পুত্র-কন্যাকে নিয়ে এখন অমরকন্টক বেড়াতে গিয়েছেন রত্না।জানালেন, শোভনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে নাকি কিছুই জানা নেই তাঁর।
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে বিজেপির হয়ে ময়দানে নামছেন শোভন-বৈশাখী জুটি। সোমবার খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ রোড থেকে শুরু হবে গেরুয়া শিবিরের বাইক র্যালি। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় সেই রোড-শোয়ে অংশ নিলেও, এই কর্মসূচির প্রধান আকর্ষণ কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও তাঁর বান্ধবীই। তবে শোভন বেহালার পূর্বের বিধায়ক হলেও সেই র্যালি ওই এলাকায় যাচ্ছে না। কাছাকাছি গিয়েও অন্য রাস্তা ধরে নেবে। সেই কর্মসূচির ২৪ ঘণ্টা আগে কটাক্ষের সুর শোভন-জায়া রত্না চট্টোপাধ্যায়ের মুখে। বললেন, ‘‘ওঁকে র্যালি নিয়ে বেহালায় আসতে অনুরোধ করুন। যদি বেহালায় আসতেন, তা হলে ওঁকে আমরা স্বাগতম জানাতে পারতাম।’’
পুত্র-কন্যাকে নিয়ে এখন অমরকন্টক বেড়াতে গিয়েছেন রত্না।জানালেন, শোভনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে নাকি কিছুই জানা নেই তাঁর। সবটা শোনার পরে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, ‘‘বেহালার মানুষ ওঁকে ভোট দিয়েছিলেন। আর সেই বেহালার মানুষকেই ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন।’’
এখানেই থামেননি রত্না। শেষ পর্যন্ত বিজেপির হয়ে শোভন পথে নামবেন কি না, তা নিয়ে এখনও সন্দেহ রত্নার মনে। বললেন, ‘‘না আঁচালে বিশ্বাস নেই। আগামিকাল (সোমবার) সকালে যখন ফ্ল্যাট থেকে নেমে বিজেপির কর্মসূচিতে যোগ দিতে গাড়িতে উঠবেন তখন বুঝতে পারব উনি শুরু করলেন। অনেক নাটক তো এর আগে দেখেছি। এই হল না ওই হল,পদ দিল না।আমাকে দিল, বৈশাখীকে দিল না। এভাবেই তো দেড় দু’বছর কেটে গেল। আগে সার্দান এভিনিউয়ের ন’তলার ফ্ল্যাট থেকে নেমে গাড়িতে উঠে উনি রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করুন। তারপর না হয় বিশ্বাস করা যাবে।’’
প্রসঙ্গত,২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পর ১৪ অগস্ট বিজেপিতে যোগ দেন শোভন-বৈশাখী। তারপর রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সংবর্ধনা নিতে গিয়ে সাংগঠনিক বৈঠকে শোভনকে ডাকা হলেও, ব্রাত্য ছিলেন বৈশাখী। ওইদিনই শোভন-বৈশাখীকে ‘ডাল-ভাত’ বলে বসেন দিলীপ ঘোষ। একই দিনে জোড়া ঘটনায় রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের ওপর ক্ষুব্ধ হন তাঁরা। বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ায় তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন কলকাতার প্রাক্তন মেয়র। ভাইফোঁটার দিন কালীঘাটে পৌঁছে যান দিদির কানন, সঙ্গে বৈশাখীও। রাজ্য সরকারের ফিল্ম ফেস্টিভ্যালেও বিশেষ অতিথির আসনে দেখা যায় দু’জনকে।
রাজ্য রাজনীতিতে গু়ঞ্জন শুরু হয়,শোভনের ‘ঘর ওয়াপসি’ এখন কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। শোভন-বৈশাখী তৃণমূল নেতৃত্বকে শর্ত দেনরত্নাকে দল থেকে বহিষ্কারের। সেই শর্ত পূরণ না হওয়ায় ফের বিজেপিমুখী হন তাঁরা। এর পরে জানা যায়, এই সময়কালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা অরবিন্দ মেননের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেই চলছিলেন তাঁরা। গত নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কলকাতা সফরের সময় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন শোভন-বৈশাখী। সম্প্রতি শোভনকে বিজেপির কলকাতা জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সহ আহ্বায়ক হয়েছেন বৈশাখী। তারপরেই খিদিরপুর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্রদক্ষিণ করে বিজেপির রাজ্য দফতরে যাওয়ার কর্মসূচি নেন শোভন। তাঁর এই রোড-শো খিদিরপুর থেকে শুরু হয়ে মাঝেরহাট ব্রিজ শুরুর আগের মোড় থেকেই নিউআলিপুর এলাকার দিকে ঘুরে যাবে। সেখান থেকে ৫০০ মিটার দুরেই শোভনের ‘জন্ম ও কর্মভুমি’ বেহালা জনপদ। খাতায় কলমে এখনও শোভন বেহালা পূর্বের বিধায়ক। গত বছর কলকাতা পুরসভার মেয়াদ শেষের আগে পর্যন্ত তিনিই ছিলেন ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এই ওয়ার্ড থেকে জিতেই শোভন মেয়র হয়েছিলেন। সোমবার শোভনের র্যালি বেহালায় ঢুকবে না শুনেই রত্না বলেন, ‘‘তিন বছর বাদে নেতা এলাকায় ঢুকছেন জানলে এলাকাবাসীরাও তাঁকে ভাল করে স্বাগত জানাত।’’
প্রসঙ্গত, যেদিন দিল্লিতে শোভন বিজেপিতে যোগদান করেন,সেদিনই বেহালার এক কর্মসূচিতে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভনের দায়িত্ব রত্নার হাতে তুলে দেন প্রকাশ্যেই। সেইদিন থেকেইদলের দেওয়া দায়িত্ব পালন করে আসছেন রত্না। স্ত্রীকে দল ও দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়েও লাভ হয়নি শোভনের। বরং, তৃণমূল শিবিরে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছেন রত্না। একসময় শোভন যে অনুগামীদের নিয়ে বেহালায় রাজনীতি করতেন, তাঁদের অধিকাংশই এখন রত্নার সঙ্গে। তাই তৃণমূল শিবির মনে করছে, রোড-শো নিয়ে বেহালায় গেলে হিতেবিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই র্যালির রুট ঠিক করেছে রাজ্য বিজেপি। যদিও মিছিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি নেতা রাকেশ সিংহের দাবি, ‘‘আমরা বেহালা ছুঁয়েই র্যালি নিয়েই যাব।’’
আরও পড়ুন: ২২ কোটি টাকার মাদক ধরা পড়ল বেলগাছিয়ায়, আছে হেরোইন, ইয়াবাও
আরও পড়ুন: কলকাতায় শাটল গাড়িতে যাত্রী সেজে লুট, গ্রেফতার দুষ্কৃতীরা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy