প্রতীকী ছবি।
গ্রামের তৃণমূল স্তরে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যেই ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাপনায় সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকেই মিলছিল পরিষেবা। এ বার সেই টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেই ফুসফুস, জরায়ুর ক্যানসার, এমনকি মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসাও প্রান্তিক স্তরে পৌঁছে দেবে রাজ্য।
এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটে স্বাস্থ্যে ডিজিটাইজ়েশনের উপরে জোর দিয়েছে সরকার। তা হলে কি সেই পথেই হাঁটছে রাজ্য? প্রশাসনিক মহলের দাবি, করোনা-আবহে টেলিমেডিসিন ব্যবস্থাপনায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকা বহু মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের চিকিৎসার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চলে ওই মাধ্যমেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ও পরিষেবা দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। কারণ স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও জনস্বাস্থ্য চিকিৎসকেরা বার বার বলছিলেন, নন-কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, পেটের সমস্যা, কিডনির অসুখকে রোগীরা তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় ওই সব রোগ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে শরীরে থেকে সমস্যা বাড়ায়। অতিমারির তৃতীয় ঢেউয়েও এই কোমর্বিডিটির বিষয়টি বার বার উঠে এসেছে।
স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ধরা যাক, কিডনির অসুখে ভোগা কোনও বয়স্ক রোগী গোসাবার প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন। তাঁর পক্ষে জেলার মেডিক্যাল কলেজে নিয়মিত এসে চিকিৎসা করানো সমস্যার। কিন্তু ‘স্বাস্থ্য ইঙ্গিত’ প্রকল্পে তিনি বাড়ির কাছের সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসকের পরামর্শ পাচ্ছেন। ২০২১-এর ২ অগস্ট থেকে রাজ্যের ২৮টি জেলার (স্বাস্থ্য জেলা-সহ) ২৩১৩টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে এই পদ্ধতিতে পরিষেবা দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২৬ হাজার রোগী সেই পরিষেবা পাচ্ছেন। পাঁচটি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রপিছু এক জন, এই আনুপাতিক হারে চিকিৎসক রয়েছেন ৪৬৩ জন। আগামী মার্চের মধ্যে আরও ১৭২৮টি সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে টেলিমেডিসিন পরিষেবা চালু করার পরিকল্পনা করেছে স্বাস্থ্য দফতর। প্রায় ৩৫০ জন নতুন চিকিৎসককে এই কাজে যুক্ত করা হবে। পাশাপাশি, আগামী জুনের মধ্যে আরও ১২১৬টি কেন্দ্রে এই পরিষেবা চালু করার এবং মোট চিকিৎসকের সংখ্যা এক হাজারের উপরে নিয়ে যাওয়ার ভাবনাও রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরের। সম্প্রতি সেই বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে তারা।
অজয়বাবু বলেন, “সব চিকিৎসককে নিয়ে পুল তৈরি করা হচ্ছে। ২-৪টি জেলা মিলিয়ে হচ্ছে একটি পুল। যাতে কোনও জেলায় কোনও কারণে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে পাওয়া না গেলে, সফটওয়্যার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে কলটি পাশের জেলার নির্দিষ্ট চিকিৎসকের কাছে চলে যায়।’’ তিনি জানান, উচ্চ রক্তচাপ, সুগার, কিডনি ও পেটের সমস্যা, মুখ ও দাঁতের ক্যানসারের চিকিৎসা এত দিন মিলছিল। এ বার থেকে সর্বত্র জরায়ু ও ফুসফুসের ক্যানসারের
চিকিৎসাও মিলবে। প্রত্যন্ত এলাকায় কী ভাবে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে পরিষেবা দিতে হবে, চলছে তার প্রশিক্ষণও। সুস্বাস্থ্য কেন্দ্রে আসা রোগীকে ভিডিয়ো-কলের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করেন চিকিৎসক। তাঁর পরীক্ষার রিপোর্ট-সহ অন্যান্য নথি নির্দিষ্ট সফটওয়্যারে আপলোড করেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স। চিকিৎসক ই-প্রেসক্রিপশন করে দিলে সেটি প্রিন্ট করে ওষুধ দিয়ে রোগীকে বাড়ি পাঠানো হয়।
প্রান্তিক এলাকায় ফুসফুস, জরায়ুর ক্যানসারের চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে শহরের ক্যানসার শল্য-চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “খুবই ভাল উদ্যোগ। ক্যানসার সম্পর্কে যে পরিসংখ্যান দেখা যায়, তার মধ্যে প্রত্যন্ত অঞ্চল কতটা রয়েছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই সরকারি এই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সেখানকার রোগীদের ক্যানসার নির্ণয় ও তা কী পর্যায়ে আছে, প্রথমেই তা নির্ধারণ করা গেলে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy