Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Intercaste Marriage

75th Independence Day: ধর্মের ছোঁয়াচ ছাড়া বিয়ের স্বাধীনতা

জুটি: শহরে অলড্রিন ও ব্রতী (উপরে)। ব্রতীর ঠাকুরদা, স্বাধীনতা সংগ্রামী কিরণময় সেন। (ডান দিকে)।

জুটি: শহরে অলড্রিন ও ব্রতী (উপরে)। ব্রতীর ঠাকুরদা, স্বাধীনতা সংগ্রামী কিরণময় সেন। (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৫:৩০
Share: Save:

স্বাধীনতা দিবসে এ দেশের মানুষের স্বাভাবিক অধিকারগুলোই মনে করিয়ে দিতে চাইছেন ওঁরা! কনে পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি, হিন্দু পরিবারভুক্ত। বর মালয়ালি, রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টান ঘরের। কোচি থেকে সপরিবার এসেছেন এ রাজ্যের শ্বশুরবাড়িতে। আজ, রবিবার দেশের স্বাধীনতা দিবসের সন্ধ্যায় চার হাত এক হবে গুটিকয়েক সুহৃদের জমায়েতে।

২৬ বছরের তরুণী ব্রতী সেনের ঠাকুরদা কিরণময় সেনের নাম জড়িয়ে আছে অবিভক্ত ভারতের চট্টগ্রামে, স্বাধীনতার যুদ্ধের সঙ্গে। মাস্টারদা সূর্য সেনকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার বদলা নিতে চক্রান্তকারী নেত্র সেনকে রামদার কোপে স্বহস্তে খুনও তিনিই করেছিলেন। সেটা ১৯৩৪ সাল। তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র কিরণময়। পরবর্তী জীবনে ডিভিসি-র কর্মী তিনি। কিন্তু তাঁর যৌবন মায়ানমার থেকে ভারতের বিভিন্ন জেলে জেলেই অতিবাহিত। মাস্টারদা বা দেশের জন্য সামান্য কিছু করতে পারাটাই তাঁর জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি, শেষ জীবনের একটি সাক্ষাৎকারে বলেওছিলেন কিরণবাবু।

নাতনি ব্রতী বলছিলেন, “ঠাকুরদা মারা যান, আমি যখন নার্সারিতে পড়ি। সারা ক্ষণ ওঁর সঙ্গেই আমি লেপ্টে থাকতাম। স্বাধীনতার মানেটানে তখন কী বুঝতাম, কে জানে! তবে ঠাকুরদা যে এক জন খুব বিশেষ মানুষ, তখনই বুঝেছিলাম।” কিরণময় সেনের জন্মদিনের হিসেব নেই পরিবারের কাছে। সে যুগে জন্মদিন পালনের চলও তত ছিল না। তবু তাঁর আদর্শ, দেশকে ভালবাসার পরম্পরাকে কুর্নিশ জানাতেই একমাত্র কন্যা ব্রতী ও অলড্রিন ডি’সিলভার বিয়েটা ১৫ অগস্ট ঘটুক, চেয়েছিলেন কিরণবাবুর ছোট ছেলে বিশ্বজিৎ সেন। বিয়েতে কোনও উপহার চাইছেন না নব দম্পতি। বদলে এক সহায়-সম্বলহীনা ক্যানসার রোগিণী শর্মিলা ভৌমিককে সাহায্যের আর্জি। বিয়ের কার্ডে মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খুঁটিনাটিও রয়েছে।

ভিন্ ধর্মে বিয়ে বিষয়টি ইদানীং ক্রমশ জটিল হচ্ছে আজকের ভারতে। বিয়ের আগে-পরে ধর্মান্তরকরণ রুখতে নানা আইনের চেষ্টা চলছে কয়েকটি রাজ্যে। ভিন্‌ধর্মী দম্পতিদের হেনস্থার ঘটনাও আকছার ঘটছে। তা বলে মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্তে চাপের কাছে মাথা নোয়াতে রাজি নন বিশ্বজিৎবাবুরা। তিনি বলছিলেন, “বাবা পুরোপুরি নাস্তিক ছিলেন। আমাদের পরিবারের ভালমন্দ কোনও উপলক্ষেই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার চল নেই দীর্ঘদিন। আবার আমার শ্বশুর, শাশুড়ি ঠাকুর নমস্কার করেন। তাঁদেরও বাধা দেওয়ার প্রশ্ন নেই।”

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএ পরীক্ষার্থী ব্রতী এবং কোচিতে চাকরিরত অলড্রিন, কেউই ব্যক্তিজীবনে ধর্মের ধার ধারেন না। রেজিস্ট্রি বিয়েতে ধর্ম বদলেরও প্রশ্ন নেই। সমাজমাধ্যমে ভাব হওয়া ইস্তক বরং দু’জনেই দারুণ উৎসাহী, অন্য রকম সংস্কৃতির স্বাদ পেতে। ব্রতী বলছেন, “আমাদের বিয়েতে ছিটেফোঁটা ধর্মের ছোঁয়াচও থাকছে না। এর মধ্যে একটাই কথা বলার, আমাদের মতো লোকেরাও এ দেশে আছেন। এবং তাঁদেরও নিজের শর্তে বাঁচার অধিকার আছে।”

মালয়ালি সাহিত্যিক ভৈকম মুহম্মদ বশীরের কালজয়ী গল্প ‘প্রেমপত্র’-এ জনৈক নায়ার যুবক ও সিরিয়ান খ্রিস্টান তরুণী স্যরাম্মার ভালবাসাও ধর্মের বেড়া ভাঙা যৌথতার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। অলড্রিনের বাড়িতেও ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি নেই। তিনি হেসে বলছেন, “আমরা ঠিক করেছি, ভবিষ্যতে আমাদের সন্তান কোন ধর্ম মেনে চলবে বা আদৌ মানবে কি না, সেটাও সে-ই ঠিক করবে।”

স্বাধীনতার মানেটা এ ভাবেই পাল্টে যাচ্ছে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।

অন্য বিষয়গুলি:

Intercaste Marriage 75th Independence Day
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy