প্লাস্টিকের ছাউনি ফিরে এসেছে ফুটপাতে! ২০১৯ সালের এপ্রিলে গড়িয়াহাট মোড়ের ফুটপাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রশাসনের তরফে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ফুটপাতে হকারেরা কোনও ভাবেই প্লাস্টিক ব্যবহার করতে পারবেন না। সেই মতো কলকাতা পুরসভা ও গড়িয়াহাট থানা দফায় দফায় অভিযান চালিয়ে প্লাস্টিকের ছাউনি সরিয়ে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি এক দুপুরে গড়িয়াহাট মোড়ে গিয়ে দেখা গেল, পুরসভার দেওয়া টিনের ছাউনির সামনের দিকে প্লাস্টিক ঝুলছে। প্লাস্টিক টাঙানো হয়েছে কেন? প্রশ্ন করায় হকারদের সাফ জবাব, ‘‘রোদ, বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্লাস্টিক ঝুলিয়েছি। কী করব!’’ কেবল দক্ষিণের গড়িয়াহাটই নয়, উত্তরের হাতিবাগান এলাকাতেও একই ছবি চোখে পড়ল।
গড়িয়াহাটের সেই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পরে গড়িয়াহাট ও হাতিবাগানের ফুটপাতে পুরসভার তরফে হকারদের জন্য টিনের ছাউনির ব্যবস্থা করা হয়েছিল আগেই। সে সময়ে হকারদের বলা হয়েছিল, টিনের ছাউনির নীচেই পসরা রেখে ব্যবসা করতে হবে। কিন্তু গড়িয়াহাট ও হাতিবাগান বাজারে ঘুরে দেখা গেল, অধিকাংশ ব্যবসায়ীই সে নিয়ম মানছেন না। হাতিবাগানের বিধান সরণিতে আবার পিচের রাস্তার উপরেই রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে! অথচ, টিনের ছাউনি বিতরণের সময়ে গড়িয়াহাটের হকার সংগঠনের তরফে বলা হয়েছিল, ওই ছাউনি ফুটপাতের এক-তৃতীয়াংশ মাপেই তৈরি করা হয়েছে। যিনি নিয়ম ভাঙবেন, পুলিশ এসে তাঁর সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করলে ইউনিয়ন কোনও ভাবেই বাধা দেবে না। প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনের নজরদারি আলগা হতেই কি হকারেরা ফের ‘স্বমূর্তি’ ধরে নিয়ম ভাঙতে শুরু করেছেন? কেন তাঁরা সচেতন হবেন না? প্লাস্টিকের ছাউনি থেকে আগুন লেগে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটা সত্ত্বেও কেন তাঁরা প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন? হকারেরা বিপজ্জনক প্লাস্টিক ব্যবহার করছেন দেখেও পুলিশই বা কেন ধরপাকড় করে না? যদিও পুলিশের তরফে এ প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।

হাতিবাগানে রাস্তায় নেমে এসেছে দোকান। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
হকারদের নিয়ম ভাঙা প্রসঙ্গে হকার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ সাফ বললেন, ‘‘যাঁরা প্লাস্টিকের ছাউনি ব্যবহার করছেন, আমরা সর্বতো ভাবে তাঁদের বিরোধিতা করছি। প্রশাসন তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে আমরা প্রশাসনের পাশেই থাকব।’’ একই ভাবে টিনের ছাউনির বাইরে সামগ্রী রাখা বেআইনি বলে স্বীকার করেছেন শক্তিমান। তাঁর কথায়, ‘‘টাউন ভেন্ডিং কমিটির নিয়ম যাঁরা মানছেন না, সেই সমস্ত হকারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
গড়িয়াহাট মোড়ের ছবিটা ভয়াবহ! টিনের ছাউনির সামনের অংশে বিশাল প্লাস্টিকের ছাউনি টাঙানো হয়েছে। যা অগ্নিকাণ্ডের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক তো বটেই, প্রবল ভাবে দৃশ্যদূষণও তৈরি করছে। গড়িয়াহাটের ফুটপাতে হকারেরা যে দিকে বসেন, তার পিছন দিকে (রাস্তার দিকে) নোংরা কাপড়ের ছাউনি টাঙানো হয়েছে। ক্রেতাদের অভিযোগ, ‘‘ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় গত বছর মুখ্যমন্ত্রী প্রশাসনিক বৈঠকে পুলিশকে কঠোর হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার পরে পুলিশ কয়েক দিন সক্রিয় হলেও ফের অবস্থা যে কে সে-ই!’’
‘হাতিবাগান বাজার মার্চেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি রঞ্জন রায়ের অভিযোগ, ‘‘হাতিবাগানের বিধান সরণির ফুটপাতে হকারদের টিনের ছাউনি দেওয়া হলেও হাতিবাগান বাজারের গাড়ি বারান্দার নীচে বসা হকারদের জন্য টিনের ছাউনির ব্যবস্থা হয়নি। সেখানে প্লাস্টিক ও কাপড়ের ছাউনির নীচে ব্যবসা চলছে। যা দৃশ্যদূষণও ঘটাচ্ছে। এর ফলে হাতিবাগান বাজারের প্রবেশপথ ঢাকা পড়ে গিয়েছে। প্রশাসনের কাছে আমাদের আবেদন, অবিলম্বে হকারদের টিনের ছাউনি দেওয়া হোক।’’
ফুটপাতে হকারদের নিয়ম ভাঙা প্রসঙ্গে পুরসভার মেয়র পারিষদ (হকার পুনর্বাসন) দেবাশিস কুমার অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, ‘‘ফুটপাতে যে সমস্ত হকার নিয়ম ভাঙছেন, পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’’ যদিও সেই ব্যবস্থা কবে নেওয়া হবে, তার কোনও উত্তর মেলেনি।
এ দিকে, পুলিশি অসহযোগিতার অভিযোগে হকার সংগ্রাম কমিটি শুক্রবার দুপুরে নিউ মার্কেট থানায় অভিযান করে। যার জেরে আধ ঘণ্টারও বেশি এস এন ব্যানার্জি রোড অবরুদ্ধ থাকে। ওসিকে স্মারকলিপি দিয়ে কমিটি দাবি করেছে, নিউ মার্কেটে সারা দিনই কোনও সার্জেন্টকে রাখতে হবে। রাস্তা থেকে হকারেরা না সরলে তাঁরা লাগাতার অভিযানে শামিল হবেন বলে জানান কমিটির সাধারণ সম্পাদক শক্তিমান ঘোষ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)