও ক্ষতি হবে না। তখনই সুবলের তৈরি এই প্রতিমার কথা কানে আসে ওই সংস্থার কর্তাদের। সেই প্রতিমাই শোভাযাত্রায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করানো হয় জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজোকর্তাদের। তবে তাঁদের ধারণা ছিল, শোভাযাত্রার শেষে প্রতিমা ফিরবে তাঁদের পুজোমণ্ডপে। তা আর হল না। শোভাযাত্রায় নজরকাড়া ওই প্রতিমাটিই রেখে দেওয়ার নির্দেশ দেন প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকেরা। আপাতত তার ঠাঁই হয়েছে নন্দনে। পরে সেটিকে শহরের কোথাও বসানো হতে পারে বলে খবর।
শিল্পী সুবল জানান, এমন প্রতিমা তৈরি করে বিদেশে পাঠানোর খরচ অনেকটা বেশি। তার দাম হিসাবে তাই লাখ দেড়েক টাকা নেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রতিমা তৈরির খরচ নিয়ে আর ভাবছেন না তিনি। সুবলের কথায়, ‘‘এটা এক অনন্য সম্মান। যে প্রতিমা নিয়ে এত কিছু, সেই শিল্পকীর্তি সরকারি সম্মান পাচ্ছে। আর কী চাই!’’ আর জগৎ মুখার্জি পার্কের পুজো উদ্যোক্তা দ্বৈপায়ন রায় বললেন, ‘‘সরকারি কাজে প্রতিমা দেওয়ার ব্যাপারে কী আর না করা যায়? আমরাও মিছিলে ওই প্রতিমাটিই নিয়ে যাব ভেবেছিলাম। তবে প্রতিমারনীচে আমাদের পুজোর নামটা থাকলে ভাল লাগত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy