১৯৪৭, ১৫ অগস্ট। স্বাধীনতার উদ্যাপনে মাতোয়ারা শহর। দাঙ্গার স্মৃতি সরিয়ে রেখে সে দিন বেলগাছিয়ার মুসলমান বাসিন্দারা পিচকিরি দিয়ে বাসযাত্রীদের গায়ে সুগন্ধি গোলাপজল ছিটিয়েছিলেন, ক’জনের মনে আছে? কিংবা ষাট-সত্তর দশকের সেই সামাজিক অস্থিরতার সময়টা, মালগাড়ির ওয়াগন ভেঙে জুতোর লুঠ ঠেকাতে জুতো কোম্পানি তখন দুই পাটির জুতো আলাদা করে পাঠাত! ‘গল্প হলেও সত্যি’কথনের মানুষ আজ বেশি নেই। দরদি ডাক্তার, শিক্ষক, সমাজসেবীর পাশেই থাকত এমন নেতারও কথা, ভেঙে যাওয়া পুকুরপাড় মেরামতের আর্জি যাকে জানালে স্থায়ী সমাধান হিসাবে জুটত পুকুর বুজিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব! মানবিকতা, সহমর্মিতা, স্বার্থপরতার আলো-আধাঁরি পথ বেয়ে এ ভাবেই গড়ে উঠেছিল সমাজজীবন। সেই সব কথাই জড়ো করেছেন আশীষ কুমার মিত্র, বসাকবাগান ও পারিপার্শ্বিক পরিচিতি: পাতিপুকুর দমদম (প্রকা: বিশ্বামিত্র) বইয়ে। বাবুদের বাগানবাড়ির ঠিকানা হিসাবে পরিচিত উত্তর শহরতলির এই এলাকার সমাজ-ইতিহাসের সঙ্গে অন্তরঙ্গ পরিচয় করায় এ বই। রয়েছে মূল নিবাসী শ্রমজীবী মানুষ থেকে জমিদারের ঠিকা প্রজা, শরণার্থী মানুষের লড়াই, উৎসব-পার্বণ, ব্যবসা-বাণিজ্যের কথা; এলাকার পুরনো পরিবার থেকে শুরু করে ফেরিওয়ালার তালিকাও, অবাক করা!
শহরের আর এক প্রান্তে ঠাকুরপুকুরে আবার অন্য গল্প। কেওড়াপুকুর রোডের নতুন নামকরণের মিটিং বসেছে, এক জন বললেন: রাস্তার যা অবস্থা তাতে হাঁটুর উপর কাপড় না পরলে হাঁটা যায় না, তাই মহাত্মা গান্ধীর নামই ভাবা হোক। শেষ পর্যন্ত সেই প্রস্তাবই গৃহীত হল! ব্রতচারী, ছোট লাইনের রেল আর পুকুরঘেরা জনপদের স্মৃতির অনুরণন ফিরে আসে ঠাকুরপুকুরের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে অসিত কুমার ঘোষ সম্পাদিত ঠাকুরপুকুরের ইতিকথা (প্রকা: নান্দনিক) সঙ্কলনগ্রন্থে। রয়েছে ব্রতচারী গ্রাম, জেমস লঙ সাহেব ও এপিফ্যানি চার্চের ইতিহাস নিয়ে লেখা, এলাকার পুরনো ও বর্ষীয়ান বাসিন্দারা লিখেছেন ‘জোনাই জ্বলা শেয়াল ডাকা এক আধা-গ্রাম’ ও তার সমাজজীবনের কথা। হারিয়ে যাওয়া কালীঘাট-ফলতা রেল পুরনো ঠাকুরপুকুরের অনেক মূল্যবান স্মৃতিগুলির একটি। কেউ কলমে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি ছায়াছবির শুটিং দেখার উত্তেজনা; বিনা টিকিটে স্কুল থেকে ফেরার সময় গাড়ি স্টেশনে ঢোকার আগেই স্তূপীকৃত কচুরিপানার উপর লাফিয়ে টিকিট-নজরদারি এড়ানোর দস্যিপনা রোমন্থন করেছেন কেউ। চাকরির প্রথম দিনে নবীন শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের মন্ত্র, ‘শিক্ষকতা বৃত্তি নয়, ব্রত’... হারিয়ে যাওয়া একটা সময়কেই তুলে আনে চোখের সামনে। নতুন সহস্রাব্দে শপিং মল-ফ্লাইওভার-পাতালরেল শোভিত শহরতলির বিবর্তনের কথা বলার মানুষ দ্রুত কমছে, বিশেষ করে কোভিড-পরবর্তী এ কালে। এলাকাভিত্তিক ইতিহাস চর্চার গুরুত্ব এখন আরও বেশি। এই সব স্মৃতি নথি তথ্য ছবির মধ্যে জেগে থাকে সামাজিক-সাংস্কৃতিক চিহ্নেরা, এ শহরের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ছবিতে বাঁ দিকে পাতিপুকুর স্টেশন, ডানে ঠাকুরপুকুরে ব্রতচারী অনুষ্ঠান।
মনে রেখে
১৯৬৭ সালের ১৫ অগস্ট প্রতিষ্ঠিত সপ্তাহ পত্রিকার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় (ছবি), সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতিও। আমৃত্যু ছিলেন পত্রিকার সঙ্গী, ২০০৩ সালে পত্রিকার তরফে তাঁকে সংবর্ধনার উত্তরে লিখেছিলেন, তিনি নন, সংবর্ধনার যোগ্য বরং এই পত্রিকাই। ২০০৩-এর ৮ জুলাই প্রয়াত পদাতিক কবির স্মরণে তার পরের বছর থেকেই নিয়ম করে ‘কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করে আসছেন সপ্তাহ কর্তৃপক্ষ, অতীতে নানা সময়ে তাঁর স্মরণোপলক্ষে বলেছেন দেবেশ রায়, তরুণ সান্যাল, উজ্জ্বলকুমার মজুমদার, সৌরীন ভট্টাচার্য, সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়, শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ সংস্কৃতিজগতের বিশিষ্টজন। করোনাকালে দু’বছর অনুষ্ঠান হয়নি, গত ১৩ জুলাই সন্ধ্যায় বাংলা আকাদেমি সভাগৃহে হয়ে গেল ১৮তম বর্ষের স্মারক বক্তৃতা— ‘রবীন্দ্রনাথের ভারততীর্থ এবং বর্তমান ভারতবর্ষ’ নিয়ে বললেন প্রাবন্ধিক নন্দন রায়।
স্মরণ-সন্ধ্যা
আসছে আর এক ২৩ জুলাই, ভাস্কর চক্রবর্তীর প্রয়াণদিন। ২০০৫-এর পর পেরোতে চলল প্রায় দু’দশক, এই দিনটি স্মরণে তাঁর শুভানুধ্যায়ীরা সমবেত হন প্রত্যেক বছর। ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতা ও গদ্য পাঠ হয়, তাঁর নামাঙ্কিত স্মারক ভাষণ ও পুস্তিকা প্রকাশের আয়োজনও। আগামী কাল সন্ধ্যা ৫.৪৫-এ অবনীন্দ্র সভাঘরে ‘ভাস্কর চক্রবর্তী স্মরণ সন্ধ্যা’, প্রতিবিম্ব পত্রিকা, ‘ভালো বই’ প্রকাশনা ও কবিপত্নী বাসবী চক্রবর্তীর উদ্যোগে। ২০২৩-এর স্মারক বক্তৃতা দেবেন আব্দুল কাফি, বলবেন ‘অনাত্মকথার দিকে যাত্রা’ নিয়ে। কবির নামাঙ্কিত স্মৃতি পুরস্কার পাবেন মণিশঙ্কর বিশ্বাস। প্রতিবিম্ব পত্রিকায় ১৯৭৪-২০০৫’এ প্রকাশিত ভাস্কর চক্রবর্তীর লেখা, এবং এই পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে নানা লেখার সমাহারে, প্রশান্ত মাজীর সম্পাদনায় প্রকাশ পাবে সঙ্কলন প্রতিবিম্বিত ভাস্কর (প্রকাশক: ঋত)।
গৌরবযাত্রা
১৩০০ বঙ্গাব্দের ৮ শ্রাবণ (২৩ জুলাই, ১৮৯৩) প্রতিষ্ঠা ‘দ্য বেঙ্গল অ্যাকাডেমি অব লিটারেচার’-এর, পরের বছর ২৯ এপ্রিল থেকে যার পরিচয় ‘বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষৎ’ নামে। পরিষদের প্রথম নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন রমেশচন্দ্র দত্ত, ১৮৯৪-এর ১৭ জুন অনুষ্ঠিত সভায় সহ-সভাপতি হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। উনিশ ও বিশ শতকের প্রায় সব বাঙালি মনীষীই যুক্ত ছিলেন এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে, ১৩০ বছর অতিক্রম করে আজও যা কলকাতা তথা এই বাংলায় অগণিত জনের সাহিত্যচর্চা ও গবেষণাকাজের প্রিয় গন্তব্য। ১৩১তম প্রতিষ্ঠাদিবসের অনুষ্ঠান আগামী ২৫ জুলাই মঙ্গলবার বিকেল ৩টেয় রমেশ ভবনে পরিষৎ সভাগৃহে, বলবেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। সান্দীপনি ভট্টাচার্য দেবাশিস বসু অনির্বাণ বসু ও জয়ন্ত চক্রবর্তী সম্মানিত হবেন বিবিধ স্মৃতি পুরস্কারে।
সিনেমা চর্চা
সিনেমা নিয়ে চর্চার আর একটি পরিসর তৈরি হল এ শহরে, ‘কলকাতা ফিল্ম অ্যাকাডেমিয়া’ (কেওএফএ), গত ৯ জুন থেকে। ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ় অব ইন্ডিয়া (এফএফএসআই)-এর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা আর এ শহরের ফিল্ম-পাঠশালা চিত্রবাণী-র যৌথ উদ্যোগ। মাসের দ্বিতীয় ও চতুর্থ শুক্রবার একত্র হচ্ছেন সদস্যরা, দেখছেন বাছাই একটি ছবি, থাকছে বিশিষ্টজনের আলোচনা। আপাতত কেবল সদস্যদেরই জন্য, তবে সিনেমা-প্রেমী ও চর্চাকারী মানুষেরা যোগাযোগ করতেই পারেন চিত্রবাণী বা এফএফএসআই কর্তৃপক্ষকে, যোগদান জটিল নয়। আগামী সভা ২৮ জুলাই বিকেল ৪টেয় চিত্রবাণীতে, বিজ্ঞানী ও চিত্রপরিচালক বেদব্রত পাইন বলবেন তাঁর ‘ওয়ার্ক-ইন-প্রোগ্রেস’ তথ্যচিত্র দেজা ভু নিয়ে, দেখানো হবে তার চূড়ান্ত রূপটি।
মঞ্চে প্রথম
১৯৩৮-এ চিনে প্রেরিত ভারতীয় মেডিক্যাল মিশনের পাঁচ চিকিৎসকের অন্যতম ছিলেন দ্বারকানাথ শান্তারাম কোটনিস। নেহরু ও সুভাষচন্দ্র বসুর উদ্যোগে সেখানে যান তাঁরা, জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে আক্রান্ত চিনা সৈনিকদের শুশ্রূষায়। ১৯৪২-এর ৯ ডিসেম্বর চিনের মাটিতেই মৃত্যু হয় কোটনিসের, চিকিৎসাকাজে অক্লান্ত পরিশ্রমে। মানবতাবাদী মানুষটির স্মরণে ২০১৯-এ তৈরি হয়েছে নাট্যদল কোটনিস মাস থিয়েটার গ্রুপ, আগামী ২৪ জুলাই সোমবার সন্ধে সাড়ে ৬টায় অ্যাকাডেমি মঞ্চে তাদের নাটক ইন্টারন্যাশনালিস্ট-এর প্রথম অভিনয়— কোটনিস-সহ মেডিক্যাল মিশনের চিকিৎসকদের চিন-পর্বের নাট্যরূপ। অমল রায়ের লেখা, নির্দেশনায় বেদান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়।
নান্দনিক
১৯৭৬ সালে পথ চলা শুরু রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কের মিউজ়িয়ম ও আর্ট গ্যালারিটির— কলকাতা তথা এ রাজ্যের নান্দনিক শিল্প-ঐতিহ্যের অন্যতম সেরা প্রদর্শনস্থল। প্রতি বছর এই সংগ্রহশালায় আয়োজিত হয় বার্ষিক প্রদর্শনী, এ বছরেরটি শুরু হল গত ১৯ জুলাই, উদ্বোধন করলেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী সুহিতানন্দ। এ বারের বিষয় প্রতিকৃতিচিত্র, প্রদর্শনীতে দেখা যাচ্ছে নানা শিল্পরীতি ও মাধ্যমে প্রতিকৃতি: চিত্র, ভাস্কর্য, পোড়ামাটি, পোর্সেলিন প্লেট, মুদ্রা, ডাকটিকিটে, লোকশিল্পের আঙ্গিকেও। সেই সঙ্গে খুলে গেল নতুন দু’টি গ্যালারি, শিল্পী ভাস্কর প্রমথনাথ মল্লিকের ভাস্কর্যে সেজে ওঠা, তাঁরই নামাঙ্কিত গ্যালারি এবং স্কাল্পচারাল আর্ট গ্যালারি: সোনার তবকে অলঙ্কৃত কাঠের ধ্যানী বুদ্ধ, কুলুঙ্গিতে কাঠের শিব, রোজ়উড ও চন্দনকাঠের কৃষ্ণ, দেখার মতো। ছবিতে শ্রীচৈতন্য ও শ্রীরামকৃষ্ণের প্রতিকৃতি, গণেশ পাইন ও যোগেন চৌধুরীর আঁকা— প্রদর্শনী থেকে। চলবে ১৯ অগস্ট পর্যন্ত।
মহানায়ক
অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা জগতের শিল্পী ও কলাকুশলীদের নানা সাহায্যও করতেন উত্তমকুমার (ছবি)। মহানায়কের নামাঙ্কিত স্মরণ কমিটি তথা সংস্থা সেই ধারা বহতা রেখেছে, তাঁর জন্ম ও প্রয়াণদিনে উত্তম মঞ্চে নানা সেবামূলক কাজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। তারই অঙ্গ হিসাবে এর আগে জীবনকৃতি সম্মাননা পেয়েছেন নিমাই ঘোষ রত্না ঘোষাল প্রমুখ, এ বছর সম্মানিত হবেন মাধবী মুখোপাধ্যায়। মহানায়কের সমসাময়িক বাংলা সিনেমাজগতের বহু কলাকুশলী এখন অশক্ত ও অসুস্থ, যেমন সহকারী চিত্রগ্রাহক গোকুল পান্ডে— কাজ করেছেন সন্ন্যাসী রাজা, সিস্টার, সমাধান, কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী, দর্পচূর্ণ, দেবদাস, বাঘবন্দী খেলা-র মতো ছবিতে। বর্ষীয়ান এই মানুষটি, এবং সঙ্গে কার্তিক মণ্ডল, গৌর কর্মকার, বীরেশ চট্টোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তন কলাকুশলীদের চিকিৎসায় আর্থিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছেন কর্তৃপক্ষ, ২৪ জুলাই, মহানায়কের প্রয়াণদিনে বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান উত্তম মঞ্চে। স্মরণসন্ধ্যায় গান গাইবেন শহরের বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীরা।
বাঘেদের জন্য
১৯৭৩-এ শুরু ‘প্রোজেক্ট টাইগার’-এর— বাঘ এক বিপন্ন বন্যপ্রাণ, তাকে রক্ষা করা দরকার, এই ভাবনা থেকে। তার আগে জঙ্গল সাফারি হত বন্দুক নিয়ে, বাঘের চামড়া-বেচা বিদেশি মুদ্রা নিয়ে চলত লোভের খেলা। সেই পরিস্থিতি পাল্টেছে, বাঘ ও তার সংরক্ষণ, টাইগার রিজ়ার্ভের প্রয়াস, সবই এখন ইতিবাচক; এখন প্রয়োজন বাঘের বাসভূমি সংরক্ষণ, জঙ্গলের পাশে থাকা মানুষদের সঙ্গে নিয়ে প্রোজেক্ট টাইগার-এর অগ্রগমন। এই ভাবনা থেকেই ‘শের’ ও প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন একত্রে পালন করবে কলকাতার বাঘ দিবস, ২৫ জুলাই বিকেল সাড়ে ৪টেয় লা মার্টিনিয়ার ফর গার্লস স্কুল হল-এ। নাগরিক সংবর্ধনা পাবেন বন্যপ্রাণ সংরক্ষণে যুক্ত সাধারণ মানুষ ও বনকর্মীরা, থাকবেন বন্যপ্রাণ তথ্যচিত্র-নির্দেশক নাল্লামুথু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy