ঊর্মিলাদেবী ঝুন্ডকে খুনের অভিযোগে ধৃত গুড়িয়া ও ডিম্পলকে নিয়ে আসা হচ্ছে আদালতে। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
ধড় থেকে মাথা কাটার পরে প্রৌঢ়ার গলা থেকে খুলে নেওয়া হয়েছিল সোনার হার। সেই হারে লেগে থাকা রক্ত ঘরেই ধোয়ার পরে তা তুলে দেওয়া হয়েছিল তাঁর বড় নাতনির হাতে। ওই নাতনিকে গ্রেফতার করার সময়ে হারটি গলাতেই পরে ছিল সে।
লালবাজার জানিয়েছে, গরচার বাসিন্দা ঊর্মিলাদেবী ঝুন্ডের খুনের ঘটনায় ধৃত সৌরভ পুরি ও নাতনি গুড়িয়াকে জেরা করে এমনই তথ্য পেয়েছেন তদন্তকারীরা। শনিবার ওই ঘটনার তদন্তভার হাতে নিয়েছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ। তদন্তকারীদের দাবি, খুনের গোটা পরিকল্পনাটাই করেছিল গুড়িয়ার মা ডিম্পল ঝুন্ড ও তার প্রেমিক সৌরভ। সেই পরিকল্পনায় দিন চারেক আগে শামিল করা হয় নাতনি গুড়িয়াকে। এক তদন্তকারী জানান, খুনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল মাস তিনেক আগে। সেই মতো নভেম্বর মাসের শেষের দিকে পঞ্জাব থেকে ডিম্পলের বাড়িতে এসেছিল তার প্রেমিক সৌরভ। ১৮ বছরের ছোট সৌরভের সঙ্গে ডিম্পলের আলাপ চলতি বছরের গোড়ায় পঞ্জাবের বার্নালায়, তার বোনের জন্মদিনের পার্টিতে। এর পরেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে দু’জনের।
গত জুন মাসে কলকাতায় চলে আসে সৌরভ। পুজোর আগে পর্যন্ত ডিম্পলের সঙ্গেই ছিল সে। কী ভাবে ঊর্মিলার সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলে দু’জনের। পরে সেই মতো খুনের পরিকল্পনা করা হয়। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, গলা টিপে খুন করা হবে। কিন্তু ঊর্মিলার ভারী চেহারার জন্য তা বাতিল করে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। পরে ঠিক হয়, খুনের পরে গলা কাটা হবে এবং তা করবে সৌরভ।
পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতেরা জেরায় দাবি করেছে, পঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় ঊর্মিলার জমি রয়েছে। গড়িয়ায় একটি দোকানও রয়েছে তার। সে সবের ভাগ চাওয়াতেই শাশুড়ির সঙ্গে বিরোধ বাধে ডিম্পলের। যা জানতে পারে সৌরভ। এর পরেই ঊর্মিলাকে খুন করে পুরো সম্পত্তির দখল নিতে চেয়েছিল সে।
আরও পড়ুন: গোলমালে স্তব্ধ পথ, দিনভর দুর্ভোগ
কী ঘটেছিল বুধবার রাতে?
পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে ওই বাড়িতে ঊর্মিলার রাতের খাবার রুটি-তরকারি নিয়ে আসে গুড়িয়া।
রুটির মধ্যে মেশানো ছিল ঘুমের ওষুধ। পরিকল্পনা মাফিক ঠাকুরমাকে তা খাইয়ে অচৈতন্য করে দেওয়ার
পরে গুড়িয়া ফোনে মেসেজ করে তা জানিয়ে দেয় তার মাকে। সেই মতো রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ ঊর্মিলার বাড়িতে আসে সৌরভ। গুড়িয়া ঠাকুরমার মুখে বালিশ চেপে ধরে আর সৌরভ কোপাতে থাকে তাকে। পরে মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হলে গুড়িয়া পাশে কাকার ঘরে চলে যায়। ওই সময়ে ধড় থেকে মাথা আলাদা করে সৌরভ। গলায় থাকা সোনার হারটি খুলে গুড়িয়ার হাতে দেয়। গুড়িয়া তা বেসিনে ধুয়ে গলায় পরে নেয়। ওই হারটি ছাড়াও ঊর্মিলার চারটি সোনার গয়না গুড়িয়ার কাছ থেকে উদ্ধার করেছে গড়িয়াহাট থানার পুলিশ। ডিম্পলের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে মোট ১৩টি সোনার গয়না। যা খুনের পরে ঊর্মিলার বাড়ি থেকে নিয়ে গিয়েছিল সৌরভ ও গুড়িয়া।
আরও পড়ুন: কলকাতার নামী অলঙ্কার বিপণির কর্মস্থলে ‘যৌন হেনস্থা’, বিচারকের দ্বারস্থ মহিলা
তদন্তকারীরা জানান, খুনের পরে সৌরভ ও গুড়িয়া দু’জনেই বাড়ি ফিরে যায় আলাদা ভাবে। পরের দিন ভোরে লুটের প্রায় ৬০ হাজার টাকা এবং কয়েক লক্ষ টাকার গয়না নিয়ে হাজরা থেকে ট্যাক্সি নিয়ে বিমানবন্দরে যায় সৌরভ। সেখান থেকে টিকিট কেটে দিল্লিতে উড়ে যায়। পরে পাতিয়ালা হয়ে পঞ্জাবের নাভায় পৌঁছয় সে। গড়িয়াহাট থানার পুলিশও তার পিছু নিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছে যায় এবং শুক্রবারই তাকে গ্রেফতার করে।
ধৃত মা ও মেয়েকে শনিবার আলিপুর আদালতে তোলা হয়েছিল। সরকারি কৌঁসুলি সৌরীন ঘোষাল জানান, এই খুনের পিছনে আর কেউ আছে কি না, তা জানতে তিন জনকে একসঙ্গে বসিয়ে জেরা করা প্রয়োজন। তাই পুলিশি হেফাজত দেওয়া হক। এর বিরোধিতা করেন অভিযুক্তদের আইনজীবী সুনীল সরকার। তাঁর দাবি, লুটের মাল উদ্ধার হয়েছে। তাই পুলিশি হেফাজতের প্রয়োজন নেই। বিচারক ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ধৃতদের পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy