গাদাগাদি: শান্তিপুরগামী লোকালে বাড়ি ফেরার ভিড়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
প্ল্যাটফর্মে বৃত্ত ছিল। দূরত্ব-বিধি মেনে বসার জন্য কামরার আসনেও দাগ দেওয়া ছিল। দীর্ঘ সাড়ে সাত মাস পরে বুধবার আবার যাত্রা শুরু করা চেনা লোকালের কামরার এমন ছবি দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন যাত্রীরা। বেলা বাড়তে অবশ্য ফাঁকা কামরা আর ফাঁকা থাকল না!
১০টায় শিয়ালদহ পৌঁছলেই ধীরেসুস্থে অফিস যেতে পারতেন সোদপুরের নারায়ণ দত্ত। এ দিন সকাল সাড়ে সাতটায় তিনি স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন মারাত্মক ভিড় হবে ভেবে। কিন্তু ডাউন ব্যারাকপুর লোকালের কামরার ছবি দেখে অবাকই হলেন নারায়ণবাবু। বসার জায়গা মেলেনি ঠিকই। তবে বহু মাস পরে একটু ফাঁকায় হাত-পা ছড়িয়ে, দাঁড়িয়ে অফিস গিয়েছেন।
শাখার নাম শিয়ালদহ মেন। ভিড় শব্দটা যার সঙ্গে প্রায় সমার্থক। সেটাই মালুম হল দিন গড়াতে। ব্যারাকপুর-নৈহাটি লোকালে যাও বা দাঁড়ানোর জায়গা মিলছিল, কৃষ্ণনগর-গেদে-শান্তিপুর-রানাঘাট লোকালে যেন সেই লকডাউনের আগের দিনগুলোর ছবি। অবস্থা এমনই যে, ব্যারাকপুর স্টেশনে কামরার দরজার হাতল কোনও রকমে ধরে দাঁড়ানো এক যাত্রী বললেন, ‘‘দাদা, একটু চেপে দাঁড়ান। পুরো বাইরে ঝুলছি।’’ ভিতর থেকে জবাব এল, ‘‘টিটাগড় পর্যন্ত টেনে দিন দাদা। প্যাসেঞ্জারেরা ঠিক ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দেবে।’’ লোকাল ট্রেনের চেনা লব্জও ফিরল বহু দিন পরে।
কামরার দরজার মুখে যাত্রীদের ভিড় ফিরল ঠিকই। তবে যে দমবন্ধ ভিড় দেখতে অভ্যস্ত লোকাল ট্রেনের নিত্যযাত্রীরা, এ দিন তা দেখা যায়নি। যদিও সুরক্ষা বিধির উপরে জোর দিয়ে যে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষ, শুরুর স্টেশনগুলিতে সে সব মানা হয়েছে ঠিক মতোই। ব্যারাকপুর স্টেশন লোকমুখে ‘হাজারদুয়ারি’ নামে পরিচিত। যে কোনও দিক থেকে আসা যায়। সেখানে স্টেশনের দু’দিকে দু’টি মাত্র প্রবেশ ও প্রস্থান-পথ রেখে বাকি সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এমনকি, ফুট ওভারব্রিজেও ভিড় এড়াতে মাঝখানে বসেছে ব্যারিকেড। বেলা বাড়তে শহরতলির স্টেশনের টিকিট কাউন্টারগুলিতে যাত্রীদের লাইন লম্বা হয়েছে ক্রমশ। দূরত্ব-বিধি মানা হচ্ছে কি না দেখার জন্য মোতায়েন ছিলেন রেল রক্ষী বাহিনীর জওয়ানেরা। ব্যারাকপুর-নৈহাটি লোকালেও রেল পুলিশ যাত্রীদের দূরত্ব-বিধি মেনে বসার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু মাঝের স্টেশনগুলিতে সেই আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা আর চোখে পড়েনি। ফলে ভিড় কামরায় পুলিশের সামনেই উঠে পড়েছেন যাত্রীরা। স্প্রিন্ট টেনে চলন্ত ট্রেনে উঠে পড়ার ছবিও ফিরেছে।
তবে লোকাল ট্রেনের চাকা ঘুরলেও এ দিন কামরার সেই পরিচিত হাঁকডাক শোনা যায়নি। বাদাম-ডালমুট থেকে গামছা এমনকি, নর্দমা পরিষ্কার করার রাসায়নিক বিক্রি করে দিন গুজরান হয় যাঁদের, সেই হকারদের ট্রেনে দেখা যায়নি। অফিসের ব্যস্ত সময়ের ভিড় ট্রেন নয়, একটু খালি ট্রেনই তাঁদের পছন্দ। ব্যারাকপুর-টিটাগড়-সোদপুর স্টেশনের আশপাশে হকারদের দেখা গেলেও কামরায় উঠতে পারেননি তাঁরা। হকারদের ট্রেনে উঠতে দেওয়ার দাবিতে এ দিন ব্যারাকপুরে মিছিল করে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু। সংগঠনের নেত্রী গার্গী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘হকারদের অবিলম্বে ট্রেনে উঠতে না দিলে বড় আন্দোলন হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy