Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Stop Dowry

পণের দাবিতে ‘খুন’ বধূ, ধৃত স্বামী-শ্বশুর

ধৃতদের শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

নাফিসা নাজ।

নাফিসা নাজ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০০
Share: Save:

মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়ে প্রথম ফোনটা এসেছিল তাঁর বাড়ির মালিকের কাছ থেকে। তড়িঘড়ি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে মা দেখেন, একটি ঘরের মধ্যে রাখা রয়েছে তাঁর মেয়ের নিথর দেহ। গলায় নখের আঁচড়, কাটা দাগ। শ্বশুরবাড়ির কেউই সেখানে নেই। পণের দাবিতে ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। শুক্রবার সকালে, কড়েয়া থানা এলাকার ঘাসবাগানের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম নাফিসা নাজ (২৫)। ইতিমধ্যেই মৃতার স্বামী ও শ্বশুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ধৃতদের শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। লালবাজারের এক কর্তা বলছেন, ‘‘বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত বছরের জুলাইয়ে ঘাসবাগানের বাসিন্দা শাহনওয়াজ হোসেনকে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন স্থানীয় কটন মিলের বাসিন্দা নাফিসা। তাঁর মা সায়েদা বানুর অভিযোগ, ‘‘বিয়ের সময়েই ওদের পণের সমস্ত দাবি মেটানো হয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরে ফের মোটা টাকা দাবি করে। কিছু দিন ধরে ওরা ২৫ লক্ষ টাকা, ফ্ল্যাট এবং একটি মোটরবাইকের দাবি করছিল। ওই দাবি না মেটাতে পারায় মেয়েকে মারধর করত।’’

পুলিশ জানিয়েছে, তপসিয়ার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন নাফিসা এবং শাহনওয়াজ, সেই বাড়িমালিক এ দিন সকালে নাফিসার মাকে ফোন করে জানান যে, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এর কিছু ‌ক্ষণের মধ্যেই এক ব্যক্তি তাঁকে জানান, নাফিসাকে ঘাসবাগানে তাঁর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সায়েদার অভিযোগ, ‘‘সেখানে পৌঁছে জামাই বা মেয়ের শ্বশুরবাড়ির কাউকে খুঁজে পাইনি। একটা ঘরে গিয়ে দেখি, মেয়ের দেহ পড়ে রয়েছে। গলায় নখের আঁচড়, কাটা দাগ। ওকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে। অথচ ওরা রটিয়েছে যে, আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক।’’

নাফিসার বাড়ির লোকজন জানিয়েছেন, পণের দাবিতে শ্বশুরবাড়িতে অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে মাসকয়েক আগে মায়ের কাছে চলে এসেছিলেন নাফিসা। সে সময়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নাফিসাকে একটি মোবাইল ফোন কিনে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই ফোন শাহনওয়াজ ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানিয়েছে, পণের দাবি না মেটানোয় এক সময়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নাফিসাকে সেই বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছিল। তার পরেই তপসিয়ার কাছে একটি ভাড়া বাড়িতে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন নাফিসা। অভিযোগ, সেখানেও তাঁর উপরে নিয়মিত অত্যাচার চালানো হত। মাস চারেক আগে অন্তঃসত্ত্বা নাফিসার গর্ভস্থ সন্তানকেও তাঁর স্বামী নষ্ট করে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন সায়েদা।

শুক্রবার কড়েয়া থানায় জামাই-সহ শ্বশুরবাড়ির সাত সদস্যের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন সায়েদা। এর পরে সে রাতেই শাহনওয়াজ এবং শ্বশুর বাদশা হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে সরকারি আইনজীবী সৌরীন ঘোষাল বলেন, ‘‘পণের দাবিতে বধূকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে। ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করার প্রয়োজন রয়েছে।’’ তার পরেই তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।

অন্য বিষয়গুলি:

Stop Dowry Housewife Husband death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy