অপরিবর্তিত: রায় ঘোষণার পরে রাম মন্দির। শনিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
বন্ধ গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে লাগাতার অনুনয় করছেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) দুই কর্মকর্তা। তাঁদের দাবি, মন্দিরে ভোগ চড়াতে দিতে হবে। সেই ভোগ তাঁরা বিতরণ করবেন মন্দির থেকেই। অপর প্রান্তের ব্যক্তি গ্রিলে ঝোলানো তালা দেখিয়ে বললেন, “কিছুতেই সম্ভব নয়। কোথায় কী রায় ঘোষণা হয়েছে জানি না। এই মন্দিরের যা নিয়ম, তা-ই চলবে।”
শনিবার অযোধ্যা মামলার ‘ঐতিহাসিক’ রায় ঘোষণা নিয়ে যখন জোর আলোচনা চলছে নানা মহলে, তখন অযোধ্যা থেকে প্রায় ৯০০ কিলোমিটার দূরে গিরিশ পার্কের রাম মন্দির কাটাল আপাত উচ্ছ্বাসহীন আরও একটা দিন। মন্দির খোলা বা বন্ধ করা থেকে প্রসাদ বিতরণ— সবই চলল রোজকার নিয়ম মেনে। সেখানে জায়গা পেল না অতি উৎসাহী ভক্ত বা আরএসএসের কোনও দাবিদাওয়াই। বিকেল পাঁচটায় মন্দির খোলার পরে আরএসএসের কর্মকর্তাদেরও পুজো দিতে হল আর পাঁচ জনের মতোই। নিয়ম মেনে।
মন্দিরের ম্যানেজার দীনেশ শর্মা জানালেন, রাম-দর্শনের জন্য এ দিন সকাল থেকেই মন্দিরে উৎসাহী জনতার কমতি ছিল না। বেলা ১১টা নাগাদ দেশের শীর্ষ আদালত রায় ঘোষণার পর থেকেই মন্দিরের বাইরে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন তাঁরা। তবে কারও জন্যই মন্দিরের গেট খোলা হয়নি। এর মধ্যে কয়েক বার টহল দিয়ে গিয়েছে পুলিশের গাড়ি। দীনেশ বলেন, “পুলিশকেও বলে দেওয়া হয়েছে, কোনও বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। মন্দির চলবে অন্য দিনের মতোই।” দীনেশ জানাচ্ছেন, আদালতের একটি রায়ের জন্য এ দিন মন্দিরের স্বাভাবিক পরিবেশকে ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে চাননি মন্দির ট্রাস্টের লোকজন। তাই শুক্রবার রাতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ এসেছিল তাঁদের কাছে। সেই মতোই সব কাজ চলেছে। দীনেশ এ-ও দাবি করেন, এর আগেও রাজনীতি হতে পারে, এমন কোনও ধর্মীয় বিষয়ে গিরিশ পার্কের রাম মন্দির অংশগ্রহণ করেনি। এ প্রসঙ্গে অবশ্য মন্দির ট্রাস্টের তরফে কেউ কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
প্রায় ৮০ বছর আগে শেঠ সুরজমল জালানের হাত ধরে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে মন্দির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে শেঠ সুরজমল জালান ট্রাস্ট। মন্দিরের পাশাপাশি রয়েছে গ্রন্থাগার ও মেয়েদের স্কুলও। বৃষ্টির কারণে এ দিন একটু আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছিল সেই স্কুল। তবে বিকেল পাঁচটার পরে এ দিন প্রবল বৃষ্টির মধ্যেই নিয়ম মেনে খোলা হয় রাম মন্দিরের গেট। প্রতিদিনের মতো মন্দির খোলা ছিল রাত ১০টা পর্যন্ত। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বিকেলের পরে ভক্ত সমাগম তো বাড়েইনি, উল্টে প্রবল বৃষ্টিতে মন্দিরের চাতাল প্রায় ফাঁকা। মন্দিরের মাঝ বরাবর রাম, লক্ষ্মণ ও সীতার মূর্তিতে মালা চড়িয়ে অপেক্ষায় থাকা পুরোহিত বললেন, “আজ সে রকম লোক নেই। তবে আরএসএসের দশ-বারো জন এসেছিলেন। তাঁরা ১৫টা লাড্ডু চড়িয়ে চলে গিয়েছেন। এর বাইরে সে রকম কোনও ভোগ চড়েনি।” পাশেই ফাঁকা সরস্বতী ও শিবের মূর্তির
সামনের জায়গাও।
এ সবের মধ্যেও যেন একটু অন্য সুর মন্দিরের বর্ষীয়ান কর্মী পুরানমল আলমলের। গর্বিত হাসি হেসে তিনি বলেন, “সকালেই জানতাম যে রায় কী হতে চলেছে।” এ সব কথা লেখা হবে কি না জেনে নিয়ে তাঁর মন্তব্য, “সত্যিই যা বিশ্বাস করি, তা বলতে ভয় কী!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy