ফাইল চিত্র।
এ যেন পুজোর উন্মাদনার ‘অ্যাকশন রিপ্লে’। ভাইরাসের ভ্রূকুটি থাকলেও কলকাতায় ভোজবিলাসের বহর যখন কার্যত প্রাক-অতিমারি যুগের রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। বছর শেষেও একই ধাঁচে শহরের ভাবগতিক।
তবে লক্ষণীয়, জনপ্রিয়তম ভোজশালাগুলিও এখন অ্যাপ নির্ভর কারবারকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হচ্ছে। এবং ব্যবসার একটা বড় অংশই এখন অনলাইনের দখলে। হোটেল-রেস্তরাঁ অ্যাসোসিয়েশনের হিসেব অনুযায়ী, পুজোয় রেস্তরাঁ-কারবার ২০১৯-এর ব্যবসার তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি বিস্তার লাভ করেছিল। বিভিন্ন রেস্তরাঁ কর্তার মতে, এর ২০-২৫ শতাংশই হয়েছে বাড়িতে বসে খাবার আনানোর কারণে। পার্ক স্ট্রিটের ট্রিঙ্কাজ বা সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের চ্যাপ্টার টু এ বিষয়ে একই পথের পথিক। বছর শেষের কলকাতা মানে আজও সাহেবিয়ানার সুরভিও বটে। এবং ভোজপাতেও তার স্পষ্ট প্রতিফলন। বড়দিনের সব ধ্রুপদী খানাই উৎসব মরসুম জুড়ে মজুত রেখেছে ট্রিঙ্কাজ। তাতে মধুরেণ সমাপয়েতের ব্র্যান্ডি বাটার পুডিং থেকে আনারসখণ্ড শোভিত পর্ক চপ, মাখন মোলায়েম লবস্টারেরও অভাব নেই। পার্ক স্ট্রিটের বিস্মৃত তারকা স্কাইরুমের অনুপ্রেরণার কথা বলছে চ্যাপ্টার টু। ক্র্যানবেরি, রোজমেরি, বেদানার সসে টার্কি, বেকন ঠাসা টার্কি, নধর শাতোব্রিয়াঁ বিফ রোস্ট, রকমারি পিকিং ডাক ইত্যাদিও রয়েছে তাদের আস্তিনে।
নৈশ নাচাগানার টান ছাপিয়ে এ বার বছর শেষে খাবারের উৎকর্ষই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। তাতে তুলনায় আনকোরা কয়েকটি রেস্তরাঁ বা কাফেও রয়েছে পুরো ভাগে। গল্ফ গ্রিন ও লেক ভিউ রোড়ের লা’স্তা কাফের সাবেক সাহেবি আমেজ। মুলিগাটানি সুপ, আপেল সসে পর্ক বেলি, স্যামন টোস্ট, টার্কির রকমারি রয়েছে। গোলপার্কের ট্রাইব কাফের চিকেন স্ত্রগানফ, পর্ক চপ প্ল্যাটার, বেকড ফিশ ইত্যাদিরও ইদানিং বেশ নামডাক।
লেক রোডের কাফে ড্রিফ্টারে সাবেক ‘ক্যালকাটা কন্টিনেন্টালের’ সঙ্গে একেলে খানা। রেড ওয়াইন সসে হ্যামে মোড়া চিরকেলে চিকেন, স্ত্রগানফ, গ্রিল্ড মাংসের সঙ্গে মাংসবহুল বার্গারও আছে। শেষপাতে ডেথ বাই চকলেটের আকর্ষণ। শহরের এই শীত নতুন, পুরনো গ্যাস্ট্রোপাব বা স্বাদু টাকনা-বিশিষ্ট পানশালারও দখলে। মাঙ্কি বারের সামোসা চাট, কাসুন্দি চিকেন, নাগা পর্কও উদ্যাপনের অঙ্গ। শহরের মোগলাই খানার ঐতিহ্যে নয়া সংযোজন দিল্লির করিম। আবার মুম্বইজাত করিমস কিচেনও স্বমহিমায়। পার্ক স্ট্রিট, সেক্টর ফাইভে মাটন, চিকেন, ভেটকি, চিংড়ির তন্দুরি, গালাউটিতে তারা মাত করছে।
গড়িয়াহাটের একটি খোলামেলা পার্টি পরিসর হল ক্লাউড সোশ্যাল রুফটপ লাউঞ্জ। সুপ থেকে মিষ্টিতে তারা নিরামিষেই মনোযোগী। মেনুটি একযোগে দেশি ও সাহেবি পদের সমাহার। কচকচে ওয়াটার চেস্টনাটের সুপ, স্ট্রবেরির মাদকতাময় স্যালাডের সঙ্গে ছানার গালাউটি তারা রেখেছে। শেষ পাতে জর্দা পোলাও থেকে পানাকোটা, প্লাম কেক, চকোলাভাও হাজির। মিষ্টির নতুন ঠিকানা খুঁজলে পার্ক স্ট্রিটের নিরামিষাশী বার্মা বার্মাকেও ভোলা যাবে না। তাদের ডুরিয়ান আইসক্রিম বা বিশেষ বর্মী ফালুদাও বাঙালির নানা সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ মনে পড়ায়।
শহরের ভোজ-মানচিত্র এখন আর সাবেকি চিনেপাড়া, পার্ক স্ট্রিট বা গড়িয়াহাটে আটকে নেই। বেহালায় তাওজ কিচেন শহরের নতুন, পুরনো চিনে ঘরানা মিশিয়ে পর্ক রিবস, ঝাল-নুন চিকেন, মাছ বা মরিচ ল্যাম্ব, সিচুয়ান স্টাইল লোটাস স্টেমের মতো নানা নিদর্শন মেনুতে রেখেছে। লক্ষণীয়, অনেক রেস্তরাঁই হোম ডেলিভারিতে কিছু ছাড় দিচ্ছে। বদলানো পরিস্থিতিতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকা দশা কারও কারও জন্য নতুন সম্ভাবনাও খুলে দিয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার কেয়াতলার ‘ক্যালকাটা ডেলি’র মেনুতে টেক অ্যাওয়ের কথা ভেবে রকমারি ঠান্ডা মাংসের ছড়াছড়ি। সেই সঙ্গে বাড়ি বসে চাখার উপযোগী অন্য কিছু পদও। পেস্ট্রির আদলে চমৎকার বিফ বা মাটন ওয়েলিংটনে তারা এ মরসুমে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy