Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Eye Patients

আতঙ্কে ঘরবন্দি, সমস্যা বাড়ছে চোখের রোগীদের

বয়স্ক নাগরিকদের একটা বড় অংশ করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। মনে করছেন, প্রাথমিক সমস্যা হলেও বাড়িতে থাকাই শ্রেয়।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২০ ০২:১৫
Share: Save:

প্রৌঢ় থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, বয়স্ক নাগরিকদের একটা বড় অংশ করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে যেতে ভয় পাচ্ছেন। মনে করছেন, প্রাথমিক সমস্যা হলেও বাড়িতে থাকাই শ্রেয়। কিন্তু তার পরিণতি যে কী মারাত্মক হতে পারে, তা এখন বুঝতে পারছেন তাঁরা। এঁদের অনেকেই ভুগছেন চোখের নানা সমস্যায়। যতক্ষণে তাঁরা চিকিৎসকের কাছে পৌঁছচ্ছেন, ততক্ষণে হয় অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে, অথবা সেই সমস্যা আরও জটিল আকার নিচ্ছে।

যেমন উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার বাসিন্দা, বছর পঞ্চান্নর সহিদুল আলি মোল্লার একটি চোখ প্রায় নষ্ট হওয়ার মুখে। ওই প্রৌঢ়ের ডায়াবিটিসের সমস্যা রয়েছে। ১৩ মার্চ পর্যন্ত গাড়ি চালিয়েছেন সহিদুল। লকডাউনের ১৮ দিন পরে বাঁ চোখ থেকে জল পড়তে শুরু করে। প্রথমে যন্ত্রণা শুরু হয়, পরে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়ে আসে। সহিদুলের কথায়, ‘‘আমাদের অঞ্চলে সংক্রমণ খুব বেশি হওয়ায় প্রথম দিকে ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছিলাম না। দেড় মাস পরে লকডাউন একটু শিথিল হতে সল্টলেকের একটি চোখের হাসপাতালে গিয়ে দেখাই।’’ কিন্তু চিকিৎসকেরা ওই প্রৌঢ়কে জানিয়ে দিয়েছেন, বাঁ চোখ সময় মতো না-দেখানোর জন্য ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির কারণে সেটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ডান চোখেও গ্লকোমা দেখা দিয়েছে। সেটায় এখন লেজ়ার করা হচ্ছে।

ডায়াবিটিসের সমস্যা রয়েছে কলকাতার বাসিন্দা, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সনৎ ঘোষের। বয়স ৮০ ছুঁয়েছে। তাঁর বাঁ চোখে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। লকডাউনে ডাক্তার দেখাতে পারেননি। সনৎবাবুর কথায়, ‘‘চার দিকে এত নিষেধাজ্ঞা। কী ভাবে যাব? আমার নিজের গাড়ি নেই। গাড়ি ভাড়া করে যেতে পারিনি।’’ যখন হাসপাতালে এসে দেখিয়েছেন ওই বৃদ্ধ, বাঁ চোখ অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত। ডাক্তারেরা জানিয়ে দিয়েছেন, স্বাভাবিক দৃষ্টিশক্তি ফেরা প্রায় সম্ভব নয়।

চক্ষু চিকিৎসক তনুশ্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘চোখের সমস্যাকে অবহেলা না-করার জন্য আমরা বার বার বলছি। ডায়াবেটিক যাঁরা, এই লকডাউনের কারণে অনেকেই নিয়মিত হাঁটতে যেতে পারছেন না। শুধু ওষুধের উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। চোখের সামান্য সমস্যা হলেও করোনার ভয়ে বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। অথচ বুঝতে পারছেন না, চোখের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা অঙ্গ চলে গেলে কী হতে পারে।’’

অনেকে আবার সমস্যায় পড়ছেন ছানি বা গ্লকোমাকে অবহেলা করে। যে সময়ে ছানির অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল, তার থেকে কয়েক মাস দেরি করে যখন আসছেন, অস্ত্রোপচার অনেক জটিল হয়ে যাচ্ছে। দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে।

যেমন ডানকুনির কাশীনাথ হালদার। ৭০ বছর বয়স। স্ত্রী আর ছেলেকে নিয়ে থাকেন। কাশীনাথবাবুকেই বাড়িতে রান্না করতে হয়। ছানি নিয়েই গত কয়েক মাস ধরে রান্না করে গিয়েছেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরোননি। ডাক্তারও দেখানো হয়নি। ছেলে বাপ্পা বললেন, ‘‘কিছু দিন আগে বাবা বলেন, একেবারেই দেখতে পাচ্ছেন না। তখন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই। ধার করে অস্ত্রোপচারও করাই। তা-ও এখনও ভাল করে চোখে দেখতে পাচ্ছেন না।’’

চক্ষু চিকিৎসক অনিরুদ্ধ মাইতি জানিয়েছেন, গত পাঁচ মাসে লকডাউনে এমন বেশ কিছু রোগী তিনি পেয়েছেন, যাঁরা চোখের সমস্যাকে অবহেলা করে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন বা হারাতে চলেছেন। অনিরুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ ছানির ক্ষেত্রে তা-ও ছ’মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করা যায়। কিন্তু রেটিনার সমস্যা বা গ্লকোমা হলে তা সম্ভব নয়। যাঁর চোখে সমস্যা হচ্ছে, সেটি গ্লকোমা থেকে হচ্ছে না রেটিনা থেকে, তাঁর পক্ষে বোঝা মুশকিল। ফলে সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে দেখিয়ে নেওয়াই ভাল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Patients Coronavirus Lockdown Covid-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE