কলকাতা টাঁকশাল।
আগামী পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে নতুন মুদ্রা আইন জারি হবে, জানাচ্ছে সমাচার দর্পণ, ১৮৩৫ সালের ২৯ অগস্ট। সমগ্র ভারতবর্ষে কেবল একটিই প্রকারের মুদ্রা চালু থাকবে, আর এই নতুন মুদ্রায় “এমত আর কোন কথাটি থাকিবে না যে ইহা দিল্লীর জবন বাদশাহের মুদ্রা।” মুদ্রা তৈরি হবে দিল্লির মোগল বাদশার নামে— এই শর্তেই ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বাংলার নবাব প্রথম মুদ্রা তৈরির অধিকার দিয়েছিলেন। মুর্শিদাবাদের প্রযুক্তি দিয়ে সোনা ও রূপার মুদ্রা তৈরির জন্য কলকাতায় খোলা হল প্রথম টাঁকশাল। পলাশির যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা দ্বিতীয় টাঁকশাল স্থাপন করে ১৭৯০ সালে, সেন্ট জন’স চার্চের পশ্চিম দিকে। তখনও মুদ্রা তৈরিতে চলছে হস্তচালিত যন্ত্রের যুগ। টাঁকশালের যন্ত্রপাতি তৈরির তত্ত্বাবধানের জন্য গভর্নর জেনারেল আলাদা দায়িত্ব দিয়েছিলেন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্স-এর দুই আধিকারিককে। তবে কিছু যন্ত্র ও প্রকৌশলী খাস বিলেত থেকেও আসত। এমনই এক কর্মী ১৮১৯ সালে এই টাঁকশালেই জুনিয়র অ্যাসে মাস্টার হিসেবে কাজে যোগ দিলেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল মুদ্রা তৈরির জন্য ব্যবহৃত ধাতুর গুণমান নিয়ন্ত্রণ করা। ইনিই পরবর্তী কালের বিখ্যাত ভারততত্ত্ববিদ, স্যর জেমস প্রিন্সেপ।
কিন্তু কলকাতায় মুদ্রা তৈরির যথার্থ জোয়ার এল ১৮৩৫ সালে, স্ট্র্যান্ড রোডে কলকাতার তৃতীয় টাঁকশালটি স্থাপনের পর। আথেন্সের ‘টেম্পল অব মিনার্ভা’র অনুপ্রেরণায় ছয় বছর ধরে এই ইমারতটি তৈরি হয়েছিল সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার উইলিয়াম নেয়ার্ন ফোর্বস-এর নেতৃত্বে। প্রথমে শুধু রৌপ্যমুদ্রাই তৈরি হত এখানে। সমাচার দর্পণ জানাচ্ছে, পাঁচটি বাষ্পীয় কল তথা স্টিম ইঞ্জিনের সাহায্যে সাত ঘণ্টায় তিন লক্ষ মুদ্রা তৈরির ক্ষমতা ছিল টাঁকশালটির। এই স্টিম ইঞ্জিনের কয়লা জোগানের দায়িত্ব ছিল দ্বারকানাথ ঠাকুরের ‘কার অ্যান্ড টেগোর’ কোম্পানির। ১৮৬৫ সালে এই টাঁকশালে তাম্রমুদ্রা তৈরি শুরু হয়, ‘সিলভার মিন্ট’ ও ‘কপার মিন্ট’ নামে পরিচিত হয় পৃথক ব্যবস্থাগুলি। বিশ শতকের গোড়ায় টাঁকশাল সম্প্রসারণের পর সেখানে তার নিজস্ব পিতল ও লোহা ঢালাইয়ের সুবিধা, কামারশালা ও কাঠের কাজের সব ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিল।
তখনকার কলকাতার এক দ্রষ্টব্য ছিল এই টাঁকশাল (ছবি)। এখানকার কর্মকাণ্ড ঘুরে দেখতে রোজ সর্বাধিক পঞ্চাশ জন দর্শনার্থীকে ‘পাস’ দিতেন টাঁকশালের অধ্যক্ষ। গলানো রুপো ছাঁচে ঢালার সময় ছিল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে, তা দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় জমাতেন। ১৯৫২ সালে আলিপুরের কাছে তারাতলায় নতুন টাঁকশাল উৎপাদন শুরু করার পর স্ট্র্যান্ড রোডের এই পুরনো ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়, আস্তে আস্তে চলে যায় লোকচক্ষুর আড়ালে। ভগ্ন জীর্ণ দশা, তবু আজও শহরের বুকে দাঁড়িয়ে মিনার্ভার সেই মন্দির। আজ লক্ষ্মীপুজো, এই সূত্রে কলকাতার মুদ্রা তৈরির ইতিহাস আর ভুলে যাওয়া টাঁকশালকে এক বার ফিরে দেখলে ক্ষতি কী!
অপ্রকাশিত
ভগিনী নিবেদিতার (ছবি) অপ্রকাশিত বেশ কিছু চিঠিপত্র হাতে এসেছিল, নিবেদিতার বোন মে উইলসনের নাতি ক্রিস অর্পেন এবং জোসেফিন ম্যাকলিয়ডের বোনঝি আলবার্টার পরিবারসূত্রে। প্রবুদ্ধ ভারত পত্রিকায় বেরোয় চিঠিগুলি, কিন্তু বাংলা অনুবাদ হয়ে ওঠেনি। নিবেদিতার চিঠির বাংলা অনুবাদ করা সহজ কাজ নয়, অনুবাদ সঙ্কলন ও সম্পাদনার সেই দুরূহ কাজই করেছেন লন্ডননিবাসী সারদা সরকার। নিবেদিতার লেখা মূল ইংরেজি চিঠি, অবলা বসুর অপ্রকাশিত চিঠি, সেই সঙ্গে চিঠিগুলি সংগ্রহের বিবরণ, নিবেদিতার পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যদের বিবরণে সমৃদ্ধ বইটি— ভগিনী নিবেদিতার অপ্রকাশিত পত্রাবলী এবং অন্যান্য অপ্রকাশিত রচনা (প্রকাশক: দে পাবলিকেশনস)। আনুষ্ঠানিক প্রকাশ আগামী ৩১ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৪টায়, রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্কে। আজ নিবেদিতার জন্মদিনে এল সুসংবাদটি।
খনির গভীরে
ভারতে প্রধান জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা, দেশের ৫৫% শক্তি-চাহিদা এখনও সে-ই পূরণ করছে। জনসংখ্যা, অর্থনীতি, জীবনের মানের ক্রমোন্নতির পথে এই চাহিদা বাড়বে বই কমবে না। ‘হার্ড কোল’ বলতে যা বুঝি, তা ছড়িয়ে আছে মূলত দেশের ২৭টি প্রধান কয়লাখনি অঞ্চলে। কলকাতা কি খবর রাখে মাটির তলার গভীর, অন্ধকার কয়লাখনির? কী ভাবে কাজ হয় সেখানে, কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, কী-ই বা তার চ্যালেঞ্জ, আগ্রহীদের তা বোঝাতে বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়ম (বিআইটিএম) নতুন করে সাজিয়েছে তাদের ‘মক-আপ’ কয়লাখনিটি। ৫৪০ বর্গমিটার জুড়ে ষাটেরও বেশি প্রদর্শ, রীতিমতো অভিজ্ঞতা। গত ১৮ অক্টোবর খুলে গেল, দেখা যাবে দেওয়ালি ও হোলির দিন ছাড়া রোজ সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা।
কমিকস-কীর্তি
বাঙালির বাঁটুল নন্টে-ফন্টে হাঁদা-ভোঁদা অরণ্যদেব টিনটিন সবই আছে, কিন্তু অদ্যাবধি তার পূর্ণাঙ্গ বাংলা কমিকস পত্রিকা ছিল না। গত ক’বছরে পড়শি বাংলাদেশে কমিকস নিয়ে বিস্তর পরীক্ষামূলক কাজ হয়েছে, সেই তুলনায় এখানে কাজ বেশ কম। সেই ফাঁক ভরাতেই এল Com-কথা, বাংলার ‘নিজস্ব ও প্রথম সম্পূর্ণ রঙিন কমিকস পত্রিকা’। সম্পাদনায় বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায় মনোজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও পিনাকী দে; প্রবীণ-নবীন সতেরো জন শিল্পীর আঁকা-লেখায় সতেরোটি নতুন ও ভিন্ন স্বাদের কমিকস। কমিকস মাত্রই যে কেবল শিশুপাঠ্য নয়, আর বাংলা কমিকসের ভবিষ্যৎও অন্ধকারে ডুবে নেই— তা প্রমাণ করতেই ওঁদের এই প্রচেষ্টা। প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশ পেল অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে।
তর্পণ
সত্যজিৎ রায়ের জলসাঘর ছবিতে রোশন কুমারীর কত্থক নৃত্যে তবলা সঙ্গত করতে দেখা গিয়েছিল শৌকত আলি খানকে। উস্তাদ বিলায়েত খান ও ইমরাত খানের সর্বক্ষণের তালচর্চার সঙ্গী, জন্ম ১৯১৭-তে উত্তরপ্রদেশে, তবলাসাধনা উস্তাদ অজ্জন খান, মসিত খান ও উস্তাদ আহমদ জান থিরাকুয়া সাহেবের তত্ত্বাবধানে। ১৯৫৪-তে কলকাতায় তানসেন সঙ্গীত সম্মেলনে আমন্ত্রিত শিল্পী ছিলেন শৌকত, তিনতালের লহরা ও স্বরচিত সাড়ে এগারো মাত্রার ‘উচক’ তাল পরিবেশনায় মুগ্ধ করেন সবাইকে। জীবনস্মৃতি আর্কাইভ-এর ধারাবাহিক দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনা ‘পঞ্চশিখা’-র একটি পর্ব নিবেদিত শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধায়: রয়েছে তাঁর কণ্ঠ ও তবলাবাদনের অডিয়ো, তাঁর জীবনকৃতি নিয়ে প্রণবকুমার সেনের আলোচনা। দেখা যাচ্ছে জীবনস্মৃতি আর্কাইভের ইউটিউব চ্যানেলে।
জরুরি কাজ
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ঘটেছে ভাষার; দু’টো ভাষা মিলেমিশে নতুন ভাষার জন্ম, বা মূল ভাষার বিলোপেরও সাক্ষী মানবসভ্যতা। এমনই এক বিলুপ্তপ্রায় ভাষা টোটো। ভাষার বেঁচে থাকায় জরুরি ভূমিকা শব্দকোষের; টোটো ভাষার এত দিন কোনও শব্দকোষ ছিল না— জরুরি সেই কাজটিই এ বার হল ‘ক্যালকাটা কম্পারেটিস্টস ১৯১৯’-এর উদ্যোগে। আঞ্চলিক ভাষা সংরক্ষণ সংক্রান্ত গবেষণা ও চর্চা করে থাকে এই গোষ্ঠী, তাদেরই এক প্রকল্পের অধীনে ভক্ত টোটো তৈরি করেছেন টোটো শব্দ সংগ্রহ, টোটো-বাংলা-ইংরেজি ত্রিভাষিক শব্দকোষ— প্রকাশ করেছে ভাষা সংসদ। বৌদ্ধ ধর্মাঙ্কুর সভাগৃহে ‘ক্যালকাটা কম্পারেটিস্টস ১৯১৯’-এর চতুর্থ প্রতিষ্ঠাদিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হল বইটির।
বৃহতের খোঁজ
শিলচরের ছেলে শান্তিনিকেতনে কলাভবনে পড়তে এলেন বৃত্তি নিয়ে, ১৯৫৯ সালে। নন্দলাল বসুর থেকে শিখলেন শিল্পছন্দ; বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজের কাছে শিখলেন ভাস্কর্যের ফর্ম ও উপকরণ-প্রকরণ। ১৯৬৯-এ ব্রিটিশ কাউন্সিল বৃত্তি নিয়ে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের গোল্ডস্মিথস-এ যাত্রা, মাতিস পল ক্লি সেজ়ান মদিগ্লিয়ানি ব্রাঙ্কুসি দেখে হল পশ্চিমি শিল্পদিগন্তের উন্মোচন। দেশে ফিরে শান্তিনিকেতনে চল্লিশ বছরেরও বেশি অধ্যাপনা করেন সুষেণ ঘোষ (১৯৪০-২০২৩)। শান্তিনিকেতনে তাঁর হাতের বিরাট মাপের ভাস্কর্যগুলি রসিকমাত্রেরই জানা, যা অজানা তা হল শিল্পীর ছোট পরিসরের, অন্তরঙ্গ ভাস্কর্যগুলিতে (ছবি) বৃহতের এষণা। জনচক্ষুর অগোচর সেই সব কাজ নিয়েই এ বছর প্রয়াত শিল্পীর রেট্রোস্পেক্টিভ স্তরের প্রদর্শনী ‘লিরিক, স্টিল’ চলছে গ্যালারি-৮৮’এ। পুজোর ছুটির পর গ্যালারি খুলছে আগামী পরশু, প্রদর্শনী চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।
প্রত্যাবর্তন
কোভিড-পূর্ব কলকাতায় শেষ বেরিয়েছিল বহুরূপী পত্রিকা। গত বছর প্রয়াত হয়েছেন পত্রিকার দীর্ঘ দিনের কান্ডারি প্রভাতকুমার দাস, পত্রিকার ফিরে আসা নিয়ে মেঘ ঘনিয়েছিল তাতে। শারদোৎসবের অঙ্গনে সুসংবাদ, সম্প্রতি বেরিয়েছে পত্রিকার সাম্প্রতিকতম সংখ্যা (ছবি), অংশুমান ভৌমিকের সম্পাদনায়। পঁচাত্তর বছরের মাইলফলক ছোঁয়া নাট্যদলের নাট্যপত্র হিসাবেই নয় শুধু, বাংলার সমসাময়িক থিয়েটার চর্চার মূল্যায়নেও এ পত্রিকার গুরুত্ব সমধিক। সেই দায়িত্ব পালনের পথে নানা দিক স্পর্শ করেছে এই সংখ্যাটি: গত চার বছরে মঞ্চস্থ হওয়া সাতটি নাটক মুদ্রিত হয়েছে; স্বাধীন বাংলাদেশের নাট্যচর্চার সুবর্ণজয়ন্তীতে কলম ধরেছেন রামেন্দু মজুমদার মামুনুর রশীদ প্রমুখ; জন্মশতবর্ষে তাপস সেনকে নিয়ে লিখেছেন অসিত বসু। শঙ্খ ঘোষ ও প্রভাতকুমার দাসকে নিয়ে দেবাশিস মজুমদার ও ভবেশ দাশের লেখা; গ্রন্থ পরিচয় বিভাগে নাট্যবিষয়ক দশটি বই-পত্রিকার খোঁজ।
পাঠকের দরবারে
অসুস্থতার পরে সত্যজিৎ রায় যখন ছবিতে ফিরলেন, তাঁর সবচেয়ে বেশি নির্ভরতা ছিল ছেলের উপর। বলতেন, “শুটিংয়ের সময় প্রত্যেকটা নতুন টেক-এর আগে বাবু ফাইনাল লুক-টা দিয়ে ‘ওকে’ করলে তবে কাজ শুরু করতাম।” আর বাবু তথা সন্দীপ রায় বলেছেন, “সজাগ চোখের পর্যবেক্ষণেই মাথা ঘামাতাম সবচেয়ে বেশি।” তত দিনে তাঁর প্রথম ছবি ফটিকচাঁদ সারা। বাবার সহযোগী থাকার পাশাপাশি একের পর এক ছবি করেছেন বড় পর্দায়। দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে তাঁর এই পরিচালনার গুণপনাকে সম্প্রতি গ্রন্থিত করলেন প্রদীপ বিশ্বাস, সন্দীপ রায়: টেক টু বইয়ে। চিত্রভাষা কী ভাবে তাঁর ছবিকে প্রামাণ্য করে তোলে, তা নিয়ে মননশীল রচনাদি এ বইয়ে। ফিল্ম সোসাইটি আন্দোলন থেকে সিনেমার নন্দনতত্ত্ব, বিশিষ্ট পরিচালকদের নিয়ে তন্নিষ্ঠ আলোচনায় অনায়াস বিচরণ লেখকের, সন্দীপ রায়কে সর্বভারতীয় পাঠকের কাছে পৌঁছে দিলেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy