শুনশান: সোমবার প্রায় ফাঁকাই ছিল আলিপুর ফৌজদারি আদালত চত্বর। নিজস্ব চিত্র
মামলার শুনানিতে সশরীরে অংশগ্রহণে কোনও বাধা নেই। জেলা বিচারক ও বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্মতিও রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় আদালতমুখোই হচ্ছেন না আলিপুর আদালতের আইনজীবীরা। সূত্রের খবর, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ওই আদালত চত্বর কন্টেনমেন্ট জ়োনে থাকায় জেলা বিচারকের তরফে শুনানিতে সশরীরে উপস্থিত হতে বারণ করা হয়েছিল আইনজীবীদের। কিন্তু গত সপ্তাহে নির্দেশ জারি করে ফের সশরীরে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শুনানি শুরু করতে বলা হয়।
কিন্তু গত সপ্তাহে আলিপুর দায়রা ও ফৌজদারি আদালতে আইনজীবীরা সশরীরে আসেননি। সেই কারণে ৫৬টি এজলাসে শুনানি কার্যত বন্ধ রয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে গত সপ্তাহে সশরীরে উপস্থিত থাকার নির্দেশ জারির পরে আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের তরফে জেলা বিচারকের দফতরে পাল্টা চিঠি দিয়ে জানানো হয়, কোনও মামলায় দু’পক্ষের আইনজীবীরা হাজির না হলে সেই শুনানি যেন মুলতুবি রাখা হয়। সেই মতো আইনজীবীরা হাজির না হওয়ায় শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন বিচারকেরা। গত সপ্তাহে এ ভাবেই আদালত চালু ছিল বলে জানিয়েছেন আইনজীবীদের একাংশ।
বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সম্পাদক পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আলিপুর আদালতে আইনজীবী, বিচারক ও কর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। প্রত্যেকেই আতঙ্কিত। আইনজীবীরা ভয়ে আসতে চাইছেন না।’’ আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, লকডাউন চলাকালীন দীর্ঘ প্রায় তিন মাস আদালত বন্ধ ছিল। ওই সময়ে আইনজীবীদের একাংশ শুনানিতে সশরীরে উপস্থিতির দাবিতে সরব হয়েছিলেন। তাঁদের চাপে পড়ে বার অ্যাসোসিয়েশন এ বিষয়ে সম্মতিও দিয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ায় আইনজীবীদের কেউই আদালতে আসছেন না। কর্মীরাও ছুটি নিয়ে বাড়িতে বসে আছেন। বিচারকদের মধ্যেও অনেকে আসছেন না।
আইনজীবীদের একাংশের বক্তব্য, আলিপুর ফৌজদারি আদালতের পিছনে একটি বস্তিতে কয়েক জনের করোনা হয়েছিল। তাঁদের কয়েক জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু বাকিদের আবার আদালতের পাশেই একটি দরমায় ঘেরা ক্লাবঘরে কোয়রান্টিনে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর্মীরা এসে তাঁদের দেখাশোনা করছেন। কিন্তু আদালতের পাশেই করোনা রোগীরা থাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।
আলিপুর আদালতের মুখ্য সরকারি আইনজীবী রাধাকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আলিপুর, চেতলা ও কালীঘাট এলাকায় সংক্রমণ লাফিয়ে বাড়ছে। গোটা আলিপুর কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছিল। আইনজীবী ও কর্মীরা ভয়ে আসছেন না।’’ আলিপুর আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ফৌজদারি আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারক ও অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় বিচারকের এজলাসে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের জামিনের শুনানি হচ্ছে মাত্র। পুলিশকর্মীদের মধ্যেও সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আতঙ্কিত তাঁরাও। তাঁরাও যতটা সম্ভব সুরক্ষিত অবস্থায় আদালতে এসে কাজকর্ম সেরেই আবার দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: এত ভিড় কেন, প্রশ্ন রক্তদান শিবির নিয়েও
আলিপুর আদালত লাগোয়া দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কয়েকটি দফতরেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সম্প্রতি পঞ্চায়েত ও পরিবহণ দফতরের বেশ কয়েক জন কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে আসা সহকর্মীদের গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকতে বলা হয়েছে। ওই দুই দফতর জীবাণুমুক্ত করার পরে কিছু সংখ্যক কর্মীকে নিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
আলিপুর আদালতের অধিকাংশ আইনজীবীরই অভিযোগ, সংক্রমণ ঠেকানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না-করেই সশরীরে মামলার শুনানি চালু করে দেওয়া হয়েছে। কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার একটি বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ মামলার সূত্রে ওই আদালত চত্বরে আসেন। কোনও বিধিনিষেধের বালাই নেই। প্রশাসন ও পুলিশের তরফেও কোনও নজরদারির ব্যবস্থা নেই। সশরীরে শুনানি চালু হওয়ার আগে জেলা বিচারকের কাছে এক গুচ্ছ সংক্রমণ-প্রতিরোধী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনওটাই কার্যকর করা হয়নি। সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়ে চলেছে।
ওই আদালতের আইনজীবী তথা রাজ্য বার কাউন্সিলের সদস্য বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে জেলা বিচারকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’
আরও পড়ুন: করোনা-যুদ্ধে বাধা বাস্তব পরিস্থিতিও
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy