বুধবার, অষ্টমীর রাতে ঘড়িতে তখন সাড়ে ১২টা। শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের পুজো দেখতে পথে জনজোয়ার। নিজস্ব চিত্র
মাঝরাতে প্রশাসনের তরফে শহরের একটি পুজোয় দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরে যে প্রশ্নটি নানা মহলে সব চেয়ে বেশি ঘুরপাক খেয়েছে তা হল, একটি পুজোয় দর্শক-প্রবেশ বন্ধ হলেও বাকি শহরের কী হবে? যদিও অভিযোগ, ভিআইপি রোডের সেই পুজো কমিটির তরফে পাড়ার লোকের জন্য বিলি করা গেটপাস ব্যবহার করে নবমীর রাতে বাইরের কিছু দর্শনার্থী প্রতিমা দেখেছেন।
পুলিশের একাংশের অবশ্য দাবি, নৈশ কার্ফু তুলে মানুষকে রাস্তায় নামতে উৎসাহ দেওয়া হলে পরিস্থিতি যে এমনই হতে চলেছে, তা অনেকেই আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। এমনকি, নৈশ কার্ফু তুলে নেওয়ার ঘোষণা হওয়ার পরে নিচুতলার বহু পুলিশকর্মী নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন শীর্ষ আধিকারিকদের। কিন্তু কোনও কিছুতেই আমল দেওয়া হয়নি। যার ফল, পুজোর ক’দিন দিকে দিকে এই বেপরোয়া ভিড়।
নবমীর রাতে সেই ভিড় ছাপিয়ে গিয়েছে পুরনো সমস্ত হিসাব। লালবাজার কন্ট্রোলের এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘করোনাকালের শারদোৎসব হওয়ায় কোন পুজোয় কত বা পুজোর কোন দিনে কত লোক রাস্তায় নেমেছেন, সেই হিসাব গত বছর থেকে করা হয় না। করলে দেখা যেত, এ বারের নবমীর রাত ভিড়ের পুরনো বহু রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে।’’ পুলিশের দাবি, বৃষ্টির সময়টুকু ছাড়া বাকি সময়ে শহরের সব বড় মণ্ডপের সামনে জনতার ঢল ছিল লাগামছাড়া। দূরত্ব-বিধি মানা কোন ছার, অনেকে মাস্ক পরে থাকার দায়িত্বটুকুও পালন করেননি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র যানজট। যার সব চেয়ে বড় উদাহরণ উল্টোডাঙা মেন রোড। যেখানে শ্রীভূমির পুজো-জনতার জেরে অ্যাম্বুল্যান্সও যাওয়ার সুযোগ ছিল না বহু ক্ষেত্রে।
হিন্দুস্থান পার্কের পুজোকর্তা সুতপা দাস বললেন, ‘‘এর দায় অবশ্যই শ্রীভূমির পুজোকর্তাদের। সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছিল, যাতে মানুষ আকৃষ্ট হন, মণ্ডপের সামনে এমন কিছু করা যাবে না। কিন্তু উঁচু মণ্ডপ বা লেজ়ার-শো করে সেই জনতাকে আকর্ষণ করারই চেষ্টা হয়েছে।’’ শহরের অন্য মণ্ডপগুলির ভিড় নিয়ে সুতপাদেবীর মন্তব্য, যে পুজো কমিটি ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানেই এই ব্যাপার দেখা গিয়েছে। চেতলা অগ্রণীর পুজোকর্তা সমীর ঘোষের দাবি, ‘‘মানুষকে সত্যিই রোখা যাচ্ছে না। কিন্তু শ্রীভূমির মতো এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে মানুষ আরও উৎসাহিত হন।’’ কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা সৌমেন দত্ত জানালেন, এই উৎসাহে ইন্ধন না দিতেই তাঁরা দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ, পরের দু’দিন শনি এবং রবিবার হওয়ায় ছুটির বাজারে মানুষের রাস্তায় নেমে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে সৌমেনবাবুর দাবি।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোকর্তা সুব্রত মুখোপাধ্যায় যদিও বললেন, ‘‘পুজো কমিটি ছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ-প্রশাসনেরও বাড়াবাড়ি আছে। মানুষও দায়িত্ব ভুলেছেন।’’ শ্রীভূমির পুজোকর্তা দিব্যেন্দু গোস্বামীর উত্তর, ‘‘আমাদের নাম সামনে এসেছে, বাকি শহরের ভিড়ের দায় নেবে কে? তাছাড়া কেউ অসদুপায়ে গেটপাস সংগ্রহ করে প্রতিমা দেখলে তাঁদের আমরা আটকাব কী ভাবে?’’ ২০১৫ সালে এমনই উচ্চতা আর ভিড়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশপ্রিয় পার্কের পুজোকর্তা সুদীপ্ত কুমার বললেন, ‘‘আমি শ্রীভূমির সঙ্গে সমব্যথী। তবে মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই প্রশাসনকে এমন পদক্ষেপ করতে হয়েছে, সেটা বুঝতে হবে।’’ কিন্তু এমন পদক্ষেপ এত দেরিতে কেন? প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্তা দাবি করেছেন, সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করার এক্তিয়ার তাঁদের নেই। উৎসবের দিনগুলিতে প্রশাসন বুঝিয়ে কাজ উতরে দেওয়ার পক্ষে। সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে কি? ভিড়ের চিত্র অবশ্য অন্য কথাই বলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy