Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
SSKM

SSKM: পেটের ‘মৌচাক’ ভাঙা হবে কী ভাবে, চিন্তায় চিকিৎসকেরা

সম্প্রতি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে এক যুবককে গ্রেফতার করে ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো অব ইন্ডিয়া’ (এনসিবি)।

এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজির কেবিনে ভর্তি, ব্রাজ়িলের বছর তিরিশের ওই যুবকই এখন মাথাব্যথার কারণ পাঁচ চিকিৎসক সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের।

এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজির কেবিনে ভর্তি, ব্রাজ়িলের বছর তিরিশের ওই যুবকই এখন মাথাব্যথার কারণ পাঁচ চিকিৎসক সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের। ফাইল ছবি

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২২ ০৮:০০
Share: Save:

পেটের ভিতরে আস্ত ‘মৌচাক’!

তবে, এই ‘মৌচাক’ মৌমাছির নয়, মাদক ক্যাপসুলের। কী ভাবে সেই ‘মৌচাক’ ভেঙে ক্যাপসুলগুলি বার করা হবে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয় চিকিৎসকদের কাছে। তার উপরে বিদেশি ওই রোগী পর্তুগিজ ছাড়া অন্য ভাষা জানেন না। অগত্যা চিকিৎসা শুরুর সময়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চিকিৎসকদের ভরসা গুগ্‌ল ট্রান্সলেটর। অবশ্য হাসপাতালে ভর্তির দিন তিনেকের মাথায় দোভাষী জোগাড় করা হয়েছে। তাঁর মাধ্যমেই রোগী জানিয়েছেন, তিনি মুখ দিয়ে শক্ত খাবার খেতে চান। কিন্তু পেটের ভিতরের ক্যাপসুলের চাঁই না ভাঙা পর্যন্ত কতটা শক্ত খাবার তাঁকে দেওয়া যাবে, সেটাও ভাবাচ্ছে চিকিৎসকদের।

এসএসকেএমের কার্ডিয়োলজির কেবিনে ভর্তি, ব্রাজ়িলের বছর তিরিশের ওই যুবকই এখন মাথাব্যথার কারণ পাঁচ চিকিৎসক সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোনও ভাবে যাতে ওই যুবকের ক্ষতি না হয়, সে দিকেই কড়া নজর রাখা হচ্ছে। তাই মলত্যাগের সঙ্গে, না কি পেট কেটে ওই ‘মৌচাক’ বার করে আনা হবে, তা নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। বরং প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলছেন চূড়ান্ত ভাবনাচিন্তা করে।

সম্প্রতি কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ওই যুবককে গ্রেফতার করে ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো অব ইন্ডিয়া’ (এনসিবি)। তাঁর শরীরে মাদক লুকোনো রয়েছে, এই সন্দেহে বিমানবন্দরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষায় দেখা যায়, পেটের ভিতরে রয়েছে অসংখ্য ক্যাপসুল।সাধারণত, এমন ক্যাপসুলে মাদক ভরে পাচার করা হয়। জল দিয়ে গিলে ফেলে বা পায়ুদ্বার দিয়ে ঠেলে পেটের ভিতরে ওই ক্যাপসুল ঢোকানো হয়। সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশে গত ১৫ অগস্ট থেকে ব্রাজ়িলের বাসিন্দা ওই যুবকের ঠাঁই হয়েছে এসএসকেএমে।

আপাতত পিজি-র কার্ডিয়োলজি বিভাগের কেবিনে এনসিবি ও কলকাতা পুলিশের পাহারাতেই দিন কাটছে ওই যুবকের। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এক্স-রে ও সিটি স্ক্যানে দেখা গিয়েছে, বৃহদন্ত্রের ভিতরেই মৌচাকের মতো চাঁই বেঁধে রয়েছে প্রায় ৭০টি ক্যাপসুল। তার ভিতরে সম্ভবত ১০-১২ গ্রাম করে কোকেন ঠেসে ভরা রয়েছে বলেই অনুমান তদন্তকারীদের। চিকিৎসকদের মতে, কোনও ভাবে টেনে ওই ক্যাপসুল বার করতে গিয়ে ফেটে গেলে রক্তে মাদক মিশে বিষক্রিয়ায় প্রাণসংশয় হতে পারে রোগীর। আবার কোলনোস্কোপি করে বার করতে গেলে ক্যাপসুলের চাঁই উপরের দিকে উঠে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। তাই আপাতত মলত্যাগের মাধ্যমে কতগুলি ক্যাপসুল বার হয়ে আসে, সে দিকেই নজর রাখছেন চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৭টি ক্যাপসুল বেরিয়েছে।

গত সোমবার হাসপাতালে ভর্তির পরে মাঝেমধ্যেই মারাত্মক উত্তেজিত ও ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছিলেন ফর্সা, লম্বা, ছিপছিপে, শরীরে ট্যাটু আঁকা ওই যুবক। এমনও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, সুচ খেয়ে নিতে যাচ্ছিলেন তিনি। তৎক্ষণাৎ হাসপাতালের মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। আবার তাঁর পর্তুগিজ ভাষাও বোধগম্য হচ্ছিল না চিকিৎসকদের। অগত্যা যুবকের মুখের সামনে গুগ্‌ল ট্রান্সলেটর ধরে রাখতে হচ্ছিল। তাঁর বলা কথা স্ক্রিনে ইংরেজিতে পরিবর্তিত হচ্ছিল। তবে বুধবার এক দোভাষীকে নিয়ে এসেছে এনসিবি।

সূত্রের খবর, শল্য, মেডিসিন, গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, ফার্মাকোলজি ও মনোরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের নিয়ে ওই বিদেশি নাগরিকের চিকিৎসায় গঠন করা হয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। প্রয়োজনে ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগকেও যুক্ত করা হবে। স্যালাইনের মাধ্যমে ওষুধ ও তরল খাবার বেশি করে দেওয়া হচ্ছে ওই বন্দিকে। মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান তথা শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘ডাক্তারি জীবনে এমন সমস্যার মুখোমুখি বোধহয় কেউই হননি। এসএসকেএমের কাছে এখন এটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ, ওই বিদেশি নাগরিক বন্দি হলেও আমাদের কাছে রোগী। তাই তাঁকে সুস্থ করে তোলা ও দেহ মাদকের ক্যাপসুলশূন্য করাই মূল লক্ষ্য। তার জন্য সব রকমের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy