Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
R G Kar Hospital Incident

মোবাইল ভর্তি পর্নোগ্রাফি! আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্তকে কী কী ভাবে চিহ্নিত করল পুলিশ?

আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তিনি জেরার মুখে অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে খবর। এতে তাঁর অনুতাপ নেই! মূলত দু’টি সূত্র ধরে তাঁকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৪ ১৫:১৪
Share: Save:

আরজি কর হাসপাতালকাণ্ডে যাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁর মোবাইল ফোন ঘেঁটে মিলেছে পর্নোগ্রাফির বহু ভিডিয়ো। এমনটাই জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে। ওই যুবকের মানসিক বিকৃতি রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার ভোর ৪টে নাগাদ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে যুবককে দেখা গিয়েছিল। ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর আবার তাঁকে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যেই তিনি ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন যুবক। তবে তাঁর মধ্যে কোনও অপরাধবোধ দেখা যায়নি। এখনও পর্যন্ত তিনি নিরুত্তাপ।

আরজি করের নিরাপত্তারক্ষীরাই জানাচ্ছেন, ধৃত যুবকের নিয়মিত যাতায়াত ছিল হাসপাতালে। তিনি পেশায় সিভিক ভলান্টিয়ার। হাসপাতালে দালালির সঙ্গেও তাঁর যোগ ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। মূলত দু’টি বিষয়ের ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে অভিযুক্ত হিসাবে চিহ্নিত করে। এক, হাসপাতালের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং দুই, একটি ব্লুটুথ হেডফোন।

পুলিশ সূত্রে খবর, সিসিটিভি ফুটেজে রাত ১১টা নাগাদ অভিযুক্তকে প্রথম আরজি করে ঢুকতে দেখা যায়। তিনি ভিতরে গিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলেন এবং পরে বেরিয়ে যান। হাসপাতালের বাইরে গিয়ে তিনি মদ খান বলে জানতে পেরেছে পুলিশ। মত্ত অবস্থায় ভোর ৪টে নাগাদ তাঁকে আবার হাসপাতালে ঢুকতে দেখা যায়। পুলিশের অনুমান তার পরেই মূল ঘটনাটি ঘটেছে।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট পর হাসপাতাল থেকে বেরোতে দেখা গিয়েছে অভিযুক্তকে। বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে গিয়েও মদ খান। যে সময়ের ঘটনা, তখন তরুণী চিকিৎসক সেমিনার হলে ঘুমোচ্ছিলেন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। সেই সময় তাঁকে আক্রমণ করা হয়।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালে প্রবেশের সময়ে অভিযুক্তের কানে একটি হেডফোন ছিল। পরে তিনি যখন বেরিয়ে আসছেন, তখন হেডফোন দেখা যায়নি তাঁর কানে। পরে ওই হেডফোনেরই ছেঁড়া অংশ পাওয়া যায় আরজি করের জরুরি বিভাগের চার তলার সেমিনার হল থেকে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, যুবকের মানসিক কোনও বিকৃতি থাকতে পারে। জেরার মুখে অপরাধের কথা স্বীকার করে নিয়েও তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর কোনও অনুতাপ নেই।

তরুণী চিকিৎসকের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে পাওয়া গিয়েছে নৃশংসতার নানা চিহ্ন। ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু করা হয়েছে এই মামলায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, তরুণীর দু’চোখ থেকে রক্ত গড়াচ্ছিল। তাঁর হাতের আঙুল থেকে শুরু করে, পা, পেট-সহ শরীরের নানা জায়গায় ক্ষতচিহ্ন ছিল। খুনের আগে তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালানো হয়েছিল বলে প্রমাণ মিলেছে। মৃতের পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসকদের সামনেই ময়নাতদন্ত করে তার প্রাথমিক রিপোর্টটি প্রস্তুত করা হয়েছে।

আরজি কর হাসপাতালের তরফে ইতিমধ্যে ডিনের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, রাতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন ছিল, তাতে গাফিলতি ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ঘটনার প্রতিবাদে এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে শনিবার সকাল থেকে পথে নেমেছেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা।

ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনার অভিযুক্তের ফাঁসির শাস্তি চান। ফাস্টট্র্যাক আদালতে মামলাটি নিয়ে গিয়ে ফাঁসির আবেদন জানানোর নির্দেশ প্রশাসনকে দিয়েছেন তিনি। তবে একই সঙ্গে মমতা এ-ও জানান, মৃতের পরিবার বা আন্দোলনকারীদের কেউ যদি এই ঘটনায় অন্য কোনও এজেন্সির তদন্ত চান, পুলিশের তদন্তে তাঁদের আস্থা যদি না থাকে, তাতে রাজ্য সরকারের আপত্তি নেই। পরে পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলও জানান, অন্য এজেন্সির তদন্তে তাঁদের আপত্তি নেই। আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে তিনি একমত বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

অন্য বিষয়গুলি:

R G Kar Hospital R G Kar R G Kar Medical College and Hospital Rape and Murder Crime News
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy