Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

বেঁচে থাক প্রতিবাদের প্রতিস্পর্ধাটুকু

আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীর হত্যার প্রতিবাদ করতে এবং নারীর নিরাপত্তার দাবিতে কথা ছিল, এ দিন মধ্যরাতে পথে নামবেন মহিলারা। বাস্তবে দেখা গেল, অনেক আগে থেকেই রাজপথের দখল কার্যত নিয়ে নিলেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শহরবাসী।

মধ্যরাতের লড়াই: আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ। বুধবার রাতে, কলেজ স্ট্রিটে।

মধ্যরাতের লড়াই: আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ। বুধবার রাতে, কলেজ স্ট্রিটে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৪ ১০:০৩
Share: Save:

‘‘...দেখতা হুঁ জ়োর কিতনা বাজ়ু এ কাতিল মে হ্যায়’’। পরাধীন ভারতে লেখা এই গান বুধবার, স্বাধীনতার মধ্যরাতে উঠে এল কলেজ স্ট্রিটে, মেয়েদের মুখে। নারী অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার এই আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতের সঙ্গে যেন হুবহু মিলে গেল সেই গান। কলেজ স্ট্রিটের আকাশে তখন উড়ছে জাতীয় পতাকা।

আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীর হত্যার প্রতিবাদ করতে এবং নারীর নিরাপত্তার দাবিতে কথা ছিল, এ দিন মধ্যরাতে পথে নামবেন মহিলারা। বাস্তবে দেখা গেল, অনেক আগে থেকেই রাজপথের দখল কার্যত নিয়ে নিলেন নারী-পুরুষ নির্বিশেষে শহরবাসী। দাবি তুললেন, ‘আর জি কর-কাণ্ডের বিচার চাই’। কেউ আবার বললেন, ‘শাস্তি যেন এমন হয়, অপরাধ করতে লাগবে ভয়’।

আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের বীভৎসতা আরও এক বার দেখিয়েছে, এ দেশে, এ শহরে আমরা কেউ নিরাপদে নেই। তাই সেই নিরাপদে থাকার দাবিতে রাজপথের দখল কী ভাবে নেবেন তিলোত্তমার মেয়েরা, তা দেখতে আগেই বেরিয়ে পড়েছিলাম। কথা ছিল, রাত ১২টায় সকলে জমায়েত হবেন শহরের বিভিন্ন স্থানে। কেউ কলেজ স্ট্রিটে, কেউ যাদবপুরে, কেউ বা শ্যামবাজার অথবা অ্যাকাডেমির সামনে। কেউ আবার নিজের পাড়ায়। যিনি বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না, তিনি শঙ্খধ্বনি করে পাশে থাকার বার্তা দেবেন।

রাত ১০টা নাগাদ কলেজ স্ট্রিটে এসে দেখলাম, তখনই ইতিউতি ভিড় হতে শুরু করেছে। কেউ কেউ প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে, সঙ্গী বেশ কিছু পুরুষ। পরে রাত যত গড়িয়েছে, ততই উত্তাল হয়েছে কলেজ স্ট্রিট চত্বর। রাজনৈতিক মিছিল অথবা দুর্গাপুজোয় ভিড় এই চত্বর কিছু কম দেখেনি। কিন্তু আজকের এই জমায়েত আলাদা— তার সুরে, স্বভাবে, দাবিতে। রাত ১১টার পরে যত সময় গড়িয়েছে, ছোট ছোট দলে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে এসে উপস্থিত হয়েছেন শয়ে শয়ে মেয়েরা। তাঁদের মধ্যে যেমন ছিলেন কলেজপড়ুয়া তরুণী, তেমনই ছিলেন প্রৌঢ়া। কারও গলায় ঝোলানো প্ল্যাকার্ড, যাতে লেখা ‘বিচার চাই’। কারও হাতে পোস্টার। কেউ আবার হাততালি দিয়ে স্লোগান তুলেছেন, ‘লড়কে লেঙ্গে আজ়াদি’।

এর পরে গিয়েছিলাম শ্যামবাজার এবং আর জি করে, যেখান থেকে এই প্রতিবাদের সূচনা। তখন শ্যামবাজারে আস্তে আস্তে ভিড় জমতে শুরু করেছে। আর জি করের সামনে রাতের নিস্তব্ধতা চিরে মাইকে উঠেছে জোর স্লোগান। রাজনৈতিক দলের স্লোগান ও কবিতায় নিশ্চয়ই হাসপাতালে রোগীদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। কিন্তু, সে খবর কে রাখে! সকলেই নিজেদের দাবি সরবে জানাতে ব্যস্ত।

এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার সময়ে এই তিলোত্তমা কলকাতার রাতের নানা রূপ দেখেছি। কিন্তু এই রাতের কলেজ স্ট্রিট চত্বর সম্পূর্ণ আলাদা। রাত যত বেড়েছে, ততই রাজপথ কার্যত অধিকার করেছেন মেয়েরা। সঙ্গে অবশ্য ছিলেন পুরুষ সঙ্গীরাও, যাঁরা সমমনস্ক, সহমর্মী। তাঁদের হাতে ছিল পোস্টার— ‘তোমার সঙ্গে হওয়ার আগে, গর্জে উঠুক ভীষণ রাগে’। একে একে কলেজ স্ট্রিট চত্বরে মিছিল করে এসে পৌঁছনো মেয়েরা কখনও গান গেয়েছেন, কখনও স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করেছেন গোটা চত্বর।

মধ্যরাতের এই জমায়েত দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই প্রতিবাদ শুধু এক দিনের হুজুগ হয়েই থেকে যাবে না তো? রাত গড়াতে যে ভাবে আর জি কর হাসপাতালে ঢুকে তাণ্ডব চলল, তার জন্য কোনও নিন্দাই যথেষ্ট নয়। প্রশ্ন উঠে গেল, যারা এই ঘটনা ঘটাল, তারা কি আদৌ প্রতিবাদী?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy