ভোগান্তি: বর্ষশেষে হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসার অপেক্ষায়। মঙ্গলবার, এন আর এসে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
পেটের যন্ত্রণায় কাবু মেয়ের চিকিৎসা করাতে টাকা ধার করে মুর্শিদাবাদ থেকে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন শহিদুল মোল্লা। কিন্তু দু’সপ্তাহেও ঠিক মতো চিকিৎসা শুরু হয়নি কিশোরীর। শুধুমাত্র ব্যথা কমানোর ইঞ্জেকশন ও ওষুধ দিয়ে রাখা হয়েছে তাঁকে। গলব্লাডার অস্ত্রোপচারের তারিখ পড়েছে ২১ জানুয়ারি!
ঢাকা থেকে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে আসা পল্লব সরকারের অবস্থাও অনেকটা এক। মায়ের ক্যানসারের চিকিৎসা করাতে এসে আটকে গিয়েছেন তিনিও। এসএসকেএমে অস্ত্রোপচারের তারিখ পড়েছে ১৬ জানুয়ারি।
বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের অবস্থাও তথৈবচ। বেশির ভাগ হাসপাতালেই তারিখ পড়ছে জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের পরে। এক চিকিৎসক তো আট দিন দেশে না-থাকার কথা জানিয়েই দিয়েছেন রোগীদের। সিওপিডি-তে আক্রান্ত বৃদ্ধ মনোরঞ্জন গোস্বামী বুঝতে পারছেন না, অসুস্থ হলে কোন ডাক্তার দেখাবেন। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতাল তাঁকে জানিয়ে দিয়েছে, আগামী দু’সপ্তাহ তাঁর চিকিৎসক থাকবেন না।
বর্ষশেষ এবং চিকিৎসকদের কনফারেন্সের চাপে প্রতি বছর এ ভাবেই ব্যাহত হয় পরিষেবা। তাতে রাশ টানতে বছর দুই আগে একটি নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। তখন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা। নির্দেশিকায় বলা হয়েছিল, আর্নড লিভ (ইএল), হাফ-ডে লিভ ও কমিউটেড লিভ মিলিয়ে বছরে ১৫টির বেশি ছুটি নিতে হলে স্বাস্থ্যসচিবের অনুমতি নিতে হবে। একমাত্র ক্যাজুয়াল লিভের অনুমতি দিতে পারবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নিয়ম খাতায়কলমেই আটকে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
যদিও কার্ডিয়ো-থোরাসিক শল্য চিকিৎসক কুণাল সরকার বলছেন, “পুজোর সময়ের তুলনায় এই সময়ে ডাক্তারদের ছুটির জন্য পরিষেবা কম ব্যাহত হয়। তবে যে প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসক কম, সেখানে অবশ্যই প্রভাব পড়ে।” তবে ব্যক্তিভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থাই সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে মত ক্যানসার শল্য-চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি কনফারেন্সের মাস। এই সময়ে পরিষেবার স্বাভাবিক ছন্দটা যে কেটে যায়, মানছেন ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ও।
পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন আর জি করের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তাঁদের বক্তব্য, ছুটির বিষয়টি দেখেন বিভাগীয় প্রধান। ছুটি নিয়ে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে তবেই তাঁরা জানতে পারেন।
হৃদ্রোগ চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলের দাবি, “বিভাগীয় চিকিৎসকদের বোঝাপড়ার ভিত্তিতে এই সময়ে পরিষেবা চলে। মূলত প্ল্যান্ড অস্ত্রোপচার স্থগিত রাখা হয়। তবে জরুরি পরিষেবা ব্যাহত হয় না।” ব্যক্তিগত বোঝাপড়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীও। তাঁর বক্তব্য, পুজোয় ছুটির রোস্টার তৈরি হলেও এই সময়ে সেটা হয় না। তবে শহরের এক সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারের অভিযোগ, “বিভাগীয় প্রধানের উপরে নির্ভর করে অনেক কিছু। ফলে স্বচ্ছতার অভাবের প্রভাব পড়ে পরিষেবায়।”
ক্রিসমাস ইভ থেকে নতুন বছর এবং গুড ফ্রাইডে থেকে ইস্টার পর্যন্ত বড় ছুটি থাকে ইংল্যান্ডে। সেখানে অবশ্য পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না— জানাচ্ছেন ম্যানচেস্টার নিবাসী শল্য-চিকিৎসক শুভজিৎ দত্তরায়। সে দেশে প্রতি পাঁচ বছরের জন্য নিযুক্ত ‘রোটা মাস্টার’ প্রায় পাঁচ মাস আগে ছুটির রোটা তৈরি করেন। ছুটির পরিকল্পনা অনলাইনে দিয়ে দেখে নিতে বলেন চিকিৎসকদের। ফলে প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা থাকে। এর পরেও জরুরি পরিবর্তন হলে, চিকিৎসকেরা কথা বলে রোটা মাস্টারকে জানান। তিনি জানাচ্ছেন, আইন অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে ক্যানসার নির্ধারণের চার সপ্তাহের মধ্যে অস্ত্রোপচার আবশ্যিক। নয়তো জরিমানা দিতে হয় প্রতিষ্ঠানকে। এই সময়ে তাই বাড়তি টাকা দিয়েও ডাক্তার আনানো হয়। ভারতে এমন নিয়ম নেই বলছেন চিকিৎসকেরা। তবে তাঁদের মতে, বেশি জরুরি চিকিৎসকের দায়বদ্ধতা। না হলে নতুন বছরেও এ ভাবেই দিশাহারা হবেন সাধারণ নাগরিকেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy