বাড়ি ফেরার আগে আত্মীয়ের সঙ্গে মনোজ পাসোয়ান (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র।
প্রথম দিকে নিজেদের নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারতেন না ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা, হারিয়ে যাওয়া দুই যুবক। পরে অবশ্য দীর্ঘ চিকিৎসার সুফল হিসাবে কিছু কিছু কথা মনে করতে পারেন তাঁরা। আর সেই সূত্র ধরেই ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সাহায্যে আবার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারলেন দুই যুবক।
বছর তিনেক আগে হাওড়া স্টেশনে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন দুই রাজ্যের দুই স্মৃতিভ্রষ্ট যুবক। হাওড়া সিটি পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে লিলুয়ার বেলিলিয়াস রোডের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরে পাঠায়। তার পর থেকে তাঁদের অস্থায়ী ঠিকানা ছিল সেটাই। ওই দুই যুবকের এক জন বিহারের বাঁকা জেলার লিলাতারি গ্রামের বাসিন্দা মনোজ পাসোয়ান। দ্বিতীয় জন ওড়িশার বালেশ্বরের বাসিন্দা কমললোচন পাণ্ডা। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রের খবর, দু’জনেই অতীতের কথা কার্যত ভুলে গিয়েছিলেন। শেষে তাঁদের বাড়ি ফেরাতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে মাত্র কয়েক দিনের চেষ্টাতেই দুই পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
শনিবার লিলুয়ার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার দফতরে বছর তিরিশের মনোজকে নিতে আসেন তাঁর মা ও মামা। ছেলেকে দেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা কবিতা পাসোয়ান। তিনি জানান, ২০১২ সালে ছটপুজোর সময়ে গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান মনোজ। তার পরে আর কোনও খোঁজ ছিল না। মনোজের মামা পুতুল পাসোয়ান বললেন, ‘‘গ্রামের বাড়ি থেকে বেরিয়ে স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় সব ভুলে গিয়েছিল মনোজ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওর খোঁজ পাইনি।’’ গ্রামে মনোজের পরিবারের সকলেই দিনমজুরের কাজ করেন। মনোজও তা-ই করতেন। তাঁর স্ত্রী ও দশ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। বাবাকে মনে নেই মেয়ের। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাই তিন বছর ধরে মনোজের চিকিৎসা করিয়ে তাঁকে কিছুটা সুস্থ করে তোলে। তারই ফলে নিজের গ্রাম ও পরিবারের দু’-এক জনের নাম বলতে পারেন তিনি। এ দিন প্রিয়জনদের দেখে চিনতে পেরে আনন্দে কেঁদেও ফেলেন মনোজ।
২০০৪ সালে প্রায় একই ভাবে ওড়িশার বালেশ্বরের বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন চল্লিশ বছরের কমললোচন পাণ্ডা। তাঁকেও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয় হ্যাম রেডিয়ো। কমললোচনেরও স্মৃতিভ্রংশ হয়েছিল। তিনিও বহু দিন পর্যন্ত পরিবারের কারও নাম-ঠিকানা বলতে পারেননি। অবশেষে আমদাবাদে থাকা ভাই পদ্মলোচনের কথা মনে পড়ে তাঁর। সেই ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে হ্যাম রেডিয়ো। আগামী বুধবার কমললোচনকে তাঁর পরিবারের নিয়ে যাওয়ার কথা।
‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাব’-এর সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, ‘‘এটা খুবই আনন্দের দিন। আমাদের কাছে সাহায্য চাওয়ার পরে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই হ্যাম রেডিয়োর মাধ্যমে ওঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম।’’ ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে ফাদার সাজন জোসেফ বলেন, ‘‘হারিয়ে যাওয়া দুই যুবক মানসিক ভাবে খুবই অসুস্থ ছিলেন। ওঁরা খাবার পর্যন্ত খেতে পারতেন না। দীর্ঘ চিকিৎসার পরে এখন দু’জনেই অনেকটা সুস্থ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy