একটানা ভারী বৃষ্টির পরে জলমগ্ন চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, সঙ্গী যানজট। সোমবার সন্ধ্যায় ছবি দু’টি তুলেছেন সুদীপ্ত ভৌমিক।
সোমবার বিকেলে শহরে যখন তুমুল বর্ষণ, পুরসভার লকগেটগুলি তখন বন্ধ। কারণ, গঙ্গায় তখন চলছে জোয়ার। মুষলধারে বৃষ্টি হলেও লকগেট খোলার উপায় ছিল না। ফলে বিকেল সাড়ে তিনটেয় বৃষ্টি শুরুর পরে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত জোয়ার চলায় বিভিন্ন রাস্তায় ক্রমশ জমতে থাকা জল বেরোতে পারেনি। পরে জোয়ার শেষ হওয়ার পর লকগেট খুললে ধীরে ধীরে কিছু এলাকা থেকে জল নামতে শুরু করে। রাতে ফের প্রবল বর্ষণ শুরু হয়। ফলে বহু রাস্তা ফের জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
পার্ক সার্কাস, বালিগঞ্জ, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, লালবাজার, ধর্মতলা, উল্টোডাঙা, ঢাকুরিয়া-সহ আরও অনেক এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু অবধি জল জমে যায়। পূর্বে ট্যাংরা-সহ দক্ষিণ কলকাতার একাধিক জায়গায় বেশ কয়েকটি গাছ ভেঙে পড়ে। জলমগ্ন হয় সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লকও। শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ঘন্টা খানেক ধরে আটকে পড়ে যানবাহনও। তার জেরে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নাকাল হতে হয় অসংখ্য যাত্রীকে। গণেশ পুজোর উৎসবেও ভাটা পড়ে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জার্মানির মিউনিখ থেকে ফোন করে শহরের পরিস্থিতি জানতে চান ও প্রয়োজনীয় নির্দেশও দেন। জার্মানিতে রয়েছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তবে টেলিফোনে মেয়র পারিষদ এবং পুর কমিশনারকে পরিস্থিতি মোকাবিলার নির্দেশ দেন। সেই মতো এ দিন কন্ট্রোল রুমে বসে পরিস্থিতির তদারকি করেন তাঁরা। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় নামানো হয় পুরকর্মীদের। রাতে নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ তারক সিংহ জানান, শহরের ১৬টি বরো এলাকাতেই জল জমে গিয়েছিল। তবে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জমা জলের পরিমাণও কমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
তারকবাবু বলেন, ‘‘শহরের ভৌগোলিক অবস্থা যা তাতে ঘণ্টায় ৫-১০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হলে জল জমে। আর এ তো ৫০-এরও বেশি। তাই কিছু করার নেই। জল জমবে। আবার নেমেও যাবে।’’ তারকবাবু জানান, প্রায় ৬ ফুট ছিল জোয়ারের উচ্চতা। তাতে শহরে জমা জল লকগেটের মাধ্যমে বের করা সম্ভব হয়নি। তাই শহরে জমা জলের পরিমাণও হু হু করে বেড়ে গিয়েছে।
লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন সন্ধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে গাছ পড়ে বন্ধ হয়ে যায় হরিশ মুখার্জি রোডের যান চলাচল। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানান, টালিগঞ্জে লেক মলের কাছে ও দেশপ্রিয় পার্কের সামনে গাছ পড়েছে। তা সরাতে কাজে নামেন পুরকর্মীরা।
অফিস ও স্কুল-কলেজ থেকে ফিরতে ভোগান্তি হয় সকলেরই। রিকশা, ট্যাক্সি থেকে অটোর একাংশ কয়েক গুণ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ডেকার্স লেন থেকে চাঁদনি মেট্রো স্টেশন পৌঁছতে চেয়েছিলেন এক মাঝবয়সী ব্যক্তি। টানা রিকশায় ভাড়া দিতে হয়েছে ৬০ টাকা। নিউ টাউন থেকে কসবায় ফেরার জন্য উবের ‘বুক’ করেছিলেন এক তরুণী। ভাড়া গুণতে হয়েছে ৯০০ টাকা!
জল জমে শিয়ালদহ স্টেশনের ১, ৪ এবং ৪এ প্ল্যাটফর্মের লাইনেও। ফলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। রেল জানিয়েছে, হাওড়া শাখার বেশ কিছু জায়গায় লাইনে জল জমে যাওয়ায় ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এ দিন চারটে থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত বিমান ওঠানামা করতে পারেনি। তার আগে দু’টি বিমান নামতে গিয়েও মুখ ঘুরিয়ে নেয়। প্রবল বৃষ্টিতে ১০-১২টি বিমান আকাশে চক্কর কেটেছে। বৃষ্টিতে টারম্যাকের কিছু জায়গায় জমে ছিল। পাম্প চালিয়ে তা বের করা হয়েছে।
বিধাননগর-নিউ টাউন। ভারী বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয় বিধাননগর, পাঁচ নম্বর সেক্টর, নিউ টাউন, রাজারহাট ও বাগুইআটির বিস্তীর্ণ এলাকা। এর ফলে সল্টলেকের একাধিক প্রবেশ পথ, করুণাময়ী, পাঁচ নম্বর সেক্টরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। পিএনবি মোড় থেকে উল্টোডাঙা স্টেশন, সিএ-আইল্যান্ড, বেলেঘাটা বাইপাস মোড়, চিংড়িঘাটা মোড়ে তীব্র যানজট হয়। হলদিরাম-চিনার পার্ক, হাতিয়ারা, বাগুইআটির সাহাপাড়া, অশ্বিনীনগর, পুষ্পকনগরের পাশাপাশি দত্তাবাদ এবং বিধাননগরের সংযুক্ত এলাকাগুলি জলমগ্ন হয়েছে। বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘রাত আটটার মধ্যে অধিকাংশ জায়গা থেকে জল নেমে গিয়েছে।’’ অন্য দিকে, পাঁচ নম্বর সেক্টরের দায়িত্বরত প্রশাসনিক সংস্থা নবদিগন্তের কর্তারা জানান, রাত আটটার মধ্যে অধিকাংশ জায়গা থেকেই জল নামানো সম্ভব হয়েছে।
হাওড়া। হাওড়া পুর এলাকার অন্তত ৮টি ওয়ার্ডের কোথাও দেড় ফুট কোথাও তিন ফুট জল জমে গিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুরকর্তারা পুরকর্মী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। রাতেই ১৭টি ওয়ার্ডে চিঁড়ে, গুড় জলের বোতল সরবরাহ করা হয়েছে। উত্তর হাওড়ার বেনারস রোড সংলগ্ন ৬ নম্বর ওয়ার্ড ও লিলুয়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সি রোড, ডি রোড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি হয় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নোনাপাড়া, বেহারা পাড়া, টিকিয়াপাড়া-সহ দাশনগর এলাকা। বহু বাড়ির ভিতরে জল ঢুকে যায়। কয়েকটি জায়গায় নৌকা নামাতে হয়। জল জমে বালি, বেলুড় এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ডেও।
একই অবস্থা হয় মধ্য হাওড়ার রামরাজাতলা, বেলিলিয়াস রোড, পঞ্চাননতলা রোড, নেতাজি সুভাষ রোড-সহ বিস্তৃত এলাকায়। হাওড়া পুরসভার মেয়র পারিষদ নিকাশি শ্যামল মিত্র বলেন, ‘‘মোট ১৭টি ওয়ার্ড জলমগ্ন। রাতে বৃষ্টি না থামলে কয়েকটি জায়গায় রাতে স্পিড বোর্ড নামাতে হতে পারে। ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছানো শুরু হয়ে গিয়েছে। পুরসভায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।’’
এ দিকে রেলের ট্র্যাকে জল জমে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পূর্ব রেলের হাওড়া শাখা। স্টেশনে অফিস ফেরত যাত্রীর ভিড় জমে যায়। হাওড়া স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার অঞ্জন চন্দ বলেন, ‘‘টিকিয়াপাড়া কারশেড-সহ পূর্ব কেবিনের সামনে ট্র্যাকে জল জমেছে। ট্রেন দেরিতে ঢুকছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy