Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in Kolkata

‘করোনার ভয় দেখিয়ে ফাঁকি জরুরি চিকিৎসায়’

একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঘুরে উঠে এল সেই হয়রানির চিত্রই।

ভোগান্তি: তেহট্ট থেকে আর িজ করে চিকিৎসা করাতে আসা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (বাঁ দিকে)। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাসুদেব দাসকে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

ভোগান্তি: তেহট্ট থেকে আর িজ করে চিকিৎসা করাতে আসা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস (বাঁ দিকে)। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাসুদেব দাসকে (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২০ ০২:৫৪
Share: Save:

হাসপাতালের একাধিক বিল্ডিং, বহির্বিভাগ ঘুরে রোগীকে নিয়ে জরুরি বিভাগে পৌঁছেছেন পরিজনেরা। তাঁদের তৎপরতা দেখে তরুণ চিকিৎসকের ধমক, “এত ছটফটানি কেন? কী হয়েছে?” স্ট্রোক হয়েছিল, তিনটি হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন শুনে কাগজপত্র না দেখেই ওই চিকিৎসকের মন্তব্য, “৫০-৫০ সুযোগ। শয্যাও ফাঁকা নেই এখন। অপেক্ষা করতে হবে।” কাঁদতে কাঁদতে রোগীর স্ত্রী বললেন, “কত ক্ষণ দাঁড়াব ডাক্তারবাবু! একটু দেখুন, লোকটা মরে যাবে।” এ বার ওই চিকিৎসক বললেন, “ভর্তি করানো অত সোজা নয়। অনেক ক্ষণ দাঁড়াতে হবে। কত ক্ষণ বলা যাবে না!”সোমবার সকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দেখা গেল এমনই চিত্র। মেদিনীপুরের ঘাটালের বাসিন্দা, সুভাষ বর নামে ওই রোগীকেই শুধু নয়, ফিরে যেতে দেখা গেল অনেককেই। রোগীর আত্মীয়দের একটি বড় অংশের অভিযোগ, এই মুহূর্তে শহরের কোনও সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগেই মিলছে না চিকিৎসা। একের পর এক হাসপাতাল ঘুরে নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ঘুরে উঠে এল সেই হয়রানির চিত্রই।

সুভাষবাবুর পরিবারের দাবি, ঘাটাল হাসপাতাল থেকে গত ২৫ জুলাই তাঁদের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিএনএমসি) রেফার করা হয়। সেখান থেকে বলা হয় এসএসকেএমে যেতে। এসএসকেএমেও শয্যা নেই জানিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। অবস্থার অবনতি হওয়ায় পার্ক সার্কাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রোগীকে। সুভাষবাবুর স্ত্রী বুল্টি বলেন, “বেসরকারি হাসপাতালে এই ক’দিনে দেড় লক্ষ টাকা বিল হয়েছে। কত ধার করব! আর জি করও ফিরিয়ে দিলে ওঁকে বাঁচাব কী করে?”

আর জি করেই বাবাকে ভর্তি করানোর জন্য হাতে-পায়ে ধরেও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ কৃষ্ণনগরের তেহট্টের বাসিন্দা রাজেন্দ্রকুমার বিশ্বাসের। তিনি জানান, তাঁর বাবা, বছর পঁয়ষট্টির রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস হৃদ্‌রোগে ভুগছেন। গত শনিবার রাতে তাঁকে তেহট্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় রবিবার তাঁকে কল্যাণী হাসপাতালে পাঠানো হয়। কল্যাণী হাসপাতাল সোমবার সকালে রোগীকে আর জি করে নিয়ে যেতে বলে। রাজেন্দ্রর অভিযোগ, “এখানে বলে দেওয়া হল, শয্যা নেই। অ্যাম্বুল্যান্স চালক কয়েকটি ছোট হাসপাতালের কথা বলেছেন। বাবাকে বাঁচাতে তো হবে!”

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত তমাল দত্তকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (এন আর এস) নিয়ে গিয়েছিলেন বাড়ির লোক। তাঁদের অভিযোগ, প্রাথমিক চিকিৎসার পরে বলা হয়, “ভর্তি নিতেই পারি, কিন্তু করোনায় মারা গেলে কিছু বলতে পারবেন না!”

চার হাসপাতাল ঘুরেও এক বৃদ্ধকে ভর্তি করাতে না পেরে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হন পরিজনেরা। বাসুদেব দাস নামে বছর চৌষট্টির ওই রোগীর আত্মীয় রঞ্জন দাস জানান, গত শুক্রবার রাতে পড়ে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ। বাঘা যতীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে জানানো হয়, রোগীর স্ট্রোক হয়েছে, এম আর বাঙুরে নিয়ে যেতে হবে। অভিযোগ, সেখানে গেলে জানানো হয়, করোনা ছাড়া অন্য কিছুর চিকিৎসা হবে না। রাতেই বৃদ্ধকে সিএনএমসি-তে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলেও ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। শনিবার সকালে বৃদ্ধকে ফের সেখানে নিয়ে গেলে এন আর এসে যেতে বলা হয় বলে রোগীর পরিবারের দাবি। এক আত্মীয়ের অভিযোগ, “এন আর এসে তিন-চার ঘণ্টা ফেলে রেখে বলা হল, এমনি শয্যা নেই। আইসোলেশন সেন্টারে জায়গা আছে, কিন্তু সেখানে রাখলে করোনা হয়ে যাবে বলা হয়। শেষে রোগীকে বাড়িই নিয়ে এসেছি। আসলে করোনার ভয় দেখিয়েই ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে জরুরি চিকিৎসায়।”

আর জি কর, সিএনএমসি, এন আর এস— তিন হাসপাতালের সুপারেরই দাবি, রোগী ফেরানোর ব্যাপারে কিছু জানা নেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের দাবি, “ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনও অভিযোগ পাইনি। কেন্দ্রীয় ভাবে বিষয়টি দেখতে বলছি।” রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম অবশ্য বললেন, “কোনও পরিস্থিতিতেই জরুরি পরিষেবার সঙ্গে আপস করা যায় না। কেন এমন অভিযোগ উঠছে, তা দিন সাতেকের মধ্যে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy