প্লাস্টিকের বদলে হকারদের স্টলের এক দিক ঢাকা হচ্ছে নোংরা কাপড়ে। গড়িয়াহাট চত্বরে দেখা গেল এমনই দৃশ্য। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
বিপজ্জনক ও নোংরা প্লাস্টিক উঠে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তার পরিবর্তে যা এসেছে, তা হল নোংরা কাপড়। আর সেই কাপড়ের দৃশ্যদূষণেই ভরে গিয়েছে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট বা উত্তর কলকাতার হাতিবাগান, শ্যামবাজার-সহ শহরের বিভিন্ন এলাকার হকারদের স্টল।
গড়িয়াহাটের ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক সরাতে হকারদের মাথায় টিনের ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল মাস চারেক আগে। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট ও সংলগ্ন এলাকা ছাড়াও উত্তর কলকাতার হাতিবাগান ও শ্যামবাজারেও ফুটপাতে হকারদের মাথায় প্লাস্টিকের পরিবর্তে টিনের ছাউনি লাগানো হয়েছে। কিন্তু, মাথায় টিনের ছাউনি থাকলেও স্টলের পিছনে, অর্থাৎ, রাস্তার দিকে ঝোলানো হচ্ছে নোংরা কাপড়। এর ফলে দৃশ্য়দূষণ তো হচ্ছেই, পাশাপাশি, ফুটপাত জুড়ে টিনের ছাউনির পিছনে কাপড় ঝুলে থাকায় যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় বিপদের আশঙ্কা করছেন শহরের বাসিন্দারা। যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমার বললেন, ‘‘টিনের ছাউনির পিছনে কাপড় আর থাকবে না। পুরোটাই বিজ্ঞাপনের গ্লোসাইনে মুড়ে ফেলা হবে। এর ফলে সেটি এক দিকে যেমন দৃষ্টিনন্দন হবে, তেমনই পুরসভার আয়ও বাড়বে। ধীরে ধীরে পুরসভা এই কাজ করবে।’’
বৃহস্পতিবার গড়িয়াহাটের ফুটপাতে ঘুরে দেখা গেল, হকারদের স্টলের মাথায় টিনের ছাউনি বসানো হয়েছে। কিন্তু, ছাউনির পিছনের দিকটা নোংরা কাপড়ে ঢাকা রয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের মতো বিপজ্জনক ঘটনা ঠেকাতেই ফুটপাত থেকে প্লাস্টিক সরিয়ে টিনের ছাউনি বসানোর পরিকল্পনা করেছে পুরসভা। কিন্তু, গড়িয়াহাট থেকে হাতিবাগান বা শ্যামবাজার— সর্বত্রই যে রকম বিপজ্জনক ভাবে কাপড় ঝুলছে, তাতে ঘোর বিপদের আশঙ্কা করছেন অনেকেই। শ্যামবাজার ও হাতিবাগান এলাকার হকার ইউনিয়নের সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক অতীন ঘোষ বলেন, ‘‘হকারদের পুরো বিষয়টি নিয়ে আমরা মঙ্গলবার একটি বৈঠক করেছি। গড়িয়াহাটের মতো হাতিবাগান ও শ্যামবাজারের ফুটপাতেও টিনের ছাউনির পিছনে গ্লোসাইন বসানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। এর ফলে ওই সমস্ত জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে পুরসভা আর্থিক ভাবে লাভবান হবে। আবার এলাকার শ্রী-ও ফিরবে।’’
ওই হকার ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি সুবীর নন্দী বললেন, ‘‘ইদের পরেই ফুটপাতে হকারদের টিনের ছাউনির পিছনের কাপড় সরিয়ে ফেলা হবে।’’ ‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রঞ্জন রায়ের অভিযোগ, ‘‘হকারদের স্টলের পিছনের দিকে এমন ভাবে কাপড় দেওয়া থাকে যে, রাস্তার দিক থেকে দেখলে কিছুই দেখা যায় না। যে কোনও মুহূর্তে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ওই এলাকায় প্রচুর শপিং মল ও বড় দোকান রয়েছে। ওই সমস্ত দোকান ও শপিং মলের সৌন্দর্যহানি ঘটছে হকারদের টাঙানো নোংরা কাপড়ের জন্য। তাঁর মতে, কাপড়ের বদলে সেই জায়গায় বিজ্ঞাপন দিলে দৃশ্যদূষণ কমানো সম্ভব হবে।
গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার ও হাতিবাগান এলাকায় হকারদের মাথায় টিনের ছাউনি থাকলেও শহরের বহু এলাকায় এখনও প্লাস্টিক রয়ে গিয়েছে। ধর্মতলা, হাজরা, কালীঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন এলাকায় হকারদের স্টলে এখনও প্লাস্টিকের রমরমা। এই প্রসঙ্গে টাউন ভেন্ডিং কমিটির সদস্য দেবাশিস দাস বললেন, ‘‘পুরসভার তরফে সমস্ত হকারকে লাইসেন্স দেওয়ার কাজ শেষ হলে শহরের কোথাও প্লাস্টিক থাকবে না।’’ গড়িয়াহাটের সর্বত্র যে ভাবে টিনের ছাউনির পিছনে নোংরা কাপড় ঝুলছে, তাতে বিপদের আশঙ্কাও করছেন স্থানীয় বড় ব্যবসায়ীরা।
গড়িয়াহাটের হকারদের বিষয়টি নিয়ে আজ, শুক্রবার স্থানীয় বিধায়ক দেবাশিস কুমার, ৮৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি সৌরভ বসু ও স্থানীয় হকার-প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক হবে। ‘গড়িয়াহাট ইন্দিরা হকার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক দেবরাজ ঘোষ বলেন, ‘‘বৃষ্টি, রোদের হাত থেকে বাঁচতে সাময়িক ভাবে কাপড় ঝোলানো হয়েছে। বিধায়ক দেবাশিস কুমার টিনের ছাউনির পিছনে টিনের তৈরি বিজ্ঞাপনী আচ্ছাদন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আশা করছি, শীঘ্রই হকারেরা টিনের শেডের পিছনের দিকের কাপড় সরিয়ে ফেলবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy