জনসমাগম: চিড়িয়াখানায় ঢুকতে দর্শকদের লাইন। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
খাঁচার এক কোণে লুকিয়ে রয়েছে বাবু। আড়ালে বসে হাত-পা নাড়াচ্ছে। বাবুকে কাছ থেকে দেখতে চেয়ে খাঁচার বাইরে দাঁড়িয়ে উৎসাহী দর্শকেরা চিৎকার করে তাকে ডাকছে। কমলালেবু কিংবা আপেল ছুড়ে কেউ বাবুকে উপহার দিলেও ভিড় দেখে বিরক্ত শিম্পাঞ্জি বাবু মাঝেমধ্যেই খাঁচার ভিতরে লুকিয়ে পড়ছিল। বছর শেষে কল্পতরুর মতো বাবুও শেষ পর্যন্ত দর্শকদের আবদার মিটিয়ে পরিখার সামনে এসে হাত নাড়িয়ে দিয়ে যায়। দূর থেকে সেই দৃশ্য মোবাইলবন্দি করছিলেন অনেকেই।
২০১৯-এর শেষ রবিবার আনন্দে মাতোয়ারা দর্শকদের ভিড় ছিল চিড়িয়াখানা থেকে শহরের বিভিন্ন বিনোদন পার্কে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এ দিন প্রায় এক লক্ষ দর্শক সমাগম ঘটে সেখানে। ভিড় ছিল এতটাই যে পাশাপাশি হাঁটার জায়গা ছিল না। একই ছবি দেখা গিয়েছে ইকো পার্ক, নিকো পার্ক, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘরে। বর্ষশেষের রবিবারে মেট্রোয় ঠান্ডার আমেজ মেখে বেরিয়ে পড়া যাত্রীর ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ভিড়ও। কখনও আবার দর্শকদের চিৎকার-চেঁচামেচিতে বিরক্ত বোধ করেছে প্রাণীরাও। বাবু শিম্পাঞ্জিকে যেমন মাঝেমধ্যেই খাঁচার ভিতরে লুকিয়ে পড়তে দেখা যায়। বাঘ, হাতি, জ়েব্রা, জ়িরাফের খাঁচার সামনেও প্রচুর মানুষের ভিড় দেখা যায়। খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে দর্শকদের নিজস্বী তোলার হিড়িকও দেখা গেল।
বাঘের খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে তার হালুম ডাকে চমকে উঠেছিল বেহালার স্কুল ছাত্র অতীন্দ্র মণ্ডল। তার কথায়, ‘‘সামনে থেকে বাঘ এই প্রথম দেখলাম। তাই এত কাছ থেকে ডাক শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’ অতিরিক্ত ভিড় দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বাঘ-সিংহদেরও বারবার খাঁচার ভিতরের ঘরে লুকোতে দেখা গেল। তা সত্ত্বেও চিড়িয়াখানায় এসে বাঘ-সিংহ দেখে খুশি দর্শকেরা।
ব্যারাকপুর থেকে বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে রবিবার সারাদিন চিড়িয়াখানায় সপরিবার কাটালেন রহমত আলি। রহমতের কথায়, ‘‘আমরা পিকনিকের আমেজে ছিলাম। আজ আসব বলে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া ছিল। বাড়ি থেকে সারাদিনের খাবার নিয়ে এসেছিলাম।’’ দুপুরে ছেলে আদিলের সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলেন রহমত। ইংরেজি নববর্ষের আগের শেষ রবিবার আলিপুর চিড়িয়াখানার ভিতরে বিভিন্ন মুহূর্তের কোলাজ বলে দিচ্ছিল, নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে ছুটির আমেজ ছুঁয়ে ফেলেছে তাঁদেরকে। এ দিন বিকেল চারটের পরে চিড়িয়াখানা থেকে দর্শকেরা বেরোতে শুরু করলে ওই জায়গায় যানজটও হয়। ভবানী ভবন থেকে চিড়িয়াখানার দিকে যান চলাচল করে ধীর গতিতে। চিড়িয়াখানার সামনের ফুট ওভারব্রিজের দু’দিকে চলমান সিঁড়ি বন্ধ ছিল। পুলিশ জানায়, অনেকেই চলমান সিঁড়িতে ওঠানামায় অভ্যস্ত নন। তাই ভিড়ে যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে তাই চলমান সিঁড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এ দিন চিড়িয়াখানার পাশাপাশি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ভারতীয় জাদুঘর, ইকো পার্ক, নিকো পার্ক, মিলেনিয়াম পার্কও ভিড়ে ঠাসা ছিল। ইকো পার্কের নিরাপত্তা জোরদার করতে জায়গাটি ন’টি জোনে ভাগ করে আলাদা পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়। সেখানকার নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে এক জন ডিসি পদমর্যাদার
আধিকারিক মোতায়েন ছিলেন। ডায়মন্ড হারবার থেকে সদ্য বিবাহিত তরুণ-তরুণী এ দিনই প্রথম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে আসেন। কেউ বা সপরিবারে শীতের দুপুরের আঁচ নিয়ে ভিক্টোরিয়ার মাঝমাঠে বসেছিলেন। সবার মুখে একই কথা, ‘‘এমন দিন যেন বারবার আসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy