ছেলে শানের সঙ্গে রূপা।
এক মহিলা ও তাঁর ১২ বছরের ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে রহস্য দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে পর্ণশ্রী পল্লির বাড়ি থেকে ওই মহিলা ও তাঁর ছেলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেন স্বামী এবং পড়শিরা। ঘরের সিলিংয়ে একই হুক থেকে তাঁদের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশের অনুমান, মা এবং ছেলে একই সঙ্গে আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে ঘটনার কারণ নিয়ে ধন্দে তারা। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীরা জেনেছেন, মৃত্যুর আগে ওই মহিলা তাঁর শ্বশুরবাড়ির এক সদস্যকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন। তাঁদের দাবি, তাতে ওই মহিলা জানিয়েছিলেন, স্বামী তাঁকে বিশ্বাস করেন না। সে ক্ষেত্রে দাম্পত্য টানাপড়েনের জেরে এমন ঘটনা কি না, সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তারা জানিয়েছে, ময়না-তদন্তের পরেই মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট হবে।
পুলিশ সূত্রের খবর, ৫৩৪ পর্ণশ্রী পল্লির একটি চারতলা বাড়ির একতলার ফ্ল্যাটে বছর দেড়েক আগে স্ত্রী রূপা কুমার এবং ছেলে শানকে নিয়ে ভাড়া আসেন বীরেন্দ্র কুমার নামে এক ব্যক্তি। এক সময়ে নৌবাহিনীতে কাজ করা বীরেন্দ্র অবসরের পরে কলকাতা জিপিও-তে কাজ করেন। আদতে তাঁর বাড়ি বিহারের বাঁকা জেলায়। স্ত্রী রূপা মুঙ্গেরের বাসিন্দা। বীরেন্দ্র পুলিশকে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ তিনি অফিস থেকে ফিরে কলিং বেল বাজান। কিন্তু কেউ দরজা খোলেননি। বার বার বেল বাজিয়েও দরজা না খোলায় জোরে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন বীরেন্দ্র। শব্দ শুনে পাশের ফ্ল্যাটে থাকা বাড়ির মালিক বেরিয়ে আসেন। চিৎকার ছুটে আসেন পড়শিরা এবং ফ্ল্যাটের কেয়ারটেকার।
দরজা না খোলায় সকলে মিলে ধাক্কা দিতে থাকেন। তাতে ভিতর থেকে লাগানো ছিটকিনি এবং তালা খুলে যায়। ঘরে ঢুকে সকলে সিলিংয়ের একটি হুক থেকে রূপা এবং শানের ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান। পড়শিরাই দেহ দু’টি নামিয়ে আনেন। এক প্রতিবেশী জোসেফ জানিয়েছেন, দু’জনের দেহে সাড় ছিল না। তিনি সঙ্গে সঙ্গে মোটরবাইক নিয়ে বেরিয়ে থানায় খবর দেন।
অ্যাম্বুল্যান্সেরও খোঁজ করতে থাকেন। ততক্ষণে বাকিরা মিলে গাড়ি ঠিক করে রূপা ও শানকে বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁদের মৃত ঘোষণা করা হয়। জোসেফ পুলিশকে জানিয়েছেন, খুবই শান্ত স্বভাবের ছিলেন রূপা। বুধবার রাতে বা ঘটনার দিন সকালেও কেউ ওই ফ্ল্যাট থেকে কোনও চিৎকার শুনতে পাননি। তবে স্ত্রী এবং ছেলের দেহ উদ্ধারের পরে বীরেন্দ্র কাঁদতে কাঁদতে তাঁর মাকে দোষারোপ করছিলেন বলে জানিয়েছেন জোসেফ। ওই ফ্ল্যাটের মালিক সুমিতা কুতি জানান, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি ঘুমোচ্ছিলেন। বীরেন্দ্রর ডাকাডাকি এবং দরজা ধাক্কার আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। তিনি এবং আরও অনেকে এসে বীরেন্দ্রর ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ওই দৃশ্য দেখতে পান। কিন্তু কেন এমন করলেন রূপা, তা নিয়ে অন্ধকারে পড়শিরা। ঘটনার খবর পেয়ে আসেন রূপার এক দূর সম্পর্কের দাদা। খবর পাঠানো হয়েছে রূপার বিহারের বাড়িতেও।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে বীরেন্দ্র জানিয়েছেন, তাঁদের ছোট সংসার ছিল। কোনও রকম অশান্তি ছিল না। তবে রূপা ছিলেন খুব আবেগপ্রবণ। ঘটনার দিন বা তার আগের দিন পরিবারে ঝামেলা হয়নি বলেও জানিয়েছেন বীরেন্দ্র। তদন্তকারীরা জানান, রূপার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলার পরেই রহস্যের কিনারা হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy