Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
communities

মণ্ডপসজ্জা থেকে বিসর্জন, মিলেছে দুই সম্প্রদায়ের হাত

বৃহস্পতিবার বিকেলে নাদিয়ালের একটি নির্মীয়মাণ পুজো মণ্ডপের সামনে পিস কমিটির হিন্দু-মুসলিম সদস্যেরা পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে জরুরি বৈঠক সারেন।

একসঙ্গে: নাদিয়ালে গঙ্গার ধারে নির্মীয়মাণ পুজো মণ্ডপের সামনে পিস কমিটির সদস্যদের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র

একসঙ্গে: নাদিয়ালে গঙ্গার ধারে নির্মীয়মাণ পুজো মণ্ডপের সামনে পিস কমিটির সদস্যদের বৈঠক। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
নাদিয়াল শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৪
Share: Save:

পুজোর মণ্ডপ তৈরিতে জাহাঙ্গির শেখের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন রমেন কৈবর্ত। আবার মণ্ডপের সাজসজ্জায় হিন্দু ভাইদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন মুসলিমেরা। বন্দর এলাকায় গঙ্গার ধারে নাদিয়াল থানার অধীনে ১৩টি পুজোয় হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে একাকার। নাদিয়াল থানা এলাকায় মুসলিমেরা সংখ্যাগুরু। সেখানে মেরেকেটে ২০ শতাংশ হিন্দু পরিবার। এলাকার

উভয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সদ্ভাব বজায় রাখতে নাদিয়াল থানার উদ্যোগে পিস কমিটি তৈরি হয়েছিল। ওই কমিটিতে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছেন। চলতি বছরে ইদুজ্জোহার (বকরি ইদ) দিনে নাদিয়াল এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এলাকার হিন্দু যুবকদের মোটরবাইক নিয়ে টহল দেওয়ার বিরল ছবি দেখা গিয়েছিল। এ বার পুজোর বিসর্জনের দিনে একই ভাবে এলাকায় শান্তি যাতে বজায় থাকে তার জন্য আগেভাগেই সতর্ক পিস কমিটির মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। কমিটির যুগ্ম সম্পাদক

মহম্মদ ওয়ারিস বলেন, “নাদিয়াল থানা এলাকায় ১৩টি দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন সুষ্ঠু ভাবে যাতে হয় তার জন্য প্রতিটি ঘাটে মুসলিম সদস্যেরা মোতায়েন থাকবেন। পুজোর ক’দিন প্রতিটি মণ্ডপেও বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা থাকবে।”

বদরতলার একটি পুজো কমিটির সম্পাদক বীরবল গিরির কথায়, “ঠাকুর বিসর্জনের দিন আমরা হিন্দু-মুসলিম সবাই এক। ওই দিন ঠাকুর তোলা থেকে শুরু করে বিসর্জন হওয়া পর্যন্ত গঙ্গাপাড়ে পাশের পাড়ার মুসলিম ভাইয়েরা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। সব বিভেদ ভুলে এটাই তো হওয়া দরকার।”

লকডাউন, করোনায় বিপন্ন সকলেই। তার উপরে নাদিয়াল থানা এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু পরিবারের বেশির ভাগই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির। পঞ্চমীর দিন তাঁদের হাতে নতুন জামাকাপড় তুলে দেবে পিস কমিটি। একইসঙ্গে পুজোর ক’দিন গরিব হিন্দু পরিবারের হেঁশেলেরও দায়িত্বও নিতে চলেছেন পিস কমিটির সদস্যেরা। কমিটির তরফে শেখ ওবাইদুর রহমান, মনসুর আলি মোল্লা বা মহম্মদ আলি মোল্লারা বলছেন, “দুর্গাপুজো বাঙালির সেরা উৎসব। লকডাউনে ওঁরা সবাই বিপন্ন। জাতপাতের ঊর্ধ্বে থেকে ওই সব ম্লান মুখগুলোয় আমরা আলো দিতে চাই।”

বৃহস্পতিবার বিকেলে নাদিয়ালের একটি নির্মীয়মাণ পুজো মণ্ডপের সামনে পিস কমিটির হিন্দু-মুসলিম সদস্যেরা পুজোর প্রস্তুতি নিয়ে জরুরি বৈঠক সারেন। কমিটির সদস্য অরুণ রায়ের কথায়, “যাবতীয় বিভেদ ভুলে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশই পারে আমাদের এক সূত্রে গাঁথতে। সেটারই একটা প্রচেষ্টা।” পিস কমিটির আর এক যুগ্ম সম্পাদক রুদ্রেন্দু পালের কথায়, “নাদিয়ালে আমরা হিন্দুরা সংখ্যায় কম হলেও কখনওই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগিনি। আমাদের দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে থাকেন বলে এটা আমাদের কাছে বড় পাওনা।” নাদিয়ালের আর এক পুজো কমিটির কর্তা, পেশায় মৃৎশিল্পী অসিতরঞ্জন জোয়ারদার বলছিলেন, “প্রতিমার মাথার যে চুল প্রয়োজন হয় তা তো মুসলিম ভাইয়েরা তৈরি করেন। আমাদের এখানে সেই চুল এলাকার মুসলিম ভাইয়েরা এনে দেন। নাদিয়ালে পুজোর দিনগুলোয় এলাকার মুসলিমেরা আমাদের নানা ভাবে সহায়তা করেন।” ইদ-দুর্গাপুজোয় নাদিয়ালে সম্প্রীতির কোলাজে মুগ্ধ কলকাতা বন্দর এলাকার ডি সি ওয়াকার রেজা বলেন, “নাদিয়াল সম্প্রীতির বড় মুখ। এলাকার উভয় সম্প্রদায়ের মানুষদের সৎ প্রচেষ্টা থাকলে তার সুফল মিলবেই।”

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja communities Unity Hindu-Muslim
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy