কিফ-এর ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী। গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায়। — নিজস্ব চিত্র।
আবহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা, চোখের সামনে চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করছেন জ্যোতি বসু। তাঁর পাশে শতাব্দী রায় ও বাংলাদেশের অভিনেত্রী চম্পা। ২০০১-এর উদ্বোধনে ফ্রেমবন্দি নতুন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখোপাধ্যায়, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। তিন জনই এখন জীবনের পরপারে।
কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (কিফ) মানে, সময়-যানে এমন আশ্চর্য সফরও বটে। শিশির মঞ্চের পাশে গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় কিফের ৩০ বছরের ইতিহাস মেলে ধরছে একটি প্রদর্শনী। অনেক আধা প্রবীণও স্মৃতিকাতর, ১৯৯৮-এ উৎসবের সমাপ্তির ছবিতে লোরকার বিখ্যাত নাটক অবলম্বনে ‘ইয়ারমা’ দেখেছিলাম! ১৯৯৭-এ একসঙ্গে ত্রুফো, তারকোভস্কির ছবির সম্ভার। ওটিটি যুগের অত আগে যা বিরল প্রাপ্তি। নন্দনে উদ্বোধনী ছবি তারকোভস্কির ‘মিরর’-এর প্রবেশপত্র পেতেও তুমুল হাহাকার।
নেতাজি ইনডোরের উদ্বোধনী আসরে অনেক বেশি লোক বলিউডি তারকা দেখতে ঢুকেছেন! তবে উদ্বোধনী ছবির আকর্ষণ এখন ফিকে। এ বার ধনধান্য প্রেক্ষাগৃহেও টিভিতে বহু বার দেখা ‘গল্প হলেও সত্যি’ দেখতে দর্শক কমই ছিল।
বাম আমলের শেষে পালাবদলের পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের খাসতালুক বলে পরিচিত নন্দনে পুরনো ফলকের পাশে বিরাট নতুন ফলক বসেছে। বিগত রাজনৈতিক জমানার বেশ কিছু ছবি নন্দনের দোতলা থেকে তুলনায় জনবিরল নন্দন-৩ এ স্থানান্তরিত। কিফের প্রদর্শনী কিন্তু ইতিহাসের প্রতি বিশ্বস্ত। বিভিন্ন বছরের অতিথি-তালিকা, ছবির আকর্ষণের খুঁটিনাটি রয়েছে। এক পাশে সিপিয়া আভায় প্রাক্-২০১১ সালের উৎসবের সচিত্র ফিরিস্তি। অন্য পাশে ট্যাবলো, পোস্টারে মমতার জমানার সব মুহূর্ত।
প্রদর্শনী অবশ্য আরও রয়েছে। নন্দনের নীচের খোলা উঠোনে শতায়ু তপন সিংহকে নিয়ে প্রদর্শনী দেখে মুগ্ধ নাটক ও চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব জব্বর পটেল। প্রদর্শনীর প্রধান রূপকার সুদেষ্ণা রায়কে বলছিলেন, ‘‘পুণের সিনে উৎসবে এই প্রদর্শনীটা নিয়ে যেতে চাই।’’ গগনেন্দ্র প্রদর্শশালার দোতলায় বিদূষী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র পরিচালক অরুন্ধতী দেবীর প্রদর্শনীটি মেলে ধরতে সাহায্য করেছেন ইতিহাসবিদ তপতী গুহঠাকুরতা, গবেষক মৃণালিনী বাসুদেবন। অরুন্ধতীকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনী ডিসেম্বরেই কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটিতে শুরু হওয়ার কথা। শান্তিনিকেতনের ছাত্রী অরুন্ধতীর রবীন্দ্রনাথ বা গান্ধীর সান্নিধ্যে আসার কাহিনি বলা হয়েছে। হরিসাধন দাশগুপ্তের শতবর্ষের প্রদর্শনীতে ১৯৮২ সালে তাঁকে লেখা বন্ধু সত্যজিৎ রায়ের চিঠি। সত্যজিতের নকশায় সোনালি-হরিসাধনের বিয়ের কার্ডও প্রদর্শনীর প্রাপ্তি। হরিসাধন, সোনালি, ইনগ্রিড বার্গম্যানদের সম্পর্ক বা অরুন্ধতী-তপন সিংহের দাম্পত্য কথায় উঠে আসে বাঙালির পূর্বপুরুষ, পূর্বনারীর সামাজিক ইতিহাসের দলিল। শতায়ু ক্লাবের সদস্য মার্চেলো মাস্ত্রোয়ানি, মার্লন ব্র্যান্ডোকে নিয়ে প্রদর্শনীও বেশ আকর্ষক। তপন সিংহ ফাউন্ডেশন, অরিজিৎ মৈত্র, অরুণ রায়, শৌনক চক্রবর্তীরা প্রদর্শনীগুলি সফল করতে সাহায্য করেন।
কিফ মানে বিকেলে নন্দনের সিঁড়িতে ঠাসা ভিড়। উৎসব চত্বরে মঞ্চে টিভি তারকাদের নিয়ে আদিখ্যেতায় বিদগ্ধ সিনেফিলের ভ্রুকুঞ্চন। আবার নকল গেস্ট কার্ড, ডেলিগেট কার্ড দেখিয়ে হলে ঢোকার চেষ্টারও বিক্ষিপ্ত অভিযোগ। এর মধ্যে সবার জন্য খোলা প্রদর্শনীর আসরে সিনে-ইতিহাস চর্চা ভাল লাগার রেশ রেখে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy