গাছ ভেঙে পড়ে রয়েছে রাস্তায়।
মাত্র মিনিট সাতেকের ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার বেগের ঝড়। আর বুধবার সন্ধ্যায় তাতেই লণ্ডভণ্ড গোটা শহর। অন্তত ৪০ টি গাছ ভেঙে পড়ল। দেওয়াল ভাঙল বেশ কিছু জায়গায়। মৃত্যু হল দু’জনের। আহত জনা পনেরো। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর। ঝড়ের সঙ্গে সঙ্গে নামা প্রবল বৃষ্টিতে জমল জল। সব মিলিয়ে উত্তর-দক্ষিণে, পূর্ব-পশ্চিমে কলকাতা অবরুদ্ধ। অফিস ফেরতা মানুষ নাজেহাল। দুর্ভোগ বাড়ল ট্রেনের ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ায়। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বন্ধ হল ট্রেন। মেইন লাইনেও ট্রেন চলেছে ধীরে। স্টেশনে থিক থিক করছে কালো মাথা। গভীর রাতেও রাস্তার মোড়ে মোড়ে অপেক্ষমান মানুষ। বাস নেই, ট্যাক্সি নেই, ওলা-উবের, অটো বিশাল টাকা হেঁকেছে।
এদিন ঝড়-বৃষ্টিতে সব থেকে বড় ঘটনাটি ঘটেছে যাদবপুরে। পুলিশ সূত্রের খবর, একটি গাছ ভেঙে পড়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালের উপর। গাছের চাপে দেওয়াল ভেঙে পড়ে ফুটপাতে বসে থাকা ৭ জন পথচারীর ওপর। তার ফলে মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। বাকিদের জখম অবস্থায় চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে যাদবপুর এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। একজন ভেল্টিলেশনে রয়েছেন। পাঁচজনের শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর চোট লেগেছে। মৃত যুবককে রাত পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ জানাচ্ছে, ওই যুবকেরা ফুটপাথে বসে ফ্রি ওয়াই-ফাই করছিলেন। তাঁদের কেউই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এদিন ঝড় ওঠার সময়ে রাস্তা পেরোচ্ছিলেন ৬৫ বছরের অমর মুখোপাধ্যায়। সেই সময় একটি গাছ তাঁর উপরে ভেঙে পড়ে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত ঘোষণা করা হয় অমরবাবুকে।
যানজটে আটকে পড়েছে গাড়ি।
এ দিন ঝড়ের পর শহরের বহু জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ে। সন্ধ্যা সাতটার কিছু পরে ওঠা ঝড়ে গাছ পড়ে রাস্তা যেমন বন্ধ হয়েছে, তেমনই বেশ কিছু অঞ্চলে তার ছিঁড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবাও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ঝড়-বৃষ্টির দাপটে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৮ পর্যন্ত কলকাতা বিমানবন্দরে কোনও বিমান নামতে পারেনি। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এর মাঝে পটনা থেকে আসা ইন্ডিগোর বিমান কলকাতায় নামতে না পেরে ভুবনেশ্বর চলে যায়। প্রায় ৮-১০টি বিমান ৪০ মিনিটের বেশি সময় ধরে কলকাতার আকাশে চক্কর কাটে। অনেক বিমানই ৪৫ মিনিটের বেশি দেরিতে ছাড়ে।
কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও ঝড়ের কবলে পড়েন। ময়দান এলাকা দিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে একটি গাছ আলোকস্তম্ভ নিয়ে মেয়রের গাড়ির ঠিক সামনেই ভেঙে পড়ে। অল্পের জন্য রক্ষা পান মেয়র। পরে তিনি বলেন, ‘‘ঝড় থামার সঙ্গে সঙ্গে পুরসভার কর্মীরা গাছ কাটার বৈদ্যুতিন করাত নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। ৩০-৩২টি দলকে রাস্তামুক্ত করতে নামানো হয়েছে।’’ পুরসভার কর্মীদের পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদেরও গাছ কাটার জন্য নামানো হয় বলে মেয়রের দাবি। যদিও রাত ১০ টা পর্যন্ত কলকাতার অনেক রাস্তাই বন্ধ ছিল।
ঝড়ের দাপটে গাছের ডাল ভাঙে বিধাননগর পুর নিগম এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। নিগমের মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল) দেবাশিস জানা জানান, সল্টলেকের নেতাজি পার্কের সামনে দাঁড়ানো একটি গাড়ির ওপরে একটি গাছ ভেঙে পড়ে। তার জেরে গাড়ির ভিতরে থাকা এক ব্যক্তি আটকে পড়েন। অবশ্য তাঁকে সুস্থ অবস্থাতেই উদ্ধার করা গিয়েছে বলেই জানান দেবাশিসবাবু। তিনি জানান, বড় গাছ তেমন না ভাঙলেও গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে সল্টলেকের বিভিন্ন জায়গায়। একই অবস্থা হয় বাগুইআটি, কেষ্টপুর সহ বিভিন্ন এলাকায়। রাতেই পুর নিগমের তরফ থেকে শ্রমিকদের কাজে নামানো হয়েছে দ্রুত রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করতে। লেকটাউনে গাছের ডাল ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ এর তার ছিঁড়ে পড়ে। তার জেরে রাত পর্যন্ত ভিআইপি রোড অন্ধকারে ডুবে থাকে।
রেল সূত্রের খবর, সোনারপুরে রেলের ওভারহেড তারের উপর গাছ ভেঙে পড়ায় সোনারপুর, বারুইপুর শাখায় রেল চলাচল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে বন্ধ। ছিল। রেল সূত্রে খবর, বেলঘরিয়ায় ওভারহেড তারের উপর তিনটি গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। হাওড়ায় ট্রেন চলেছে অতি ধীরে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানায়, নোয়াপাড়ায় গাছ পড়ার ফলে মেট্রো চলাচল ব্যহত হয়। ফলে দমদম পর্যন্ত মেট্রো চালাতে হয়।
যে সমস্ত রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়েছে সেগুলি হল হরিশ মুখার্জি রোড, জাজেস কোর্ট রোড, আহিরীপুকুর ফার্স্ট লেন, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউ, আমহার্স্ট স্ট্রিট, বেলেঘাটা মেইন রোড, বিপিন পাল রোড ও ল্যান্স ডাউন রোড ক্রসিং, হরিশ মুখার্জি রোড, রবীন্দ্র সরণি, শরৎ বোস রোড, এ জে সি বোস রোড, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, রাসবিহানী অ্যাভিনিউ, হাজরা রোড (হাজরা ল কলেজের সামনে)। রানিকুঠি এবং ইন্দ্রপুরী স্টুডিওর সামনেও গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। এছাড়াও হাওড়া, সল্টলেক, গোলপার্ক, লেক টাউনের বিভিন্ন রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়েও সমস্ত ধরনের গাড়ি রাস্তায় আটকে যায়। নবান্নেও এ দিন ঝড়ের দাপটে ভিআইপি গেটের সামনে মেটাল ডিটেকটর গেট উল্টে যায়।
রাতে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ জানায়, ঝড়ের পর বেলেঘাটা মেন রোড, রাজা সুবোধ মল্লিক রোড, সন্তোষপুর এভিনিউ, মেও রোড, ডাফরিন রোড, ভিআইপি রোডের একাংশ গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায়। রেড রোডে ১৫ অগস্টের মণ্ডপ ভেঙে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আর বিভিন্ন বড় রাস্তা বন্ধ থাকার পুরো সুযোগ নেয় ওলা-উবের-ট্যাক্সি-অটোও। ধর্মতলা থেকে বাগুইআটি যেতে ওলা-উবের রাত ন’টা নাগাদ ৬০০ টাকা ভাড়া দাবি করে। শোভাবাজার থেকে উল্টোডাঙা অটো নিয়েছে ১০০ টাকা। তবে কালীঘাট, টালিগঞ্জ, যাদবপুর, বেহালার মতো অনেক রুটেই বৃষ্টির পরে অটো চলাচল ঘণ্টা দুয়েক বন্ধ ছিল।
ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
আরও খবর...
বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে ড্রামে যুবকের লাশ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy