হতশ্রী: হাওড়া সাবওয়ের সিঁড়ি, রাস্তা আটকে পরপর বসেছেন হকারেরা। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
গুরুত্বপূর্ণ সাবওয়ের পুরোটাই দুষ্কৃতীদের নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তাদের নির্দেশেই সাবওয়ের গেট খুলছে। বন্ধও হচ্ছে। তাদের প্রশ্রয়েই সাবওয়ের রাস্তা জুড়ে বসছে বাজার, হকারদের ডালা। অভিযোগ, অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে হতশ্রী সাবওয়েটি মেরামত করতে গিয়ে দখলদারদের বাধায় পিছিয়ে আসতে হচ্ছে সরকারি দফতরকেও।
হাওড়া স্টেশন লাগোয়া হাওড়া সাবওয়েতে এমনটাই ঘটে চলেছে বলে অভিযোগ। সাবওয়েটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি বা কেএমডিএ-র। প্রায় চার দশক আগে তৈরি হওয়া এই গুরুত্বপূর্ণ সাবওয়েতে মোট দরজা আছে ১৫টি। কলকাতা-হাওড়ার বাস ধরতে বা হাওড়া স্টেশনে ঢুকতে-বেরোতে প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষ সাবওয়েটি ব্যবহার করেন।
কিন্তু সংস্কারের অভাবে জীর্ণ অবস্থায় রয়েছে সাবওয়েটি। ভূগর্ভ পথের বিভিন্ন দেওয়াল বেয়ে চুঁইয়ে পড়ছে নিকাশির জল। দেওয়ালে নোনা ধরে খসে পড়েছে পলেস্তারা। কয়েক জায়গায় ফলস সিলিং ভেঙে ঝুলে পড়েছে। নিকাশি নালা আবর্জনায় অবরুদ্ধ হয়ে জল জমে রয়েছে বিভিন্ন গেটের মুখে। পান ও গুটখার পিকে প্রতিটি দেওয়ালে লাল ছোপ। পর্যাপ্ত আলোর অভাব সর্বত্র। সব থেকে খারাপ অবস্থা সাবওয়ের ভিতরের পরিবেশের। যে যন্ত্র থেকে ঠান্ডা হাওয়া বেরিয়ে ভিতরে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে, সেই পাঁচটি ব্লোয়ারের মধ্যে তিনটি খারাপ হয়ে পড়ে থাকায় শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে অসুস্থ ও বয়স্ক মানুষের। এরই মধ্যে সাবওয়ের ভিতরে বসছে কাঁচা আনাজের বাজার থেকে গামছা, জামাকাপড়-সহ খেলনার সরঞ্জামের ডালা। হাওড়া বাস টার্মিনাসের দিক থেকে কলকাতা বাস টার্মিনাসের বা হাওড়া স্টেশনে ঢোকার রাস্তা, সবর্ত্রই রাস্তার দু’পাশ হকারদের ডালার দখলে। হকার বসায় প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে সিঁড়ির রাস্তাও।
দেওয়ালে পানের পিক, চুঁইয়ে পড়েছে জল (নীচে)। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
সাবওয়ের দেওয়ালের টালি খুলে সেখানে নিজের আরাধ্য দেবতার ছবি লাগিয়ে খেলনার ডালা পেতে বসেছিলেন আনন্দ বেরা। বললেন, ‘‘আমি ১৫ বছর ধরে বসছি। আগে দিনে ১০০ টাকা ভাড়া দিতাম। এখন দিনে ২০০ টাকা দিতে হয়। সবাই তাই দেয়।’’ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সাবওয়ের ভিতরে প্রায় ৩০০টি ডালা পড়ে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার টাকা ভাড়া ওঠে সব ডালা থেকে।
টাকা কে তোলে, কাদের কাছে সেই টাকা যায়, সেই প্রশ্নের উত্তরে কেউ মুখ খুলতে রাজি না হলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রবীণ ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘যে দল যখন ক্ষমতায় থেকেছে, স্টেশন চত্বরে থাকা তাদের নেতারাই ডালা বসিয়েছেন। টাকা তুলেছেন নিজেদের বাহিনীর ছেলেদের নিয়ে। এখনও তা-ই হয়। সব ক্ষেত্রেই ভাগ যায় পুলিশের কাছে।’’
সাবওয়ের ব্যবসায়ীদের দাবি, কে কখন কোথায় ডালা দিতে পারবে, রাতে কখন সাবওয়ের গেট বন্ধ হবে, তা ঠিক করে ওই দুষ্কৃতীরাই। কেএমডিএ-র কাজ শুধু রাত পর্যন্ত বাজার বসার পরে যে পরিমাণ আবর্জনায় সাবওয়ে ভরে যায়, তা পরিষ্কার করা। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অনেক চেষ্টা করেও বাজার বসা আমরা বন্ধ করতে পারিনি। কিন্তু আমাদেরই টাকা খরচ করে প্রতিদিন সকালে গোটা সাবওয়ে পরিষ্কারের কাজটা করতে হয়।’’
কিন্তু সাবওয়েটি সংস্কার করা হচ্ছে না কেন?
ওই আধিকারিক বলেন, ‘‘দখলদারেরা বললেও সরতে চায় না। দখলদার না সরলে সংস্কারের কাজ করব কী করে? আমরা সমস্ত বিষয় পদস্থ কর্তাদের জানিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy